নারায়ণগঞ্জের অভিজ্ঞতায় সুষ্ঠু ভোটে ৫ সুপারিশ

জানুয়ারি ৬, ২০১৭

ঢাকা জার্নাল : ভোটের আগে ব‌্যালটে অবৈধ সিল মারা, ভোটের দিন সহিংসতা রোধ, নির্বাচনকে ঝুঁকিমুক্ত ও ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করতে পাঁচ দফা সুপারিশ করেছেন নারায়ণগঞ্জের রিটার্নিং কর্মকর্তা।
ভোটের আগের রাতে সবার কেন্দ্রে অবস্থান না করা, সকাল ১০টায় ভোট শুরু করা, নিরাপত্তা সদস‌্যদের দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করে তাদের দিয়েই কেন্দ্র প্রস্তুত করা এবং ভোটের দিন ভোটার স্লিপ দেওয়া বন্ধ রাখার সুপারিশ করেছেন তিনি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কাছে বৃহস্পতিবার এ সুপারিশ পেশ করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান তালুকদার।

সিইসির একান্ত সচিব একেএম মাজহারুল ইসলাম বলেন, “এ সংক্রান্ত লিখিত একটি সুপারিশ জামা দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।”

বর্তমান ইসির সময়ে ইউনিয়ন, উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে সহিংসতা আর গোলযোগের পর প্রথমবারের মত দলীয় প্রতীকে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন ঘিরেও অনেকের শঙ্কা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ২২ ডিসেম্বর শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু ভোটের আয়োজন করতে পেরে শেষ বেলায় পর্যবেক্ষকদের বাহবা পেয়েছে কমিশন।

ইসির উপ-সচিব নুরুজ্জামান বলেন, “নারায়ণগঞ্জে আমরা একটা দৃষ্টান্তমূলক নির্বাচন করতে পেরেছি। এ অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগাতে হবে। নির্বাচন নিয়ে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের ঝুঁকি কমাতে হবে এবং তার পথ খুঁজতে হবে। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে ভবিষ‌্যতের জন‌্য আমি কিছু সুপারিশ রেখেছি।”

বাংলাদেশের রীতি অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন ভোটের সরঞ্জাম নির্বাচনী এলাকায় পাঠানোর পর নির্বাচনের আগের দিন তা কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়। আগের দিনই সব প্রস্তুতি শেষ করে রাতে কেন্দ্রে থাকেন কর্মকর্তারা। পরদিন সকাল ৮টায় ভোট শুরু হয়, চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।

এ রীতিতে পরিবর্তন আনার সুপারিশ করেছেন নুরুজ্জামান।

ভোটগ্রহণের সময়: সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা ভোটগ্রহণ করতে হবে।

রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, আগের চেয়ে ভোটগ্রহণের সময় দুই ঘণ্টা কমলে তা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনে কেন্দ্র ও কক্ষ বাড়ানো যায়।

স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে ২৫০ জন ভোটারের জন্য একটি ভোটকক্ষ এবং প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে কমপক্ষে দুটি মার্কিং প্লেস (ব্যালটে সিল দেওয়ার গোপন স্থান) করলেই হবে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাররা একটি মাত্র ব্যালট ব্যবহার করেন, ফলে সেখানে অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন নাই।

কেন্দ্রের প্রস্তুতি: সবাই নয়, ভোটের আগের দিন কেন্দ্রে যাবেন ২/৩ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা। ব্যালট পেপার ছাড়া সব মালামাল তারা নিয়ে যাবেন এবং কেন্দ্র প্রস্তুত করবেন। রাতে তারা কেন্দ্রে থাকবেন।

নুরুজ্জামান বলছেন, ভোটের সময় পিছিয়ে দেওয়ায় প্রিজাইডিং অফিসার নিরাপত্তা বাহিনীসহ ব্যালট পেপার নিয়ে ভোটগ্রহণের দিন সকাল ৯টার মধ্যে কেন্দ্রে পৌঁছাবেন।

সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসাররাও ভোটের দিন সকাল ৯টার মধ‌্যে যার যার কেন্দ্রে পৌঁছে দ্রুত ভোট কক্ষের দায়িত্ব বুঝে নেবেন।

আগের রাতে সবাই ভোটকেন্দ্রে নয়: এ ব‌্যবস্থা চালু হলে ব্যালট পেপার ছিনতাই বা অবৈধভাবে সিল মারার ঝুঁকি থাকবে না। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা রাত জাগার ক্লান্তি থেকে রেহাই পাবেন। নির্বাচনী সহিংসতা কমবে।

এর ব‌্যাখ‌্যায় ইসির উপ সচিব বলেন, ভোটের আগের রাতে নির্বাচনী কর্মকর্তা কেন্দ্রে না থাকলে ‘দুর্বৃত্তরাও কু-পরিকল্পনা থেকে বিরত থাকবে’। আইন–শৃঙ্খলা বাহিনীকে রাত জেগে কেন্দ্র পাহারা দিতে হবে না, রাত জাগার ক্লান্তিতে ভুগতে হবে না।

“তাতে ভোটের দিন আইন-শৃঙ্খল বাহিনীর সদস্যদের শারীরিক সক্ষমতা ও মনোবল দৃঢ় থাকবে। ভোটের দিন কেউ কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট ছিনতাইয়ের সাহস পাবে না। ভোটকেন্দ্রে আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভালো দেখলে ভোটারদের মধ্যেও উৎসাহ ও সাহস বাড়বে, অন‌্যদিকে দুর্বৃত্তরা দুর্বল হতে থাকবে।”

নিরাপত্তা বাহিনীর দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করা: ভোটকেন্দ্রে একটিমাত্র প্রবেশ বা বের হওয়ার পথ থাকবে। সেখানে থাকবে তল্লাশির কড়া ব্যবস্থা। অনুমোদিত ব্যক্তি ছাড়া কেউ ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে পারবে না।

নুরুজ্জামান বলছেন, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) নির্বাচন বিধিমালা, ২০১০ এর ৮৪ বিধির আদলে ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত বাহিনীগুলোর দায়িত্ব বণ্টন করে বিধি তৈরি করতে হবে। দায়িত্বে গাফিলতির জন্য শাস্তির ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।

ভোটার স্লিপ: ভোট দেওয়ার জন্য ভোটারদের ক্রমিক নম্বর ও ভোটকেন্দ্রের নাম জানা জরুরি। আইটি শাখা থেকে মোবাইলে এসএমএস -এর মাধ্যমে ভোটারকে এই তথ্য দিয়ে কাজটি সহজ করতে হবে।
নারায়ণগঞ্জের রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, এ ব‌্যবস্থা চালু করা গেলে ভোটের দিন কেন্দ্রের সামনে ভোটার স্লিপ দেওয়ার কাউন্টার থাকবে না। কাউন্টারে ভোটার স্লিপ দেওয়ার সময় প্রার্থীর লোকদের টানা-হেঁচড়া করার প্রবণতা কমবে। ভোটকেন্দ্রের বাইরে জটলা এড়ানোও সহজ হবে। তাতে সহিংসতার ঝুঁকি কমে আসবে।

বর্তমান ইসির অধীনে বিএনপি’র বর্জনের মুখে ব‌্যাপক সহিংসতায় ৫ জানুয়ারির ভোট হয় ২০১৪ সালে। এরপর স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলো অনিয়ম-সহিংসতার অভিযোগে বিদ্ধ।

ফেব্রুয়ারি প্রথমার্ধ্বে বর্তমান ইসি বিদায় নিচ্ছে। এ সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করে আগামী কমিশনের বাস্তবায়নের জন‌্য রেখে যেতে পারেন তারা। সূত্র- বিডিনিউজ।

ঢাকা জার্নাল, জানুয়ারি ৬, ২০১৭।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.