জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম অভিভাবকদেরও

জুন ২০, ২০২০

চাকরি থাকবে না,জীবন যাবে,জেল হতে পারে এমনটি জেনেই জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় আন্দোলন সংগ্রাম হবে ইনশাললাহ।  শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য আকাশ ছোঁয়া।আশির দশকে প্রথম এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়।  এমপিওভুক্তির এ প্রক্রিয়া একজন শিক্ষকের মনোবলকে ক্রমশঃ ধূসর করে দেয়।আশা এক সময় দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়।  পেশাগত শিক্ষকরা হয়ে উঠে সংগ্রামী।

জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন সংগ্রামে- রাজপথে নামার আগে জনমত সৃষ্টি করতে হবে সবার আগে।  জাতীয়করণের প্রয়োজনটা শুধু শিক্ষকদের জন্য নয়।  ছাত্র/অভিভাবকদেরও দরকার।করোনা হয়তো ঐক্যবদ্ধ হতে সহযোগিতা করবে।  অনেকে শুধু আন্দোলনের কথা বলেন কিন্তু আন্দোলন করতে হলে জনমত ও সাপোর্ট লাগে এবং আন্দোলনের উপযুক্ত আবহ লাগে।

উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে কালো মেঘের ঘন ঘন্টা আছে কিনা সব কিছু বুঝতে হবে।  জাতীয়করণের দাবিতে ২০১৮সালেও জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান ও অনশন করেছিলাম কয়েকটি শিক্ষক সংগঠনকে নিয়ে।  তীব্র শীতে হাজার হাজার শিক্ষক জাতীয়করণের দাবিতে রাজপথে শুয়ে ছিল।  দীর্ঘ ১৯দিন পরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার বিশেষ দূত পাঠিয়ে আমাদেরকে আশ্বাস দিয়েছিলেন ৫%বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ও বৈশাখী ভাতার। পরবতীর্তে ২০১৮ সালের মার্চ মাসে ৫%বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট বাসতবায়ন হওয়ার কথা থাকলেও তৎকালীন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জনাব কেরামত আলীকে কান পড়া দিয়ে একটি অশুভ চক্র- সেটা নিয়ে গেল নির্বাচনের ঠিক আগে।  মার্চ মাসে ৫% বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট বাসতবায়ন হলে ২০১৮সালের শেষে ঠিক জাতীয় নির্বাচনের আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা জাতীয়করণ ঘোষণা দিতেন।এসব কারা করছে বুঝতে হবে শিক্ষক সমাজকে আন্দোলনে সবাই আসবে না এটা জেনেই রাজপথে নামতে হবে।

চাকরি থাকবে না,জীবন যাবে,জেল হতে পারে এমনটি জেনেই জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় আন্দোলন সংগ্রাম হবে ইনশাললাহ।  শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য আকাশ ছোঁয়া।আশির দশকে প্রথম এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়।  এমপিওভুক্তির এ প্রক্রিয়া একজন শিক্ষকের মনোবলকে ক্রমশঃ ধূসর করে দেয়।আশা এক সময় দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়।  পেশাগত শিক্ষকরা হয়ে উঠে সংগ্রামী।

শুরু থেকেই শিক্ষকদের বেতনের ভগ্নদশা।  প্রশ্ন জাগে আশির দশকের শিক্ষক নেতারা কি করেছেন? এমপিওভুক্তির প্রথম কত টাকা দিয়ে এমপিও শুরু হয় তা জানলে অবাক হওয়ার মতো অবস্থা।  মনে হয় মাথায় এসে আম্পান ঝড় ধাক্কা মারছে! আসল কথা হলো সবকিছুর পট পরিবর্তন।  তখনকার অর্থনৈতিক অবস্থা আর এখনকার অবস্থা এক নয়।

