‘৪৫০ জন ছাত্রছাত্রীসহ হাই স্কুল বিক্রয় হইবে’

জুন ২০, ২০২০

‘বিক্রয় হইবে, হাইস্কুল, প্লে-দশম শ্রেণি চলমান, ৪৫০জন ছাত্রছাত্রীসহ’ রাজধানীর রাস্তায় বিদ্যুতের খুটিতে এমন বিজ্ঞাপন খুব সহজেই বলে দিচ্ছে করোনার সময় কিন্ডার গার্টেনের পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে গেছ। কিন্ডার গার্টেন অ্যাসোসিয়েশন থেকে বলা হচ্ছে—করোনার কারণে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘ বন্ধের সময় রাজধানীর কিন্ডার গার্টেন স্কুলগুলোর অস্তিত টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না, এটি তারই জলন্ত উদাহরণ।

বিক্রি বা হস্তান্তরের বিজ্ঞাপন দেওয়া হলি ভিশন রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজটি রাজধানীর রামপুরার উলন রোডে অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটির ভাইস চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হামিদ রানার কাছে স্কুল বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনার এই সময় শিক্ষকদের বেতন দিতে না পারায় এমন উদ্যোগ নিয়েছি। তবে কেউ কিনবেন কিনা, তা নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি।

শুধু এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির বিক্রির বিজ্ঞাপনই নয়, অনেকেই বিক্রি বা হস্তান্তর করতে না পেরে আসবাবপত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম বিক্রি করে ভাড়া মিটিয়ে চিরদিনের জন্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিচ্ছেন। এদের মধ্যে রয়েছে মালিবাগের ঢাকা ক্যাডেট স্কুল।

এ বিষয়ে কিন্ডার গার্টেন অ্যাসোসিয়েশন থেকে বলা হচ্ছে—করোনার দীর্ঘ বন্ধে রাজধানীর কিন্ডার গার্টেন স্কুলগুলোর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না, এমন বিজ্ঞাপন তারই উদাহরণ।

বাংলাদেশ কিন্ডার গার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. মিজানুর রহমান জানান, রাজধানীর মলিবাগের ঢাকা ক্যাডেট স্কুলটি ভাড়া মেটাতে না পেরে সরঞ্জাম বিক্রি করে দিয়েছে। ভাড়া করা ভবনটিও ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সরঞ্জাম বিক্রি করে বকেয়া ভাড়া মেটানো সম্ভব না হওয়ায় অগ্রিম জমা রাখা টাকা থেকে বাড়ির মালিককে ভাড়া পরিশোধ করে সাতক্ষীরায় চলে গেছেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক সাইদুর রহমান।

তবে এ বিষয়ে ঢাকা ক্যাডেট স্কুলের মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া গেছে।

করোনা মহামারির সময় মালিকানা হস্তান্তরের চেষ্টায় থাকা জুরাইন আইডিয়াল কিন্ডার গার্টেনের মালিক মোশাররফ হোসেন বলেন, শিক্ষকদের বেতন দিতে পারছি না। তবে চেষ্টা চালাচ্ছি প্রতিষ্ঠানটি চালিয়ে নেওয়ার। প্রতিষ্ঠান হস্তান্তরের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সম্মান বাঁচাতে প্রতিষ্ঠানটি হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া নেওয়া হয়েছিল।’

কিন্ডার গার্টেন অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, বেকারত্ব ঘোচাতে অনেকেই রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া ও মহল্লায় কিন্ডার গার্টেন চালু করেছিলেন। অনেকে এটিকে ব্যবসা হিসেবেও নিয়েছিলেন। কিন্ডার গার্টেন মালিকরা বলছেন, কে জানতো করোনার সময় প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখাই সবচেয়ে কঠিন বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। অনেকেই কিন্ডার গার্টেন স্কুল পুরোপুরি বন্ধের প্রস্তুতি নিয়েছেন।

বাড্ডা এলাকার একটি প্রতিষ্ঠান হলি ভিশন কিন্ডার গার্টেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনায় হিমশিম খাচ্ছে মালিকপক্ষ। অধ্যক্ষ মো. সামসুল বলেন, ‘আমরা কষ্ট করে স্কুলটি চালিয়েছি। প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৪০০ জনের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। বাড়িভাড়া দিতে হয় মাসে ৩০ হাজার টাকা। কয়েক মাসের ভাড়া বাকি রয়েছে। করোনার এই পরিস্থিতিতে শিক্ষকদের বেতনই দিতে পারছি না। পরিস্থিতি দীর্ঘ হলে স্কুল পরিচালনা অসম্ভব হয়ে পড়বে। সরকারের কাছে আমরা এ জন্য বিশেষ প্রণোদনা চাই।’

বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়া কিন্ডার গার্টেন রেসিডেনসিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ

মো. সামসুল হক আরও জানান, শুধু তাদের অবস্থাই খারাপ না, বাড্ডা এলাকার টাইনি টট, শেখ রাসেল কিন্ডার গার্টেনসহ বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান বন্ধের উপক্রম হয়েছে। করোনা দীর্ঘস্থায়ী হলে বেশিরভাগ কিন্ডার গার্টেন চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে।

কিন্ডার গার্টেন মালিকরা বলছেন, করোনার কারণে দেশের ছয় লাখ শিক্ষকের বেশিরভাগই বেকার হয়ে পড়বেন। আর এক কোটি শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে ভিন্ন স্কুলে গিয়ে ভর্তি হতে হবে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

কিন্ডার গার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘করোনার প্রভাব দীর্ঘ হলে দেশের ৭০ শতাংশ কিন্ডার গার্টেন বন্ধ হয়ে যাবে। দেশে ৬ লাখ শিক্ষক বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ অবস্থায় বেশিরভাগ কিন্ডার গার্টেন শিক্ষকদের বিকল্প আয়ের পথ খুঁজতে হচ্ছে।’

জাতীয় স্বার্থে বিশেষ প্রণোদনা দিয়ে হলেও প্রতিষ্ঠানগুলো টিকিয়ে রাখার আহ্বান জানান তিনি। সৌজন্যে বাংলা ট্রিবিউন।

প্রতিবেদন তৈরি করেছেন িএস এম আববাস, সিনিয়র রিপোর্টার, বাংলা ট্রিবিউন