ডাম্বুলায় ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ

মার্চ ২৫, ২০১৭

ঢাকা জার্নাল : ডাম্বুলার ইতিহাস একেবারেই পক্ষে ছিল না বাংলাদেশের। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতেই ইতিহাস নতুন করে লিখল মাশরাফিরা। তামিম ইকবালের সেঞ্চুরির পর দুর্দান্ত বোলিংয়ে উড়িয়ে দিয়েছে তারা স্বাগতিকদের, পেয়েছে ৯০ রানের বিশাল জয়।

তামিমের সেঞ্চুরির সঙ্গে সাকিব আল হাসান ও সাব্বির রহামানের হাফসেঞ্চুরির ওপর ভর দিয়ে বাংলাদেশ ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে স্কোরে জমা করে ৩২৪ রান। জবাবে ৪৫.১ ওভারে শ্রীলঙ্কা অলআউট হয়ে যায় ২৩৪ রানে। ১২৭ রানের চমৎকার ইনিংস খেলা তামিম পেয়েছেন ম্যাচসেরার পুরস্কার।

মাশরাফিরা সুখবর শুনেছিল ব্যাট করার পরই। শ্রীলঙ্কায় ওয়ানডেতে কোনও দল ৩০০’র উপরে রান তাড়া করে সফল হয়নি, যেখানে বাংলাদেশ করে ৩২৪ রান। পরিসংখ্যানটা বদলায়নি। বোলারদের দারুণ নৈপুণ্যে বিশাল জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে টাইগাররা এগিয়ে গেল ১-০ ব্যবধানে। যদিও এই ম্যাচের আগে ডাম্বুলার ইতিহাস ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে। ২০১০ সালে এশিয়া কাপে খেলা তিন ম্যাচের সবক’টিতে তারা হেরেছিল বাজেভাবে। এবার সেই ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙল মাশরাফিরা দাপুটে জয়ে।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন শতাধিক রানের লক্ষ্য দেওয়ার পর দারুণ সূচনা করে বাংলাদেশ। অধিনায়ক মাশরাফি ইনিংসের তৃতীয় বলে দানুস্কা গুনাতিলাকাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন। প্রথম উইকেট হারানোর ধাক্কা সামলানো হয়নি লঙ্কানদের। ৩১ রানের মধ্যে আরও ২ উইকেট হারায় তারা।

পঞ্চম ওভারের শেষ বলে কুশল মেন্ডিস ৪ রানে লং অনে ধরা পড়েন বদলি ফিল্ডার শুভাগত হোমের হাতে। এটা ছিল মেহেদী হাসান মিরাজের প্রথম ওয়ানডে উইকেট। কিছুক্ষণ পর তাসকিন আহমেদ তার প্রথম ওভারে তৃতীয় উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। মাত্র ১৯ রানে মাশরাফির ক্যাচ হন লঙ্কান অধিনায়ক উপুল থারাঙ্গা।

এরপর ক্রিজ আঁকড়ে পড়ে ছিলেন দিনেশ চান্ডিমাল ও আসেলা গুনারত্নে। তারা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাদের ৫৬ রানের জুটিটি সাকিব আল হাসান ভেঙে ব্রেক থ্রু আনেন। ব্যক্তিগত ২৪ রানে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে মোসাদ্দেকের ক্যাচ হন গুনারত্নে। মিরাজের দ্বিতীয় শিকার হতে সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ দেন চান্ডিমাল। ৫৯ রান করে দলের ভরসা হয়ে ছিলেন তিনি।

মারকুটে ব্যাটিংয়ের ইঙ্গিত দিলেও উইকেটে থিঁতু হতে পারেননি মিলিন্দা সিরিবর্ধনে (২২)। মুস্তাফিজুর রহমানের বলে শুভাগতের দ্বিতীয় ক্যাচ হন তিনি। মাশরাফি তার দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসে প্রথম বলে উইকেট পান। ৩১ রানে ডিপ মিডউইকেটে মাহমুদউল্লাহর ক্যাচ হন সাচিথ পাথিরানা। পথ হারানো লঙ্কানরা তাদের অষ্টম উইকেট হারায় মুস্তাফিজের ওভারে। সুরাঙ্গা লাকমলকে ৮ রানে সাব্বির রহমানের ক্যাচ বানান এ বাঁহাতি পেসার। থিসারা পেরেরার সঙ্গে ছোট্ট একটা প্রতিরোধ গড়েছিলেন লাকশান সান্দাকান। যদিও আগেই সব হারানো শ্রীলঙ্কা তাকেও হারায় রান আউটে। দলীয় স্কোর তখন ৯ উইকেটে ২৩২। স্কোরে আর ২ রান যোগ হতেই স্বাগতিকরা হয়ে যায় অলআউট। শেষ দিকে ঝড় তুলে রান অতদূর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া পেরেরা বড় শট খেলতে গিয়ে মুস্তাফিজুর রহমানের বলে ধরা পড়েন মাহমুদউল্লাহ হাতে। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে এই অলরাউন্ডার করেছেন ৫৫ রান।

