পোশাকে ঐতিহ্যের ছাপ

মার্চ ২৯, ২০১৭

ঢাকা জার্নাল : দিন কয়েক পার হলেই বাংলা নববর্ষের আগমন। চৈত্রের বিদায়ে বৈশাখের নবযাত্রা। বৈশাখ উদযাপন হোক ঐতিহ্যবাহী দেশীয় পোশাকে। বাঙালিয়ানা ধরে রেখে চিরচেনা আনন্দে নববর্ষ বরণ। প্রাণের সুরে আরও একবার মেতে ওঠা বাঙালি উৎসবে। উৎসবের পোশাক হওয়া চাই জুতসই। সাজসজ্জায় থাকতে হবে পরিপাটি।

বৈশাখের রকমারি পোশাক নিয়ে ফ্যাশন হাউস অঞ্জন’স-এর শীর্ষ নির্বাহী শাহীন আহম্মেদ জানান, ‘বৈশাখের আয়োজনে মোটিফ ও রঙ বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। এবারের আয়োজনে অঞ্জন’স বেশ কয়েকটি মোটিফ নিয়ে কাজ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে আমাদের দেশের প্রাচীন জনপ্রিয় খেলা সাপলুডু, গ্রামের মেয়েদের কাছে খুব পছন্দের রেশমি চুড়ি, বাংলাদেশের বয়নশিল্পের অন্যতম ঐতিহ্য জামদানি, আমাদের ঐতিহ্য সন্দেশ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কাঠের কারুকাজ। সাদা ও লাল রঙ প্রাধান্য পেলেও অন্যান্য রঙও ব্যবহৃত হয়েছে এ আয়োজনে। পোশাক তৈরিতে কটন ও ভয়েল কাপড় বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। একই সঙ্গে এন্ডি কটন, লিনেন কটন, জয়সিল্ক কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে। স্ক্রিন প্রিন্ট, ব্লক প্রিন্ট, এমব্রয়ডারি ও কারচুপি কাজের মাধ্যমে পোশাকগুলোতে ডিজাইন করা হয়েছে। বৈশাখী এই আয়োজনে মূল্যের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। পোশাকগুলোর মূল্য ক্রেতাবান্ধব হয়েছে। একই মোটিফ দিয়ে গ্রুপ ডিজাইন করা হয়েছে মূলত পরিবার কিংবা বন্ধুবান্ধব যারা একই রকম পোশাক পরতে চায় তাদের কথা মাথায় রেখে।

এই তপ্ত সময়ের সঙ্গে ফ্যাশন এবং আরামের কথা মাথায় রেখে সুতি ছাপা শাড়ির তো জুড়িই নেই। এখন ছাপা শাড়ি বেশ চলছে। ছাপা শাড়িতে এসেছে অনেক ভিন্নতা। শুধু প্রিন্টই নয়, সঙ্গে রাখা হয়েছে ব্যতিক্রমী নকশা। শাড়ি, আঁচল, পাড় সবকিছুর কথা আলাদাভাবে মাথায় রাখা হয়েছে। ফলে এগুলো হয়ে উঠেছে আরও বেশি উৎসবময়।

প্রিন্টে ভিন্নতা
প্রিন্ট শাড়ি : প্রিন্ট শাড়ি অনেক আগে থেকেই জনপ্রিয় আমাদের দেশে। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য এটি একজনকে অতি সহজে অসাধারণ রূপ দিতে পারে। বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে বৈশাখ উপলক্ষে এসেছে প্রিন্ট শাড়ি। আর উৎসবের কথা মাথায় রেখে এগুলোয় লাল, নীল, হলুদ, সবুজের মতো গাঢ় রঙ ব্যবহার করা হয়েছে। কোনোটার সারা জমিনে প্রিন্ট, আঁচলে হালকা। আবার কোনোটার জমিনে ছোট ছোট প্রিন্ট রেখে আঁচল এবং পাড় করা হয়েছে জাঁকজমক। শাড়ির ভেতরের ছাপার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পাড় চওড়া ও চিকন করা হয়েছে।

