করোনা ধর্ম নিরপেক্ষ ভাইরাস

মার্চ ৫, ২০২০

ইরানকে বিরান করে সৌদি আরবে পৌঁছে করোনা। সৌদি বাদশাহর দরোজায় টোকা দিয়ে বলে, শান্তি ও মানবতার জন্য প্রার্থনার কথা দিয়ে আসলে তো তোমরা টাকার উপাসনা করো। তোমরা টাকার লোভে ইয়েমেনে হত্যাযজ্ঞের নেশায় উন্মত্ত। কাজেই ধর্মের নামে যে ব্যবসা ফেঁদে বসেছো ওসব বন্ধ করো।

করোনা অত্যন্ত ধর্ম নিরপেক্ষ একটি ভাইরাস। সে এইভাবে আজ এখানে আসতে চায়নি। চীন ধর্মহীন তাতে করোনার কিছু এসে যায়নি। সে ভেবেছে ধর্ম ছাড়াই মানুষ যদি মানবিক হতে পারে অসুবিধা কী! কিন্তু চীন বেশিদিন ধর্মহীন থাকেনি। টাকার ঈশ্বরের উপাসনা শুরু করেছে মনে প্রাণে; এই টাকা উপার্জন করতে গিয়ে প্রকৃতি পুড়িয়েছে; টাকার ঈশ্বরে আস্থাহীনদের উচ্ছেদ করেছে। ভিন্ন ধর্মের মানুষকে উইঘুরের ডিটেনশন ক্যাম্পে টাকার ঈশ্বরের উপাসনা শিখতে বাধ্য করেছে।

করোনা তখন ভেবেছে, টাকা-ধর্মী চীনকে ধর্ম নিরপেক্ষতা শেখাবে। যেহেতু টাকাই চীনাদের ঈশ্বর তাই করোনা টাকাকে ভাইরাস সংক্রমিত করেছে। ইউহানে টাকাধর্মীদের ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দী করেছে। এরপর ধীরে গোটা চীনকে করোনার ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দী করেছে। এই যে চীনের একদলীয় শাসকের যে স্বৈরাচারি মনোজগত; অসহায় উপায়হীন মানুষকে ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দী করে ক্ষমতা দেখানোর যে ঐতিহ্য; করোনা তাকে দেখিয়ে দিয়েছে, ডিটেনশন ক্যাম্প কাকে বলে। একটা পুরো দেশই যখন ডিটেনশন ক্যাম্প।

অসাম্প্রদায়িক চেতনার করোনার চীনজয় হয়ে গেলে; চীনের টাকার কারখানার চিমনির বিষ নিঃসরণের ক্ষমতা ফুরিয়ে যায়। জীবন্মৃত এক ড্রাগনের মতো টাকার ঈশ্বর নিস্তেজ হয়ে পড়তে থাকে। বেজিং শহর হয়ে ওঠে যেন মৃতের জনপদ।

করোনাভাইরাসঃ বিভীষিকাময় দিনে ২৪২ মৃত্যু : করোনার চোখ পড়ে ভারতের দিকে। একধর্মী ভারতের নেশায় গেরুয়া উড়িয়ে জয়শ্রীরাম শ্লোগানে চারপাশ কাঁপিয়ে যখন অন্য ধর্মের মানুষের হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে রামভক্তরা; করোনা তখন ভারতের দরোজায় টোকা দিয়ে বলে, ভারতের তো ধর্ম নিরপেক্ষ থাকার অঙ্গীকার ছিলো। গুজরাটে, কাশ্মীরে, উত্তর প্রদেশে, দিল্লিতে এতো হত্যাযজ্ঞ চালালে; আর ভাবছো তোমাদের ছেড়ে দেবো।

রামভক্তরা গোবর জলে স্নান করে করোনাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়, এসো করোনা; পারলে আমাদের খুনের নেশা থামাও। করোনা কটাক্ষ করে বলে, গোবরের স্বৈরাচারে বড্ড গর্বিত দেখছি; দেখো এবার করোনা স্বৈরাচার কেমন লাগে। করোনা ঢের বুঝে গেছে, ভারতেও টাকাই ঈশ্বর; ফলে গোবর মেখে করোনা ভাইরাস ভরা টাকা-হাতাতে হাতাতে জয়শ্রীরাম ব্রিগেড ঠিকই শ্মশানে পৌঁছে যাবে।

করোনা একবার বাংলাদেশের দরোজায় টোকা দিয়ে জিজ্ঞেস করে, কেমন আছো বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ স্মিত হেসে বলে, শ্রেষ্ঠত্বে আছি; আছি উন্নয়নে; খুশির ঠেলায় ভালো লাগে ঘুরতে আনন্দে।

