ট্রাইব্যুনাল সরানো সমীচীন হবে না

ডিসেম্বর ২৯, ২০১৬

ঢাকা জার্নাল: আইন মন্ত্রণালয় আবারও বলেছে, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে পুরোনো হাইকোর্ট ভবনে স্থাপিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সরানো সমীচীন হবে না। এটা সরালে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হবে এবং তা সর্বজনগ্রাহ্য হবে না বরং সুপ্রিম কোর্ট দেশবাসীর কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

এ জন্য এই ভবনটি সুপ্রিম কোর্টের অনুকূলে দখল হস্তান্তরের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে আবারও সুপ্রিম কোর্টের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে চিঠি দিয়ে এ অনুরোধ করা হয়। এর আগে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ এই ভবন থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সরিয়ে নিতে আইন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিল। ওই চিঠিতে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পুরোনো হাইকোর্ট ভবনটি (ট্রাইব্যুনাল) হস্তান্তরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়।

এর আগে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে পুরোনো হাইকোর্ট ভবনটি (ট্রাইব্যুনাল) হস্তান্তরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। তখনো আইন মন্ত্রণালয় বিষয়টি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছিল।

এবারও আইন মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়। চিঠিতে বলা হয়, পুরোনো হাইকোর্ট ভবনটি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক স্থাপনা। এ ভবনটি পূর্ব বাংলা ও আসাম প্রদেশের গভর্নরের সরকারি বাসভবন হিসেবে নির্মাণ করা হয়। পরে এ ভবনটি পূর্ব পাকিস্তানের হাইকোর্টে রূপান্তর করা হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় সংঘটিত অপরাধ, যেমন যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা, ধর্ষণ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধসহ অন্যান্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারকাজ পরিচালনার জন্য বর্তমান সরকার সিদ্ধান্ত নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় অন্য কোথাও নিরাপদ স্থাপনা না পাওয়ায় সরকার শেষ পর্যন্ত এই ভবনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হিসেবে ব্যবহার করছে। ২০০৯ সালে এ ভবনের একটি অংশ আইন কমিশন ও অপর অংশে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। আইন কমিশন ও জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের অফিস ১৫ কলেজ রোডে স্থানান্তর করে ভবনটিতে ট্রাইব্যুনাল হিসেবে ব্যবহারের উপযোগী করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারকাজ করা হয়। ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ শুরুর পর অনেক কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারকাজ সম্পন্ন হয়। সে কারণে ভবনটির ঐতিহ্য ও গুরুত্ব বহুগুণে বেড়েছে। দেশের জনগণ চায়, ঐতিহাসিক এ ভবনটির মর্যাদা সমুন্নত রেখে এই ভবনেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ অব্যাহত থাকুক।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি বর্তমান ভবন থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সরানোর উদ্যোগের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সংগঠনের নেতারা এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানান।

ঢাকা জার্নাল, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.