ভিভা ফিদেল: নয় দিনের রাষ্ট্রীয় শোকে কিউবা

নভেম্বর ২৮, ২০১৬

castroঢাকা জার্নাল : কারও হাতে বিপ্লবের লাল, কারও হাতে কিউবার চার রঙা পতাকা; কিউবার রাস্তায় সমবেত হাজারও কণ্ঠে একই স্লোগান- ‘আমিই ফিদেল, ফিদেলের মৃত‌্যু নাই’।

কিংবদন্তি বিপ্লবী নেতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রোর মৃত‌্যুতে নয় দিনের রাষ্ট্রীয় শোক চলছে কিউবায়।

সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে অর্ধশতক কাল দেশ শাসনের পর ২০০৮ সালে ক্ষমতা ছোট ভাই রাউলকে ছেড়ে দিয়ে অবসর কাটাচ্ছিলেন ফিদেল।

কয়েক প্রজন্ম ধরে ফিদেল কাস্ত্রো ছিলেন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র কিউবার রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে। কট্টর পুঁজিবাদী দেশগুলোর কাছে তার পরিচয় ‘একনায়ক’ হলেও বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর কাছে তিনি ছিলেন ‘আস্থার প্রতীক’, অনুসারীদের কাছে ‘এল কমান্দান্তে’।

কিউবার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও ছোট ভাই রাউল ক‌্যাস্ত্রো শুক্রবার ফিদেলের মৃত‌্যুর কথা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ঘোষণা করেন।

ফিদেল ক‌্যাস্ত্রোর ইচ্ছা অনুযায়ী তার মরদেহ শনিবার পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। আগামী ৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় শেষকৃত‌্যের আগ পর্য সেই দেহভষ্ম কিউবার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

শনিবার থেকেই কিউবায় শুরু হয়েছে নয় দিনের রাষ্ট্রীয় শোক। দেশজুড়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে সব ধরনের শো, কনসার্ট। পানশালায় অ‌্যালকোহল বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে।

৯০ বছর বয়সে চিরবিদায় নেওয়া এই নেতার সম্মানে রাজধানী হাভানার রেভ‌্যুলেশন স্কয়ার এবং পূর্বাঞ্চলীয় শহর সান্তিয়াগোতে বিশাল সমাবেশের পরিকল্পনা করেছে দেশটির সরকার।

ফিদেলের মৃত‌্যুতে জানাতে কিউবার কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র দৈনিক গ্রানমা ও যুব কমিউনিস্ট পার্টির ইউভেনতুদ রেবেলডের শিরোনামের রং বদলে ফেলা হয়েছে। গ্রানমার লাল আর ইউভেনতুদ রেবেলডের নীল শিরোনাম ধারণ করেছে শোকের কালো।

মঙ্গলবার সন্ধ‌্যায় হাভানার রেভ‌্যুলেশন স্কয়ারে ফিদেল ক‌্যাস্ত্রোর স্মরণানুষ্ঠান হওয়ার কথা। বিভিন্ন রাষ্ট্রের বিশিষ্ট ব‌্যক্তিদের তাতে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।

হাভানা বিশ্ববিদ‌্যালয়ে শত শত শিক্ষার্থীকে শনিবার কিউবার বিশাল পতাকা দুলিয়ে ‘ভিভা ফিদেল’, ‘ভিভা রাউল’ শ্লোগান দিতে দেখা যায়। ফিদেল এই বিশ্ববিদ‌্যালয়েরই ছাত্র ছিলেন।

রাজনীতির পর ক‌্যাস্ত্রোর প্রিয় ছিল বেসবল খেলা। নয়দিন ধরে রাষ্ট্রীয় শোক চলার সময় সব পর্যায়ের বেসবল খেলাও বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা করেছে দেশটির বেসবল ফেডারেশন।

কিউবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন, স্টুডেন্ট অ‌্যাসোসিয়েশন এবং উইমেন্স ফেডারেশন ফিদেলের স্মরণে ছোট কয়েকটি সভা করেছে। শিক্ষার্থীদের শোক সমাবেশ বাদ দিলে হাভানার জীবন এখন অনেকটাই চুপচাপ। সেনাবাহিনী বা পুলিশ সদস‌্যদের উপস্থিতিও তেমনভাবে চোখে পড়েনি।

২০০৮ সালে ক্ষমতা ছোট ভাই রাউলকে ছেড়ে দিয়ে অবসর কাটাচ্ছিলেন ফিদেল। কিউবার অধিকাংশ মানুষ তাকে দেখত তাদের দেশ তাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার নায়ক হিসেবে।

হাভানার বাসিন্দা রাফায়েল উরবি বলেন, “আমরা কেবল গরিব ছিলাম না, আমরা ছিলাম তুচ্ছ। আরপর ফিদেল এলেন, এল বিপ্লব। তিনি আমাদের মানবিক জীবন দিলেন। আমার সবকিছুই তার জন‌্য।”

সরকারি একটি প্রিন্টিং প্রেসের এই কর্মীর কাছে নিজের মা, সন্তান আর বাবার পরই ফিদেলের স্থান।

অন‌্যদিকে বিরোধীদের চোখে ফিদেল ছিলেন ভিন্নমত দলনকারী। তার মৃত‌্যুর খবরে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার মিয়ামিতে উল্লাস করেছেন নির্বাসিত কিউবানরা।

বাংলাদেশসহ স্বাধীনতাকামী বহু দেশের পক্ষে দাঁড়িয়ে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকারীদের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন ফিদেল। বাংলাদেশ সরকার অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিন বছর আগে তাকে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননায়’ ভূষিত করে।

ঢাকা জার্নাল, নভেম্বর ২৭, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.