ব্লক প্রিন্ট : এখন ব্লক প্রিন্ট অনেক চলছে। আর সে ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই বাজারে এসেছে বল্গক প্রিন্টের শাড়ি। ব্লকের অনেক ধরনের নকশা থাকে। আর এর শাড়িগুলো অসাধারণ। কোনোটার পুরো শাড়িতে ছোট বল্গক দিয়ে আঁচলে বড় বড় মোটিফ ব্যবহার করা হয়েছে। আবার কোনোটার পুরো শাড়িতেই ব্লকের বড় বড় মোটিফ। শাড়ির নিচের অর্ধেকে একঢালা ব্লক প্রিন্টগুলো বেশ জনপ্রিয়। আবার কোনো শাড়িতে পুরোটাই বল্গক করা। নিজের পছন্দমতো একরঙা শাড়িতে করিয়ে নিতে পারেন বল্গক ছাপা প্রিন্ট। সেক্ষেত্রে বেশি রঙ ব্যবহার না করে দুই থেকে তিনটি রঙের বল্গক প্রিন্ট করান।

স্ক্রিন প্রিন্ট : স্ক্রিন প্রিন্টের শাড়িগুলো দেখতে বেশ সুন্দর হয়। এজন্য এগুলো অনেকের কাছেই বেশ জনপ্রিয়। ফুল, লতা-পাতার স্ক্রিন প্রিন্টের শাড়িগুলো দেখতে খুবই চমৎকার। পুরো শাড়িতে কাজ হলেও শাড়ির পাড়ে থাকে একরঙা চিকন একটি বা দুটি স্ট্রাইপ। এখন কুচি এবং আঁচলে করা স্ক্রিন প্রিন্টগুলো বেশ চলছে। আর এ প্রিন্টগুলো অনেক নিখুঁত ও মসৃণ হয়। অফহোয়াইট, বেগুনি, হালকা সবুজ ও গোলাপির মতো হালকা রঙের শাড়িতে স্ক্রিন প্রিন্ট বেশি ভালো লাগে।

নকশা বা মোটিফ : এখন প্রিন্টেড শাড়ি গতানুগতিক অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসেছে। শুধু ফুল ও লতা-পাতা নয়, এখন ব্যবহার করা হচ্ছে অনেক মোটিফ।

জামদানি, কার্পেট, শতরঞ্চি, জানালার গ্রিলের মোটিফগুলো ব্যবহার করে ব্যতিক্রম কিছু তৈরি করা হয়েছে বলে জানালেন ফ্যাশন হাউস অঞ্জন’সের স্বত্বাধিকারী শাহীন আহম্মেদ। ফলে প্রিন্টেড শাড়িতে এসেছে ভিন্নতা।

বিভিন্ন পাখি, হাতি, ঘোড়া, প্রজাপতি, ফুল, লতা-পাতা, পাখা, একতারা, ঢোল ও চরকিসহ বিভিন্ন ফোক মোটিফ ব্যবহার করা হয়েছে প্রিন্টে। এ ছাড়া শাড়ির পাড়ে রান ফোড়ের মতো এক ধরনের প্রিন্টও থাকছে।

প্রিন্টের সঙ্গে ডিজাইন : শুধু একঢালা প্রিন্ট নয়, সঙ্গে রাখা হচ্ছে ছোট ছোট কারুকাজ। প্রিন্টের মোটিফগুলোকে করে দেওয়া হচ্ছে এমব্রয়ডারি অথবা হালকা হাতের কাজ। শাড়ির অর্ধেক আঁচল এবং পাড় জোড়া দেওয়া হচ্ছে কুশিকাঁটার কাজে অথবা জয়েন্ট লেস দিয়ে। সুতি ছাপ প্রিন্টেড শাড়িতে শুধু পাড়টা দেওয়া হচ্ছে ধুপিয়ান, তসর, কাতান অথবা টাঙ্গাইল শাড়ির প্রিন্ট। শাড়ির মাঝে থাকছে হালকা কারচুপি।

