চিনিকল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ধান বুঝে নিলেন সাঁওতালরা

নভেম্বর ২৪, ২০১৬

23ঢাকা জার্নাল: গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের জমিতে সাঁওতালদের রোপন করা ধান কেটে তাদের বুঝিয়ে দিয়েছে চিনিকল কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুই মণ ওজনের ২৬ বস্তা ধান তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় চিনিকল কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে (কম্বাইন্ড হারভেস্টার) মেশিন দিয়ে ধান কাটা শুরু করে। বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রায় আড়াই একর জমির ধান কাটা সম্পন্ন হয়।
সকালে ধান কাটার সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শফিকুল ইসলাম, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল হান্নান, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আহম্মদ আলী, গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি সুব্রত কুমার সরকার, বাংলাদেশ চিনি খাদ্য শিল্প সংস্থার প্রতিনিধিসহ চিনিকলের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ওই এলাকায় সম্ভাব্য গোলযোগ এড়াতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশও মোতায়েন করা হয়। কিন্তু ধান কাটা নিয়ে প্রথমদিকে সাঁওতালদের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ ও উত্তেজনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তারা ওই ধান মিল কতৃপক্ষের কাছ থেকে গ্রহণ করেন। পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেন গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক আব্দুস সামাদ।
চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আব্দুল আওয়াল জানান, ‘মেশিন দিয়ে ধান কাটা ও মাড়াই করার পর বস্তাজাত করে সাঁওতালদের দেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার দুই মণ ওজনের ২৬ বস্তা ধান সাঁওতালদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘বারনা বাস টুডু, আনছেন হেমভ্রম, সুরেন টুডু ও সুশিল মার্ডিসহ ১৭ জনের একটি সাঁওতাল প্রতিনিধির কাছে এই ধান বুঝে দেওয়া হয়।’
সাহেবগঞ্জ-বাগদা ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সদস্য বার্ণাবাস টুডু জানান, ধান কাটা শেষে সন্ধ্যায় ২৬ বস্তা ধান মিল কতৃপক্ষের কাছ থেকে বুঝে পেয়েছি। তবে ধানগুলো এখনও পরিমাপ করে দেখা হয়নি।’ তিনি আরও জানান, ‘ধান বুঝে নিলেও তাদের দাবি আদায়ের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল হান্নান জানান, হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নে ইতোপূর্বে একাধিকবার সাঁওতালদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তালিকা প্রনয়নের মাধ্যমে প্রশাসনের সহযোগিতায় ধান কেটে নেওয়ার জন্য তাদের বলা হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে তাদের পক্ষ থেকে কোনও সাড়া মেলেনি। বৃহস্পতিবার সকালেও আদিবাসী সঙ্গে ধান কাটার বিয়য়ে কথা বলা হয়। তারা তখন ধান কেটে নেওয়ার জন্য দুটি শর্ত আরোপ করেন। শর্তগুলো হচ্ছে-ইক্ষু খামার এলাকা জুড়ে বসানো কাটা তারের বেড়া তুলে ফেলতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো প্রত্যাহার করে নিতে হবে। যা সম্ভব না। এটা মিল কতৃপক্ষ ও আইনের বিষয়।

তিনি আরও জানান, পরিমাপ করে দেখা গেছে ৪৫ দশমিক ৫০ একর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩০ একর জমির ধান পেকে কাটার উপযোগী হয়েছে। বাকী জমির ধান কাটার উপযোগী হতে আট থেকে দশ দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ। তাই হাইকোর্ট নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রশাসনের উপস্থিতি মিল কতৃপক্ষ ৩০ একর জমির ধান কাটা শুরু করে।
ইউএনও মো. আব্দুল হান্নান আরও বলেন, ‘সকালে এ ধান গ্রহণে অস্বীকৃতি জানালেও সন্ধ্যায় সাওঁতালদের একটি প্রতিনিধি দল এসে ২৬ বস্তা ধান নিয়ে গেছে।’
মিল কর্তৃপক্ষ অধিগ্রহনের চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ এনে গত দুই বছর ধরে সাঁওতালরা তাদের বাপ-দাদার জমি ফেরত পাওয়ার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করার একপর্যায়ে চলতি বছরের ১ জুলাই সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারে বসতি স্থাপন করে। তারা ওই খামারের জমিতে চাষাবাদও করে। ৬ নভেম্বর তাদের উচ্ছেদ করা হয়। সাঁওতালরা খামারের মোট ১ হাজার ৮৪২ একর জমির মধ্যে প্রায় ১৩৫ একর জমিতে রোপা আমন ধান চাষ করেন। যার মধ্যে ৩০ একর জমির ধান পেকেছে। এগুলো কাটা হচ্ছে। ধান কাটা মেশিন দিয়ে ঘণ্টায় প্রায় এক বিঘা জমির ধান কাটা যায়।
প্রসঙ্গত, সাঁওতালদের চাষ করা ধান কাটার সুযোগ দিতে অথবা চিনিকল কর্তৃপক্ষ নিজেরাই ধান কেটে সাঁওতালদের দিয়ে আসবে বলে গত ১৭ নভেম্বর নির্দেশ দেন আদালত। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এবং বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন।
গত ৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের জমিতে আখ কাটাতে কেন্দ্র করে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ হয়। এতে ৯ পুলিশ তীরবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ হন চারজন সাঁওতাল। নিহত হন তিন সাঁওতাল। এছাড়া উভয়পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হন।

ঢাকা জার্নাল, নভেম্বর২৪, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.