পাটের শাড়িতে পরিপাটি

মার্চ ১৬, ২০১৮

জান্নাতুল মাওয়া।।

কবি আহসান হাবীবের ‘ইচ্ছা’ কবিতায় মনা নামের মিষ্টি ছেলেটা মাছ ধরতে যাবে বলেছিল। কারন সে তার বোনকে পাটের শাড়ি দিতে চায়। এরও অনেক আগে থেকেই শরতচন্দ্রও তার নায়িকাদের কাউকে কাউকে পাটের শাড়ি পরিয়েছিলেন। অর্থাৎ এই বাংলায় পাটের শাড়ির বেশ চল ছিলো। এমনকি আমাদের নানী দাদীদের অনেকের পুরনো ট্রাঙ্ক খুললেও দেখা মিলতে পারে পাটের শাড়ির। কিন্তু বর্তমানে পাটের সুতোয় তৈরি শাড়ি আর কোথাও সেভাবে দেখা যায়না।

পাট দিবসকে সামনে রেখে পাটের সুতোকে কাপড় তৈরি করার উপযোগী করে তোলার জন্যে অনেক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তবে এখনো সেই কর্মযজ্ঞটি সম্পন্ন হয়ে ওঠেনি। এখন আমাদের দেশে তরুণ তরুণীদের মধ্যে একটা বেশ বড় ফ্যাশন সচেতন অংশ গড়ে উঠেছে যারা দেশের পণ্যেই নিজেদেরকে সাজাতে বেশি আগ্রহী। দেশের ফ্যাশন ডিজাইনাররাও পাটের সুতোয় তৈরি পোশাক ডিজাইন করার জন্যে মুখিয়ে আছেন।

গত বছরের পাট পণ্য মেলায় ফ্যাশন ডিজাইনার শ্বেততাজ জাহান তিথি পাটের সুতোয় জামদানি শাড়ির ডিজাইন করেন। এই শাড়িটি ক্রেতা এবং দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে। কথা বলেছিলাম শ্বেততাজের সাথে। শ্বেততাজ জানান, আমাদের দেশে পাট পণ্যের ব্যাপক চাহিদা আছে। পাট দিয়ে তৈরি হচ্ছে নানান পণ্য। তবে সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এখনো পোশাক এবং শাড়ির বাজার সেভাবে তৈরি হয়নি। তবে বেশ কয়েক বছর ধরেই জুট কাতানের জনপ্রিয়তা চোখে পড়ার মত। এই জুট কাতানে পাটের সুতোর পাশাপাশি অন্য সুতোও ব্যবহার করা হয়।

পাটের সুতোয় তৈরি পোশাকের ইতিবাচক দিক জানাতে গিয়ে তরুণ এই ফ্যাশন ডিজাইনার জানান, তুলা থেকে সুতা তৈরির কাঁচামালে আমাদের দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। এগুলো তাই বাইরে থেকে ব্যপকহারে আমদানি করতে হয়। কিন্তু পাটের সুতার কাঁচামাল আমাদের দেশেই তৈরি হয়। তাই পোশাক তৈরিতে এই সুতার ব্যবহার আমাদের জন্য বেশ লাভজনক হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। তিনি আরো বলেন, একসময় আমাদের দেশে পাটের শাড়ির বেশ প্রচলন ছিলো, কিন্তু ধীরে ধীরে এটি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। তাই এখন সময় এসেছে আবার পাটের শাড়ির সাথে ফ্যাশন সচেতনদেরকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার এবং আবার পুরোদমে পাটের শাড়ি বাজারজাত করার।

একইসাথে শ্বেততাজ আরো জানান, পাটের সুতায় তৈরি পোশাক তুলনামূলক গরম হয়। আরো গবেষণার মাধ্যমে এই সুতোকে মিহি করার জন্যে চেষ্টার পাশাপাশি দেশের বাইরে শীতপ্রধান দেশগুলোতে রপ্তানিযোগ্য পোশাকও তৈরি করা যেতে পারে পাটের সুতোয়। তবে এরজন্যে দরকার সঠিক প্রচারণার মাধ্যমে বাজার তৈরি করা এবং ব্যপক সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। সেইসাথে দেশের পোশাক শিল্পের নেতৃস্থানীয়রাও এগিয়ে আসতে পারেন দেশে তৈরি এই পণ্যের বাজার তৈরিতে।

তবে আশার কথা হল দেশে এখনো পাটের শাড়ির বাজার সেভাবে গড়ে না উঠলেও পাটের তৈরি অন্যান্য পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পাটের তৈরি যে পণ্যটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় সেটি হল ব্যাগ। এছাড়াও বাজারে আপনি পাবেন পাটের তৈরি জানালার পর্দা, ফ্লোর ম্যাট, শতরঞ্জি, ল্যাম্পশেড, জুতো, শোপিস, গয়না, ওয়াল ম্যাটসহ নানান শখের খুঁটিনাটি জিনিস।

পাটের পণ্য গুলো একই সাথে রুচিশীল এবং দাম বেশ হাতের নাগালে হওয়ায় এই পণ্যগুলোর সব শ্রেণির ভোক্তাই রয়েছেন।

ফিচার ছবি- তাঁতী আর তাঁত মডেল- মাইশা মাশিয়াত

অন্যান্য ছবি- ইন্টারনেট

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.