বুধবার বসছে সংসদ অধিবেশন, চলবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে

জুন ৯, ২০২০

করোনাভাইরাস সংক্রমণজনিত বৈশ্বিক মহামারির মাঝে বুধবার (১০ জুন) সংসদ অধিবেশন বসছে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিকাল পাঁচটায় বৈঠক শুরু হবে। এ অধিবেশনেই বৃহস্পতিবার (১১ জুন) ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

করোনাভাইরাসের সংকটকালে অনুষ্ঠেয় বাজেট অধিবেশনে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছে সংসদ। সংসদ সচিবালয়ের বাজেট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। সংসদ ভবনে দর্শনার্থী এবং গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী-এসএসএফের সুপারিশ অনুযায়ী সংসদ অধিবেশনে কাজ করবেন এমন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষায় ৪৩ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং বয়স্ক সংসদ সদস্যদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে সুস্থ হওয়া এমপিদেরও অধিবেশনে যোগ দিতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

অধিবেশন চলাকালে কক্ষের স্বাস্থ্য নিরাপত্তায়ও বড় ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে সাময়িকভাবে আসন বিন্যাসেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর আশপাশের বেশ কয়েকটি আসন ফাঁকা রাখা হবে। এক্ষেত্রে সংসদের প্রধান হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরীকে আরও এক সারি পেছনে এবং প্রধানমন্ত্রীর ডান পাশের আসনের সংসদ সদস্য মতিয়া চৌধুরীসহ অন্যদের আরও কয়েক আসন দূরে বসানোর ব্যবস্থা করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর ঠিক পাশেই সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর আসন। কিন্তু বয়স বিবেচনায় তিনি অধিবেশনে যোগ দেবেন না।

আসন বিন্যাস এবং তালিকা করে সংসদ সদস্যদের উপস্থিতির বিষয়ে প্রধান হুইপের নেতৃত্বে হুইপরা একাধিক দফা বৈঠক করে কোন দিন কোন কোন সদস্য অংশ নেবেন, তার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সদস্যদের এসএমএস করে যার যার শিডিউল জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

অধিবেশন শুরুর দিন বুধবার অধ্যাদেশ উত্থাপন এবং শোক প্রস্তাব গ্রহণের মধ্য দিয়ে কার্যক্রম শেষ করা হবে। ঢাকা- ৫ আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান মোল্লা সম্প্রতি মারা গেছেন। তার মৃত্যুতে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা ও তা গ্রহণের পর সংসদের বৈঠক মুলতবি করা হবে। পরের দিন ১১ জুন বৃহস্পতিবার বিকাল তিনটায় অধিবেশন শুরু হবে। বাজেট পেশ ও অর্থ বিল উত্থাপনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ দিনের কার্যক্রম। এরপর ১২ ও ১৩ জুন বৈঠক মুলতবি রাখা হবে। ১৪ এবং ১৫ জুন সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা ও সম্পূরক বাজেট পাস করা হবে।

এরপর শুরু হবে প্রস্তাবিত সাধারণ বাজেটের ওপর আলোচনা। ১৬ জুন মঙ্গলবার ও ১৭ জুন বুধবার দুই দিন আলোচনা শেষে ১৮ জুন থেকে ২১ জুন পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি থাকতে পারে। এরপর ২২ জুন থেকে ২৪ জুন আরও তিন দিন বাজেটের ওপর আলোচনা করে ২৫ জুন থেকে ২৮ জুন চার দিনের বিরতি দেওয়া হতে পারে। ২৯ জুন সোমবার বাজেটের ওপর সমাপনী আলোচনা হবে। ওই দিনই পাস হবে অর্থবিল।

পরদিন ৩০ জুন মূল বাজেট ও নির্দিষ্টকরণ বিল পাস হবে। এরপর আরেকটি বিরতি দিয়ে ৮ বা ৯ জুলাই একদিনের জন্য অধিবেশন বসে ওইদিনই সমাপ্তি টানা হতে পারে।

১১ জুন বাজেট পেশের পর ২০২০-২১ অর্থবছরের সাধারণ বাজেট নিয়ে আলোচনা হবে ছয় দিন। আর চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট নিয়ে আলোচনা হবে দুই দিন। সব মিলিয়ে বাজেটের ওপর ২০ থেকে ২২ ঘণ্টা আলোচনা হবে।

সংসদের আইন শাখার প্রকাশিত ক্যালেন্ডার অনুযায়ী অধিবেশন শুরু ও বাজেট পেশের দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টায় সংসদের বৈঠক বসবে। চলবে দেড়টা পর্যন্ত।

প্রতিবার অধিবেশনের আগে মেয়াদ ও কার্যক্রম ঠিক করতে কার্য-উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক হয়। তবে গত সপ্তম অধিবেশনের মতো এবারও তা হবে না।

সচরাচর বাজেট অধিবেশন দীর্ঘ হয়। অধিবেশনে সম্পূরক বাজেটের ওপর দুই থেকে চার দিন এবং সাধারণ বাজেটের ওপর ১২ থেকে ১৫ দিন আলোচনা হয়। বাজেট নিয়ে ৫০ থেকে শুরু করে ৬৫ ঘণ্টার মতো আলোচনার রেকর্ড রয়েছে।

এর আগে সংবিধানের নিয়ম রক্ষায় গত ১৮ এপ্রিল ইতিহাসের সংক্ষিপ্ততম অধিবেশনে বসে জাতীয় সংসদ। তখন আইন প্রণেতাদের বসানো হয় দূরত্ব বজায় রেখে।

দেশের ইতিহাসে সংক্ষিপ্ততম অধিবেশনে গত ১৮ এপ্রিল ৩৫০ সংসদ সদস্যের মধ্যে ১৩৫ জন অংশ নিয়েছিলেন। মাস্ক, গ্লাভস পরে দূরত্ব মেনেই সেদিন আইনসভায় বসেছিলেন আইন প্রণেতারা।

অধিবেশনের বিষয়ে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘অধিবেশনে বয়স্ক সংসদ সদস্যদের অংশ না নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া, স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরত্ব বজায় রেখে যাতে বসতে পারেন, সেজন্য ৮০-৯০ জন সংসদ সদস্য নিয়ে প্রতিদিন সংসদ চালানো হবে।’

সরকারি দলের হুইপ ইকবালুর রহীম বলেন, ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থে আমরা অধিবেশনে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। সেই অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের আসার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। বয়স্ক ও অসুস্থদের আসতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।’

এদিকে বৃহস্পতিবার ১১ জুন বাজেট উপস্থাপনের আগে সংসদে বসবে মন্ত্রিসভার বৈঠক। বাজেট অনুমোদনের পর তা পাঠানো হবে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের জন্য। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ওই সময় সংসদ ভবনেই অবস্থান করবেন। পরে রাষ্ট্রপতির গ্যালারিতে বসে অধিবেশন দেখবেন তিনি।

সংসদ ভবনে রাষ্ট্রপতি ঢোকার সময় বিউগল বাজানো থেকে যেসব আনুষ্ঠানিকতা থাকে, এবার তাও থাকছে না। লোকসমাগম কমাতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বঙ্গভবনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

এদিকে, প্রতিবছর বাজেট উপস্থাপন দেখার জন্য ঢাকায় নিযুক্ত ভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, পত্রিকার সম্পাদক, অর্থনীতিবিদসহ বিভিন্ন পেশাজীবী ও সমাজের বিশিষ্টজনদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও এবার তা হচ্ছে না।