ডিজিটাল ক্লাসরুম ও ভার্চ্যুয়াল ক্লাসে ক্যামব্রিয়ান সেরা

জুন ৮, ২০২০

সরকারের নেওয়া উদ্যোগ এখনও ফলপ্রসু না হলেও ডিজিটাল ক্লাসরুম পরিচালনা ও ভার্চ্যুয়াল ক্লাসে সবচেয়ে বেশি সফলতা দেখিয়েছে দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্যামিব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সব বইয়ের ডিজিটাল কনটেন্ট প্রস্তুত করে অনেক আগে থেকেই নিয়মিত ক্লাস পরিচালনাও করছে প্রতিষ্ঠানটি। বিএসবি ফাউন্ডেশন পরিচালিত বেসরকারি ক্যামিব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি দেশের ১৫টি ক্যম্পাসেই এই সফলতা দেখাতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ ছুটির সময় ভার্চ্যুয়াল ক্লাসেও দেশ সেরা সাফল্য দেখাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানটি।

করোনার উদ্ভূত প্রাদুর্ভাবের কারণে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গত ১৭ মার্চ থেকে আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আগমী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  

দীর্ঘ এই ছুটিতে  শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ঘরবন্দি। তাই প্রতিষ্ঠানটি করোনার কারণে ঘোষিত ছুটির শুরু থেকে জুম ক্লাউড, ইউটিউব, হোয়াসট অ্যাপ, গুগোল ক্লাসরুম ও ফেইসবুক ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে ক্লাস পরিচালনা করছে প্রতিষ্ঠানটি।

ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের ১৫টি ক্যাম্পাসে সবগুলো বিষয়ের ডিজিটাল কনটেন্ট ব্যবহার করে ডিজিটাল ক্লাস পরিচালত হচ্ছে করোনা সংকটের আগে থেকেই। শুধু ক্লাস নয়, ঢাকার মোহাম্মদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নারায়ণগঞ্জের তিনটি ক্যম্পাস স্মার্ট ক্যাম্পাস হিসেবে তৈরি করা হয়েছে।

দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যখন ভার্চ্যুয়াল ক্লাস শুরু করতে নানা সংকটে পড়ছে, তখন সফলভাবে ভার্চ্যুয়াল ক্লাস পুরোদমে চালিয়ে আছে ক্যামিব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ। কোনও অভিযোগ ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটি করোনা সংকটে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে স্কুলে লেখাপড়া করেছেন সেই আজিমপুর গভঃ গার্লস হাই স্কুল এবং ল্যাবরেটরি গভঃ হাই স্কুলে পরিচালিত হচ্ছে স্মার্ট ক্লাসরুম। এছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে শুধু মাত্র ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের রয়েছে স্মার্ট ক্লাসরুম। সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে দেশের এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের স্মার্ট ক্লাসরুমে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রতিবছর টপ ১০০ ক্ষুদে প্রোগ্রামারও তৈরি হচ্ছে।

বিএসবি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান লায়ন এমকে বাশার বলেন, ‘প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত ক্যামবিয়ানের সব শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের কনটেন্ট প্রস্তুত করা আছে। সরকার চাইলে আমাদের কনটেন্ট শেয়ার করতে পারে। সম্প্রতি তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর দফতর থেকে কনটেন্ট শেয়ারিংয়ের জন্য চুক্তি করতে একটি খসড়া প্রস্তাবনা পাঠিয়েছেন। শিগগিরই হয়তো একটা চুক্তি হবে সরকারের সঙ্গে। দেশের আধুনিক শিক্ষার বিস্তারে বিএসবি ফাউন্ডেশন বিনা অর্থে সব কনটেন্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শেয়ার করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। ’

এম কে বাশার জানান, এনসিটিবির বই ছাড়াও সরকার অনুমোদিত অন্যান্য সব পাঠ্যবইয়েরও ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করেছে ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

করোনা পরিস্থিতির আগে রাজধানীর মোহাম্মদপুর ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা গেছে, সব ক্লাসেই ডিজিটাল পদ্ধতিতে ক্লাস পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিটি পাঠ্যবইয়ের ডিজিটাল কনটেন্ট উপস্থাপন করা হচ্ছে স্মার্ট বোর্ডে। শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণও রয়েছে প্রযুক্তিগতভাবেই। ক্লাসে শিক্ষার্থীদের বই ব্যবহার না করেই ডিজিটাল কনটেন্ট উপস্থাপন করে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকরা।

ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের মোহাম্মদপুর ক্যাম্পাসের অধ্যক্ষ অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আনিসুর রহমান চৌধুরী (পিএসসি) বলেন, ‘শুধু মোহাম্মদপুর ক্যাম্পাসে নয়, সব ক্যাম্পাসেই একই নিয়মে একই সময়ে ক্লাস নেওয়া এবং ক্লাস শেষ করা হয়। বিশেষ কোনও কারণ ছাড়া দেশের ১৫টি ক্যম্পাসে একই দিন একই ক্লাস পরিচালিত হয়। ‘

অধ্যক্ষ জানান, ডিজিটাল ক্লাসের পাশাপাশি পুরো ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের যাবতীয় তথ্য শিক্ষার্থীরা নিজ এনড্রয়েড মোইলের ক্লাউডে প্রবেশ করে দেখতে পারবে। শিক্ষার্থীরা তাদের বিগত সময়ের পরীক্ষার ফল, উপস্থিতির তথ্যসহ সব ধরনের তথ্য জানতে পারবে। আগামী পরীক্ষা ও ক্লাস সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্য পাবে।  

স্টুডেন্ট আইডি কার্ড

শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড তৈরি করা হয়েছে অত্যাধুনিকভাবে। কার্ডে ব্যবহার করা হয়েছে উন্নত ডিভাইস। ফলে শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে প্রবেশ করার সময় আইডি কার্ড পাঞ্চ করলেই অভিভাবকের মোবাইল নম্বরে সয়ংক্রিয়ভাবে তার উপস্থিতির ম্যাসেজ চলে যাবে। একইভাবে প্রতিষ্ঠান থেকে বেরুনোর সময়ও কার্ড পাঞ্চ করার সঙ্গে সঙ্গেই অভিভাবকের মোবাইল নম্বরে ম্যাসেজ চলে যাবে। 

এই আইডি শুধু উপস্থিতি জানান দিতেই শুধু কাজ করে না, শিক্ষর্থীর নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রেও ভূমিকা পালন করে। কোনও কারণে কোনও শিক্ষার্থী বিপদের সম্ভবনা দেখলে তার আইডি কার্ডের এসএমএস বাটনে ক্লিক করলে মোবাইল ফোন থেকে প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং শিক্ষার্থীর বাবা ও মায়ের কাছে ফোন চলে যাবে। প্রতিষ্ঠানপ্রধান, অভিভাবক শিক্ষার্থী সম্ভাব্য বিপদ থেকে উদ্ধার হতে পারবেন বলে জানান ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের মোহাম্মদপুর ক্যাম্পাসের অধ্যক্ষ অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আনিসুর রহমান চৌধুরী (পিএসসি)।

বর্তমানে দীর্ঘ ছুটির এই সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ১৫টি ক্যম্পাসে শিক্ষার্থীর জন্য পরিচালিত হচ্ছে ভার্চ্যুয়াল শিক্ষা কার্যক্রম।

প্রতিবেদন তৈরি করেছেন, বাংলা ট্রিবিউনের সিনিয়র রিপোর্টার এস এম আববাস