মনে পড়ে ১৯৯২ সালের জানুয়ারির কথা তখন পুরান ঢাকায় নয়াবাজার এলাকায় থাকি।  সাথে পরিবারও ছিল।  একটি কোচিংএ জড়িত ছিলাম।  ছাত্র ভালোছিলাম সুবাদে এলাকার মাঝে বেশ সুনাম অর্জন করলাম শিক্ষকতা করে।  এক কথায় House Tuotor হিসেবে।  টাকা পয়সাও ভালো কামাই ছিল।  তখন ৫০টাকা দিয়ে একটি ইলিশ মাছ কিনে রাস্তা দিয়ে নিয়ে গেলে সবাই তাকিয়ে থাকতো।  আর বলতো মাস্টার কত বড় ইলিশ কিনেছে দেখ! রান্না করলে ঘ্রাণ এলাকা ছাড়িয়ে বুড়িগঙ্গার ঐ পারে যেত।  আর এখন ত দুই হাজার টাকা দিয়ে ইলিশ কিনলেও ঘ্রাণ নেই,স্বাদ নেই।নেই আকার আকৃতি।  কাজেই সময় বলে কথা।  এখন সেই কথা বলে অনেক শিক্ষক নেতা, ইতিহাস বলে শিক্ষক সমাজকে নিয়ে যায় অতীতের ভাঙাগড়ায়।

১০০০টাকা বাড়ি ভাড়া ও ৫০০টাকা চিকিৎসা ভাতা,২৫% ঈদবোনাস এসব নিয়ে কোন শিক্ষক ভালো পাঠদান করতে পারেনা।  এসি রুমে বসে থেকে অনেকেই হয়তো শিক্ষকদের দুঃখ দুর্দশার কথা চিন্তাও করেনা।  ফেসবুকে লেখা দেখে পাশের চেলা-চামনরা একটু ধাক্কা দিলে মাঝে মাঝে জাতীয়করণের কথা বলে মুখে কিন্তু বাস্তবে- শিক্ষক সমাজের জাতীয়করণের স্বপ্নকে চিরতরে ধবংস করে দিতে চায়।  কে জাতীয়করণ চায় আর প্রকৃত শিক্ষক নেতা সেটা শিক্ষক সমাজ আপনারাই ঠিক করবেন।শিক্ষকদের এত সমস্যা, সমাধান করার কেউ নেই? হা সমাধান হয়ে গেলে আমরা আর শিক্ষক নেতাদের পিছনে ঘুরবোনা।  এটাই বাস্তবতা।

অনার্স মাস্টার্স কলেজ শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সমস্যা,পদোন্নতির সমস্যা,উচ্চতর গ্রেড এর সমস্যা,শিক্ষকদের বদলির সমস্যা এগুলো দেখার কেউ নেই? তাহলে শিক্ষক নেতার দরকার কি? জাতীয়করণ কে কে চায় তা বুঝতে হবে।  মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা জাতীয়করণ চান।  কিন্তু ওনার আশে পাশের লোকজন ওনাকে সঠিক বুদ্ধি দিচ্ছে না।Our Hon’ble Prime minister is always misguided by someone about teachers real demands and the nationalization.Its panic and painful for me.

করোনার ভয়াবহতা শিক্ষক সমাজকে আজ গৃহবন্দি করে রেখেছে।  শিক্ষকরা আজ খুব অসহায়,তাদের টিউশন নেই,প্রতিষ্ঠানের সম্মানী ও ভাতা নেই।  এরা কারো কাছে আজ টাকা ধার চাইতে পারছেনা।  কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে শিক্ষক সমাজ।  নন এমপিওভুক্ত শিক্ষক আর খনডকালীন শিক্ষকদের আর্থসামাজিক অবস্থা এখন চরম পর্যায়ে।

তাই শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ এখন সময়ের দাবি।  স্বীকৃতি প্রাপ্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সরকারীকরণ/জাতীয়করণ করতে হবে।  এমনটি হলে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন ও আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে।  অভিভাবকদের ছেলেমেয়েরা কম টাকায় শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে।  এতে বর্তমান সরকার তথা জননেত্রীর গ্রহণযোগ্যতা আরো বেড়ে যাবে।  মনে রাখতে হবে শিক্ষক সমাজকে ক্ষুধার্ত রেখে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন সম্ভব নয়।  জয় বাংলা,জয় বঙ্গবন্ধু। 

নজরুল ইসলাম রনি, সভাপতি বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামের মুখপাত্র