জঙ্গিদের কার কী ভূমিকা ছিল?

জুলাই ১, ২০১৭

ঢাকা জার্নাল:গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২২ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে মামলার তদন্ত সংস্থা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। এর মধ্যে ৫ জন সরাসরি হামলায় অংশ নেওয়ার পর সেনা কমান্ডো অভিযানে নিহত হয়েছে। ৮জন নিহত হয়েছে বিভিন্ন অভিযানে। এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে চার জনকে। বাকি পাঁচ জন পলাতক রয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, পলাতক পাঁচ জনকে ধরতে পারলে এই মামলার তদন্ত কাজ শেষ করা যাবে। সিটিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, পলাতকদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে। আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে পলাতকদের ধরতে সক্ষম হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই হামলায় সরাসরি অংশ নেয় পাঁচ জন। তারা হলো রোহান ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, মীর সামিহ মোবাশ্বের, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল। আত্মঘাতী এই পাঁচ জনের দায়িত্ব ছিল হলি আর্টিজানে হামলা করে বিদেশী নাগরিকদের হত্যা করা।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, গুলশান হামলার ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে ৮ জন বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয়। এই আট জন হলো তামিম চৌধুরী, সারোয়ার জাহান, নূরুল ইসলাম মারজান, তানভীর কাদেরী, মেজর (অব.) জাহিদ, আবু রায়হান তারেক, ফরিদুল ইসলাম আকাশ ও আব্দুল্লাহ। এরমধ্যে গুলশান হামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড তামিম আহমেদ চৌধুরী। পুরো হামলার সমন্বয় ও বাস্তবায়ন করেছে সে। গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় এক জঙ্গি আস্তানায় দুই সহযোগীসহ নিহত হয় তামিম। এছাড়া তামিমের সমপর্যায়ের আরেক নেতা হলো সারোয়ার জাহান মানিক ওরফে আব্দুর রহমান। মূলত হামলার আর্থিক বিষয় ও ঘটনার তত্ত্বাবধান করে সে। গাজীপুরের আশুলিয়ায় ৮ অক্টোবর র‌্যাবের এক অভিযানের সময় পালাতে গিয়ে পাঁচ তলা থেকে পড়ে নিহত হয় এই জঙ্গি। নিহত আরেক জঙ্গি নূরুল ইসলাম মারজান ছিল মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরীর ‘ডানহাত’। মারজানই পাঁচ হামলাকারীকে সঙ্গে নিয়ে হলি আর্টিজান রেকি করা, অস্ত্র ও গ্রেনেড সংগ্রহসহ অন্য বিষয়গুলো তদারক করে। তানভীর কাদেরী নামে আজিমপুরে নিহত আরেক জঙ্গির দায়িত্ব ছিল আর্থিক বিষয় তদারক ও বাসা ভাড়া করে রাখা। তানভীর কাদেরীর বসুন্ধরার বাসাতেই এসে উঠেছিল। আরেক জঙ্গি মেজর (অব.) জাহিদ ও আবু রায়হান তারেক ছিল পাঁচ হামলাকারীকে গাইবন্ধার চরে প্রশিক্ষণ দেয়। ফরিদুল ইসলাম আকাশ ও আব্দুল্লাহ এই হামলা সংঘটিত করতে নানাভাবে সহায়তা করে।

তদন্ত সূত্র জানায়, এই ঘটনায় জিম্মি হওয়া হাসনাত করিমসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে হাসনাত করিমের বিষয়ে এখনও সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য জানা যায়নি। গ্রেফতারকৃত বাকি তিন জনের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী পাঁচ হামলাকারীর দু’জন পায়েল ও উজ্জ্বলকে আত্মঘাতী হিসেবে এই অপারেশনে যুক্ত করে। এছাড়া রাজীব নিজেও পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত ছিল। গ্রেফতার হওয়া অন্য দু’জনের একজন মিজানুর রহমান ওরফে মিজান গ্রেনেড ও অস্ত্র সরবরাহকারী। আর রাকিবুল হাসান রিগ্যান পাঁচ হামলাকারীর ধর্মীয় বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল বলে নিজের দেওয়া জবানবন্দিতে স্বীকার করেছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গুলশান হামলায় জড়িতদের মধ্যে পাঁচ জন এখনও পলাতক রয়েছে। এর মধ্যে মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ অস্ত্র-গ্রেনেড সরবরাহের বিষয়টি তদারক করে। একই সঙ্গে সে শেওড়াপাড়ার বাসায় বসে গুলশান হামলার ব্যবহৃত গ্রেনেডগুলো তৈরি করে বলে জবানবন্দিতে জানিয়েছে রাজীব গান্ধী। পলাতক আরেক জঙ্গি বাশারুজ্জামান চকলেট ছিল মাস্টারমাইন্ড তামিমের অন্যতম সহযোগী। পরিকল্পনা ও হামলা বাস্তবায়নে নানাভাবে সহায়তা করে সে। একইরকম ভূমিকা পালন করে আরেক পলাতক জঙ্গি রাশেদ ওরফে র‌্যাশ। এছাড়া বাকি দু’জন হাদীসুর রহমান সাগর ও ছোট মিজান পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ আনা নেওয়ার সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

ঢাকা জার্নাল, জুলাই ০১, ২০১৭।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.