আজ বীরের জাতি হিসাবে আত্মপ্রকাশের দিন

ডিসেম্বর ১৬, ২০১৬

ঢাকা জার্নাল : আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। আজ জয় বাংলা শ্লোগানে মুখরিত হওয়ার দিন। সেই সঙ্গে দেশকে পরাধীনতার গ্লানিমুক্ত করতে মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ উৎসর্গ করা বীর সন্তান, লাখো শহীদদের স্মরণ করবার দিন। আজকের দিনেই পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যূদয় ঘটেছিল। বাঙালী বীরের জাতি হিসাবে বিশ্বে আত্মপ্রকাশ করেছিল।

১৯৭১ সালের আজকের দিনেই মুক্তিকামী লড়াকু বাঙালির কাছে পরাজয় মেনে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। সেই থেকে ১৬ ডিসেম্বর বাঙালী বিজয় দিবস হিসাবে পালন করে আসছে। ইতিহাসের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পর এই দিনে রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘যার যা কিছু আছে’ তা নিয়ে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ পরে ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন তিনি। তবে তার আগেই আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধু।

বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালিরা অস্ত্র হাতে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশী ভারত সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছিল বাংলাদেশকে। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে ৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে বাঙালি ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতার লাল সূর্য।

দিবসটি পালন শুরু হবে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিনের প্রথম প্রহরে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ঢল নামবে জনতার। বিনম্র শ্রদ্ধায় জাতি লাখো শহীদের প্রতি নিবেদন করবে শ্রদ্ধার্ঘ্য। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠের ভাষণ আর মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণাদায়ী গানে আকাশ-বাতাস হবে মুখরিত।

এবারের বিজয় দিবস পালিত হবে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর আর বিচার কাজ অব্যাহত থাকার স্বস্তি নিয়ে।

বিজয় দিবস সরকারি ছুটির দিন। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোর প্রধান সড়ক জাতীয় পতাকায় সাজবে। রাতে গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় করা হবে আলোকসজ্জা। হাসপাতাল, কারাগার ও এতিমখানাগুলোতে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হবে। সংবাদপত্র বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করবে, বেতার ও টিভি চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করবে বিশেষ অনুষ্ঠান।

বিজয়ের ৪৫ বছরে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়েছে জাতি। কখনো সামনে এগিয়েছে, আবার পিছিয়েছে নানা রাজনৈতিক টানাপোড়েনে। বিলম্বে হলেও শুরু হয়েছে ইতিহাসের দায়-মোচনের প্রচেষ্টা। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচার সম্পন্ন হয়েছে, চলছে একাত্তরের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। অর্থনৈতিক-সামাজিক ক্ষেত্রে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। চলছে মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উন্নত, সমৃদ্ধ দেশের পথে এগিয়ে চলার নিরন্তর সংগ্রাম।

কর্মসূচি: বরাবরের মতো এবারও প্রথম প্রহরে ৩১বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে বিজয় দিবসের সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে-সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে একাত্তরের শহীদদের শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় সেনাবাহিনীর আমন্ত্রিত সদস্যরা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মুক্তিযুদ্ধের শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানাবেন। সকাল ১০টায় তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর সংলগ্ন জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম ভিত্তিক যান্ত্রিক বহরের প্রদর্শনী হবে। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে সালাম গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।

বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করবে।

বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হবে এবং এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, সরকারি শিশুসদনসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।

বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস সমূহে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে কর্মসূচি পালন করা হবে।

এছাড়া আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ, সিপিবি, ওয়াকার্স পার্টি, গণফোরাম সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ রাজধানীর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করবে।

বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের তিন দিনব্যাপি কর্মসূচি রয়েছে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারাদেশে সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ৬টা ৩৪ মিনিটে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন, সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল হবে। বেলা তিনটায় বিজয় শোভাযাত্রা সহকারে পাক হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থান ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমবেত হয়ে শিখা চিরন্তনে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর অভিমুখে বিজয় র‌্যালি করবে আওয়ামী লীগ।

ঢাকা জার্নাল, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.