উড়ালসড়কে রক্তাক্ত মেয়েটি

জানুয়ারি ৬, ২০১৭

ঢাকা জার্নাল : উড়ালসড়কের ওপর মেয়েটির মাথা দিয়ে রক্ত ঝরছে। মুখ ভিজে যাচ্ছে রক্তে। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছেন না। এই দৃশ্য দেখেও কয়েকজন চলে গেলেন। তবে কয়েকজন পথচারী তাঁকে উদ্ধার করলেন। তাঁদের সাহায্যের আবেদনে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশা থামল। দুই যাত্রী নেমে মেয়েটির জন্য অটোরিকশাটি ছেড়ে দিলেন। আহত মেয়েটিকে নিয়ে অটোরিকশা ছোটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দিকে।

শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার মেয়র হানিফ উড়ালসড়কের সায়েদাবাদ প্রান্তে এ ঘটনা ঘটে।

মেয়েটির সঙ্গে থাকা ভাই দিদার হোসেন জানালেন, তাঁর বোনের নাম আফসানা আক্তার (২৫)। উড়ালসড়কের ওপর বাস থেকে নেমে আরেক পাশে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি।

উড়ালসড়কের নিরাপত্তারক্ষী মোহাম্মদ মিলন জানান, মেয়েটিকে একটি মোটরসাইকেল ধাক্কা দিয়েছে।

কয়েকজন যাত্রী ও চালক জানালেন, এই উড়ালসড়কের ওপর দুর্ঘটনা নতুন কিছু নয়। উড়ালসড়কের যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ ও রাজধানী সুপার মার্কেটের প্রান্তগুলোতে বাস বা অন্য গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানো–নামানো হয়। যাত্রাবাড়ীতে নিচের রাস্তা থেকে ওপরে পথচারী ওঠানো–নামানোর জন্য সিঁড়িও সংযুক্ত করা হয়েছে। উড়ালসড়কের ওপর দিয়ে লোকজনের চলাচলের কারণে চালক-পথচারী উভয়ই বিপদে পড়েন।

দুর্ঘটনায় আহত আফসানাকে অটোরিকশা ছেড়ে দিয়ে সাহায্য করেছিলেন জামাল খান ও নূর মোহাম্মদ। তাঁরা দোলাইরপাড়ে পুরোনো মালামাল বিক্রি করে অটোরিকশায় করে মোহাম্মদপুর যাচ্ছিলেন।

অটোরিকশা ছেড়ে দেওয়ার পর জামাল খান ও নূর মোহাম্মদকে এগিয়ে দিতে মোটরসাইকেলে তুলে নিই। নিমতলী নামার পথে আরেকটি দুর্ঘটনা চোখে পড়ে। একটি মাইক্রোবাস দুমড়েমুচড়ে দিয়েছে একটি প্রাইভেট কারকে।

জামাল খান বললেন, এই উড়ালসড়কে অনেক দুর্ঘটনা দেখেছেন তিনি। এর মধ্যে দোলাইরপাড়ের দুই ভাই মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারালে মারা যান।

যাত্রাবাড়ী থানা-পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,  এই উড়ালসড়কে গত দুই বছরে অন্তত মোটরসাইকেলের ১০ জন আরোহী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।

আহত লোকজনের একজন রাজধানীর কাঁটাবনের মোটরসাইকেল মেকানিক মোহাম্মদ ইউনুস। তাঁর ভাষ্য, উড়ালসড়কের কয়েক জায়গায় সড়কের সমান্তরালে কংক্রিটের সংযোগস্থলগুলো মোড়ানো হয়েছে ইস্পাতের পাত দিয়ে। একে ‘এক্সপানশন জয়েন্ট’ বলা হচ্ছে। এই জোড়ায় স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ফাঁক থাকায় সেখানে মোটরসাইকেলের চাকা আটকে দুর্ঘটনা ঘটে।

মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, ‘আমি ওই জায়গা দিয়ে যাওয়ার সময় মনে হইল চাক্কাডা পিছলাইয়া গেল। আহত হইয়া কয়েক মাস বাসায় থাকলাম।’

ইউনুস জানান, এই উড়ালসড়কে একইভাবে দুর্ঘটনায় পড়া কয়েকটি মোটরসাইকেল তিনি তাঁর দোকানেই ঠিক করেছেন।

২০১৩ সালের অক্টোবরে চালু হওয়া এই উড়ালসড়ক দিয়ে গুলিস্তান থেকে শনির আখড়া ও পোস্তগোলা পর্যন্ত যাতায়াত করা যায়। চার লেনের উড়ালসড়কে উঠতে ছয়টি এবং বের হতে সাতটি পথ রয়েছে। উড়ালসড়কের ওপর এসব পথে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।

উড়ালসড়কে থাকা এই জোড়াগুলোর ফাঁকে মোটরসাইকেলের চাকা আটকে দুর্ঘটনা ঘটছে। জানতে চাইলে যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিসুর রহমান  বলেন, ‘ফ্লাইওভারে মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাও হচ্ছে। গাড়ির প্রচণ্ড গতি দুর্ঘটনার একটি কারণ।’

উড়ালসড়কের ওপরে যাত্রী ওঠানো-নামানো করার বিষয়ে জানতে চাইলে আনিসুর রহমান বলেন, উড়ালসড়কের ওপর যাত্রী ওঠানো-নামানো করানো ঠিক কি না, সে সম্পর্কে বলা তাঁর উচিত হবে না।

দুর্ঘটনায় আহত আফসানার সবশেষ অবস্থা সম্পর্কে দুপুরের দিকে জানতে চাইলে ভাই দিদার হোসেন বলেন, তাঁর বোনের মাথায় সেলাই দেওয়া হয়েছে। রক্তপাত বন্ধ হয়েছে। কিন্তু তাঁর পা ভেঙে গেছে। দ্রুত অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন চিকিৎসকেরা। এখন সেই প্রস্তুতি চলছে। সূত্র প্রথম আলো।

ঢাকা জার্নাল, জানুয়ারি ৬, ২০১৭।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.