মঈন উদ্দিন খান বাদল: একটি আলোকবর্তিকার অবসান

নভেম্বর ২৬, ২০১৯

পর বহুদিন কেটে গেছে। তাঁর কাছে গেলে পিতৃস্নেহের একটি বিশ্বস্ত নির্ভরতার স্পর্শ পেতাম। তাঁর লেখাপড়া, পান্ডিত্য ছিল ঈর্ষণীয়। তাঁর বক্তৃতায় ছিল প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস এবং উজ্জীবনী শক্তি। শত হতাশার মাঝেও তিনি ছিলেন আশাবাদী কর্মমুখী এক গণমানুষের আপন মানুষ। তাঁর মুখে বিপ্লবী সুখানভের গল্পটি এখনো কানে লেগে আছে।

 

ব্যক্তিত্ব এমন একটি জিনিস যা ব্যক্তির মানসভূমি তাঁর শরীরের বহিরঙ্গে একটি দ্যুতিময় চাদর ঝুলিয়ে দেয়। মঈন উদ্দিন খান বাদল ছিলেন এমন একজন ব্যক্তিত্ব। তাঁর চলনে বলনে কথনে এমন এক সম্মোহনী শক্তি ছিল যা সহজেই সবাইকে আকৃষ্ট করত। তাঁর সাথে আমার দীর্ঘ দিনের পরিচয়। তাঁর জীবন আদর্শ আচরণ স্বপ্ন অন্যকে পথ দেখাত, হতাশা দূর করে দিত।

তখন স্বৈরাচারী সামরিক জান্তা এরশাদের দমন পীড়ন চূড়ান্ত পর্যায়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেলিম দেলোয়ারের শরীর সামরিক জান্তার ট্রাকের নীচে পিস্ট। রাজনীতিবিদদের নিক্ষেপ করা হল কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে। বাদল ভাই একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযাদ্ধা । সম্মুখ সমরে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। তাঁর বাম পায়ে পাকিস্তানী হায়েনাদের গুলি এখনো লুকিয়ে আছে। কারাগারে তিনি অসুস্থ হলে পিজি হাসপাতালের বন্দীদের সেলে আনা হল। তখন মেডিকেলের ছাত্র হিসেবে মাঝে মাঝে তাঁকে দেখতে যেতাম। তিনি দুঃখ করে বলতেন, “একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধও আমাদের জান্তামুক্ত করতে পারল না। বড়ই আফসোস! “

তারপর বহুদিন কেটে গেছে। তাঁর কাছে গেলে পিতৃস্নেহের একটি বিশ্বস্ত নির্ভরতার স্পর্শ পেতাম। তাঁর লেখাপড়া, পান্ডিত্য ছিল ঈর্ষণীয়। তাঁর বক্তৃতায় ছিল প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস এবং উজ্জীবনী শক্তি। শত হতাশার মাঝেও তিনি ছিলেন আশাবাদী কর্মমুখী এক গণমানুষের আপন মানুষ। তাঁর মুখে বিপ্লবী সুখানভের গল্পটি এখনো কানে লেগে আছে।

২০০৬ সালে ল্যাবএইডে আমরা প্রথমে তাঁর এ্যানজিওগ্রাম করি। সামান্য সমস্যা ছিল, আমরা তাঁকে ওষুধের উপর রাখি। তিনি ভালই ছিলেন। তিনবার এমপি হলেন কিন্তু তাঁর মধ্যে কোন অহংবোধ দেখিনি। কতদিন কতবার তিনি ফোন দিয়ে আমার খবরাখবর নিতেন, আর বলতেন “তুমিই আমার সেরা ডাক্তার। তোমার হাতেই মরব!”
যখনই চেম্বারে আসতেন প্রতিবারেই ফিস দেবার চেষ্টা করতেন। বলতেন, “আমি তো দিতে পারি, গরীবদের ফ্রী দেখে দিও।”

তাঁর ইচ্ছে ছিল ডা দেবী শেঠীকে নিয়ে চট্টগ্রামে একটি আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল বানাবেন। অনেকদূর কাজও এগিয়েছিল কিন্তু তার আগেই তিনি মহাকালের দিকে একা একা এগিয়ে গেলেন !