সিল্কের ছাপা প্রিন্ট : সুতি ছাড়াও ফুল ও হাফ সিল্কের মধ্যে করা হচ্ছে ছাপা প্রিন্ট নকশা। এগুলোর বেশির ভাগ স্ক্রিন প্রিন্টে ছাপা হচ্ছে। পুরো শাড়িতেই থাকছে প্রিন্ট। থাকছে দুই-তিন রঙের সমারোহ। শাড়ির ভেতরে এবং আঁচলে থাকছে ভিন্ন ভিন্ন নকশা।

দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে সালোয়ার-কামিজ মেয়েদের অতি আরামের পোশাকে রূপ নিয়েছে। গরমেও নেই তার জুড়ি। এমনটি মনে করেন তরুণী মিতু সরকারও। তিনি বলেন, ‘আমাদের বয়সী মেয়েরা একটু চঞ্চল থাকতে পছন্দ করে। আমিও ব্যতিক্রম নই। তাই সালোয়ার কামিজই বেশি আরামদায়ক মনে হয় এক্ষেত্রে। আর বৈশাখে অবশ্যই চাই বৈশাখী কামিজ।’ বৈশাখী কামিজে স্লোগান রঙের বাইরেও চিন্তা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে রঙের উজ্জ্বলতার কথা মাথায় রেখে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে কমলা, গাঢ় লাল, হলুদের মতো রঙের মিশ্রণ। কামিজে দেখা যায় এখন বিশেষ প্যাটার্ন। এমব্রয়ডারি, বল্গক, স্ক্রিন প্রিন্টের পাশাপাশি কামিজের স্লিভে পরিলক্ষিত হয় আলাদা কিছু ডিজাইন। রয়েছে সেলাইয়ের ভিন্নতাও। ঐতিহ্যবাহী মোটিফের সঙ্গে রয়েছে ফুলেল, জ্যামিতিক নকশা। রঙের ভিন্নতায় দেখা মেলে বাটিক আর টাই-ডাইয়ের নকশা। সালোয়ারে দেখা যায় চলতি ট্রেন্ডই। ডিভাইডারের বৈশাখ ডিজাইনে রয়েছে একই প্যাটার্নের মধ্যে ভিন্ন প্রিন্ট, টেক্সার। একই রকম চোখে পড়ে পালাজ্জোতেও। এই বৈশাখ শুধু পালাজ্জো, ডিভাইডারের দখলে এমনটি নয়। সালোয়ারের অন্যতম ডিজাইনগুলো থাকবে লেগিংসেও। সাদা, কমলা, লাল, হলুদের মতো উজ্জ্বল লেগিংসগুলো যেমন এক রঙা পাওয়া যাবে, থাকবে প্রিন্টিংও। গত কয়েক বছরের মতো এবার বৈশাখেও ঘুরে ফিরে রয়ে গেল সালোয়ারের এই প্যাটার্নগুলো। বাহারি রঙের পাটিওয়ালা সালোয়ার একটু উজ্জ্বল রঙের হলেই তা ভালো উৎসবের জন্য। সালোয়ারের মধ্যে চুড়িদার এক ধরনের ক্ল্যাসিকাল ডিজাইন হয়ে চলে আসছে বছর বছর ধরে। কিন্তু ট্রেন্ডের দায়ে চুড়িদারেও আসে কিছুটা পরিবর্তন। সাধারণত কটন বা হালকা কাপড়ের চুড়িদারই বেশি দেখা যায়। গাঢ় লাল, মেজেন্ডা, কমলা বা সাদার মতো উজ্জ্বল রঙে পাওয়া যাবে তা বৈশাখ সংগ্রহে।

ঢাকা জার্নাল, মার্চ ২৯, ২০১৭।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.