করোনা মুচকি হেসে ভারতে ডিটেনশন ক্যাম্প স্থাপন করে এবার পাকিস্তানের দরোজায় টোকা দিয়ে বলে, মনে আছে বাংলাদেশে একাত্তরের গণহত্যার কথা! সত্তর বছর ধরে একধর্মী হয়ে অন্যধর্মের মানুষের যে হত্যা ও উচ্ছেদ করেছো; সব ভুলে গেলে; আজ অনেক সাধু সেজে জয়শ্রীরামের সমালোচনা করছো যে।

নারায়ের তাকবির ব্রিগেডের লোকেরা করোনা ভাইরাস নির্মূলের দোয়া বিতরণ করে মিন মিন করে বলে, করুণা করো করোনা।

এক আত্মঘাতী হামলাকারী এসে করোনাকে অনুরোধ করে, এতোদিন ধরে মানুষ মেরেও খুনের নেশা ছাড়ে না; তুমিই করোনা আমাকে মারো সঙ্গে আরো মানুষ মারো।

করোনা পাকিস্তানে ডিটেনশন ক্যাম্প বানিয়ে; টাকাই সেখানে একমাত্র ঈশ্বর বলে; টাকার মধ্যে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়। ভাইরাস নির্মূলের দোয়া পড়তে পড়তে ‘নারায়ের তাকবির’ ব্রিগেডের লোকেরা ঠিকই কবরস্থানে পৌঁছে যাবে।

করোনা ইরানে যায়, ঢুকে পড়ে একধর্মী বিপ্লবের মজলিসে। দ্রুত ভাইরাস ছড়িয়ে কিছু ভি আই পিকে হত্যা করে। একধর্মী সামাজিক পুলিশেরা করোনার আগমনে ভয় লুকিয়ে বলে, আমাদের কাজ উদারপন্থীদের মেলামেশা বন্ধ রাখা। আমরা চাই আমাদের মতোই বৈচিত্র্যহীন জীবন হোক তাদের। করোনার ভয়ে ডিজে পার্টি বন্ধ হলেই আমরা খুশি।

ইরানকে বিরান করে সৌদি আরবে পৌঁছে করোনা। সৌদি বাদশাহর দরোজায় টোকা দিয়ে বলে, শান্তি ও মানবতার জন্য প্রার্থনার কথা দিয়ে আসলে তো তোমরা টাকার উপাসনা করো। তোমরা টাকার লোভে ইয়েমেনে হত্যাযজ্ঞের নেশায় উন্মত্ত। কাজেই ধর্মের নামে যে ব্যবসা ফেঁদে বসেছো ওসব বন্ধ করো।

করোনা অনেক ভেবে দেখেছে, মসজিদ- মন্দির- গির্জা- প্যাগোডা, যেখানে শান্তি সম্মেলন হবার কথা; সেগুলোকে বিদ্বেষের কারখানায় পরিণত করেছে নানাদেশের মানুষ। দেশে দেশে শান্তি পর্যটনের নামে অশান্তি পর্যটন বন্ধ করে দেয় করোনা।

ইতালিতে ভ্যাটিক্যান সিটির দরোজায় টোকা দিয়ে করোনা বলে, ধর্ম-নিরপেক্ষতার বিশ্বজয়ে বেরিয়েছি। সভ্যতার যুদ্ধ নামে যা চলেছে, সবই ধর্ম-যুদ্ধ। বিশ্বকে একধর্মী উপনিবেশ বানানোর নামে টাকার ঈশ্বরের উপাসনা সবই। কাজেই এবার সবাইকেই একটা শিক্ষা দিতে চাই।

করোনার আক্রোশের মুখে পৃথিবী জুড়ে রেড এলার্ট জারি হতে থাকে। রাষ্ট্রগুলো নিজের নিজের দোকানের ঝাঁপ ফেলে দিয়ে নিজেকে নিরাপদ ভাবতে চেষ্টা করে। কিন্তু করোনা নিয়ে অনিশ্চয়তাটা জেগে থাকে।

দশ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে কিংবা হোয়াইট হাউজে দুঃশ্চিন্তায় পড়ে যায় বরিস বেকার আর ডনাল্ড ট্রাম্প। করোনা এখন তাদের চেয়েও জনপ্রিয় একটি নাম; তাদের চেয়ে করোনার ক্ষমতা অনেক বেশি এটা ভাবতে ভাবতে মুষড়ে পড়ে তারা। ক্রেমলিনে পুটিন, তুরস্কে এরদোয়ান, ইজরাইলে নেতানিয়াহু; এইসব গজিয়ে ওঠা স্বৈরাচারিরা বিপুল বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখে করোনার স্বৈরাচারের শক্তি। স্বৈরাচারি করোনার ডিটেনশন ক্যাম্প যেন পুরো পৃথিবী; এ যেন মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে যাওয়া মৃত্যুর ইন্দ্রজাল।