দুর্দান্ত বোলিংয়ে বাংলাদেশের সব বোলারই সফল। উইকেটের দিক থেকে এগিয়ে মুস্তাফিজ। রান একটু বেশি খরচ করলেও এই পেসার ৫৬ রানে নিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। এছাড়া ২টি করে উইকেট নিয়েছেন মাশরাফি ও মিরাজ।

এর আগে টস হেরে বাংলাদেশ ব্যাট করেছিল। শুধু সৌম্য সরকার ও মুশফিকুর রহিমকে হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়। দুই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যথতা কিন্তু গ্রাস করেনি বাংলাদেশকে। কারণ সাব্বির রহমানের মারকুটে ইনিংসের পর তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানের চমৎকার ব্যাটিংয়ে দাপট দেখিয়েছে সফরকারীরা। তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কাকে ৩২৫ রানের টার্গেট দিয়েছে বাংলাদেশ।

এক প্রান্ত আগলে ধরে রেখেছিলেন তামিম। সৌম্য মাত্র ১০ রানে আউট হলে ভাঙে ২৯ রানের উদ্বোধনী জুটি। সুরাঙ্গা লাকমলের বলে দিনেশ চান্ডিমালের গ্লাভসে ধরা পড়েন সৌম্য। এর পর সাব্বির ও তামিমের দাপুটে ব্যাটিং। মাত্র ১৬.৫ ওভারে ৯০ রানের জুটি গড়েন তারা। সাব্বির মাত্র ৪৮ বলে চতুর্থ হাফসেঞ্চুরি পান।

কিন্তু পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি সাব্বির। ডানহাতি এ ব্যাটসম্যানকে উপুল থারাঙ্গার দুর্দান্ত ক্যাচ বানান আসেলা গুনারত্নে। ৫৬ বলে ১০ চারে ৫৪ রান করেন তিনি। মাঠে নেমেই মাত্র দ্বিতীয় বল খেলতেই ১ রানে লাকশান সান্দাকানকে ফিরতি ক্যাচ দেন মুশফিক।

চতুর্থ জুটিতে শতাধিক রান করার পথে তামিম পেয়ে যান ক্যারিয়ারের অষ্টম শতক। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করতে তিনি বল খেলেন ১২৭টি। অন্য প্রান্তে সাকিব ছিলেন দাপুটে। ৬১ বলে ৩৩তম হাফসেঞ্চুরি করার পর ধৈর্য ধরে রাখতে পারেননি বাঁহাতি অলরাউন্ডার। ৭১ বলে চারটি চার ও এক ছয়ে ৭২ রানে লাকমলের শিকার হন সাকিব। ভাঙে ১৪৪ রানের শক্ত জুটি।

৪৮তম ওভারের পঞ্চম বলে থামতে হয় তামিমকে। ততক্ষণে ১৫ চার ও ১ ছয়ে ইনিংস সেরা ১২৭ রান করেন এ ওপেনার। লাহিরু কুমারার বলে গুনাতিলাকার শিকার হন তিনি। আগের বলেই মিলিন্দা সিরিবর্দনে ক্যাচ ধরতে না পারায় ছয় হয় তামিমের।

মাহমুদউল্লাহ ও মোসাদ্দেক হোসেন শেষ দুই ওভারে রানের গতি বাড়ান। মাত্র ২.১ ওভারে তারা অপরাজিত ৩৫ রানের জুটি গড়েন। স্কোরবোর্ডে জমা পড়ে ৫ উইকেটে ৩২৪ রান। শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এটা যে কোনও দলের চতুর্থ সর্বোচ্চ। মোসাদ্দেক ৯ বলে ২৪ ও মাহমুদউল্লাহ ৭ বলে ১১ রানে অপরাজিত ছিলেন।

ঢাকা জার্নাল, মার্চ ২৫, ২০১৭,

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.