শ্রমিকের পক্ষেই শেখ হাসিনা

মে ১, ২০১৬

Hasinaঢাকা জার্নাল: তৈরি পোশাক শ্রমিকদের বেতন বাড়াতে তার সরকারের উদ্যোগের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই বেতন বাড়ানোর জন্য তিনিই ছিলেন বার্গেইনিং এজেন্ট।

মহান মে দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

রোববার (১ মে) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আয়োজিত মে দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, যখন আলোচনা উঠলো। ত্রীপক্ষীয় বৈঠকে শ্রমিক নেতারা যা বলতে চেয়েছিলেন, তাদের থামিয়ে আমি বলেছিলাম, তোমরা থামো শ্রমিকদের জন্য আমি চাইবো। আমি চেয়েছি। আর আমার কথা মালিক পক্ষ রেখেছে। তাদের কিছু সুযোগ সুবিধা দিতে হয়েছে কিন্তু তারা কথা রেখেছেন। শ্রমিকরা আজ ন্যুনতম পাঁচ হাজার তিন শ’ টাকা মজুরি পাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের জন্য উন্নত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, শ্রমিক ভালো পরিবেশে কাজ করতে পারলে উৎপাদন বেশি হবে। আর শ্রমিকও মনের আনন্দে কাজ করতে পারবে।

মুনাফাতো মালিকই বেশি পাবেন, এই মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন এটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। আর শ্রমিকদেরও মনে রাখতে হবে তারা যে কারখানায় কাজ করছেন তা সুন্দর রাখার দায়িত্ব তাদের।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মনে রাখতে হবে এখান থেকেই আপনাদের জীবন জীবীকা। তাই কারখানার পরিবেশ যত ভালো থাকবে, যত ভালোভাবে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে চালাবেন ততই উন্নয়ন হবে। তার সুবিধা আপনারাও ভোগ করতে পারবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশেকে উন্নত করতে হলে নতুন নতুন শিল্পকারখানা চালু করতে হবে, শ্রমিকদের স্বার্থও দেখতে হবে। কারণ তাদের শ্রমেই তো দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। শ্রমিকদের মূল্য আওয়ামী লীগের কাছে অনেক বেশি।

বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে রমজান মাসেও আন্দোলনরত শ্রমিকদের হত্যা করা হয়। সারের দাবিতে আন্দোলন করা শ্রমিকরা লাশ হয়ে ঘরে ফিরতে হয়েছিলো। কিন্তু এখন দেশে সে অবস্থা নেই। দেশের শ্রমজীবী মানুষ এখন নিয়মিত বেতন-ভাতা, মজুরি পাচ্ছে কাজ করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যেমন অনেক বন্ধ কারখানা চালু করেছি, অনেক কারাখানার যন্ত্র পুরাতন হয়ে গেছে- সেগুলো দিয়ে ভালো উৎপাদন করা সম্ভব না। তাই সেগুলো চালু করতে যা যা করা দরকার আমরা করছি।

আমরা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার চেষ্টা করছি।

তবে টাকা থাকলেই যত্রতত্র জমি কিনে শিল্প গড়ে না তোলার জন্য মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে অন্তত একশো অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। সেখানে বিনিয়োগ করবেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি যেন শ্রমিকরা যুগের সাথে তার মিলিয়ে চলতে পারে।

আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে শ্রমিকদের জন্য আবাস করে দেওয়ার উদ্যোগের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, মাত্র ২ শতাংশ সার্ভিস চার্জ এর বিনিময়ে পোশাক শ্রমিকদের ঘর করে দেওয়া হবে।

শ্রমিক কল্যাণ ট্রাস্ট গঠনের কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমকেও আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। মাতৃত্বকালীন সময়ে ছুটি ও মজুরি নিশ্চিত করা হয়েছে। শ্রমিকদের মেধাবী সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য তিন লাখ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

প্রি প্রাইমারি থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনামূল্যে বই দেওয়া হচ্ছে। যার সুবিধা পাচ্ছে শ্রমজীবী মানুষ। আর কেউ যদি পিএইচডি করতে যায় সেখানেও শিক্ষা সহায়তা বৃত্তি দিচ্ছি।

শিল্পাঞ্চলে জলাধারসহ পরিবেশবান্ধব সব বিষয় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উৎপাদন বাড়াতে হলে মালিক শ্রমিকের সুসম্পর্ক থাকা উচিৎ। উৎপাদন বাড়লে সবচেয়ে বেশি লাভ তো মালিকরাই পাবেন। তাই আমরা চাইবো মালিক শ্রমিক সুসম্পর্ক বজায় থাকুক।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ব্যবসা করতে আসিনি। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। যে কারণে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রবাসে যে শ্রমিকরা যান, তাদের স্মার্টকার্ড দেওয়া হচ্ছে। বিদেশে গিয়ে তারা সঠিক মজুরি পাচ্ছে কিনা এগুলো দেখা হচ্ছে।

আগে এগুলো দেখা হতো না। কোনো রকমে পাঠিয়ে দিলেই ভাবা হতো অনেক বড় কাজ হয়েছে, বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, আমার কাছে দাবি করার দরকার নেই। আমি নিজেই জানি কি প্রয়োজন। সবাই সমান শ্রম দেবে এমন না। কিন্তু সবাইকে সমান সুখ নিশ্চিত করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বিজয়ী জাতি তাই মাথা উচু করে চলতে চাই। মাথা উচু করতে চলতে হলে একযোগে কাজ করতে হবে। আসুন আমরা এক সঙ্গে কাজ করি, জাতির পিতার ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তুলি।

দুনিয়ার মজদুরকে এক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন শেখ হাসিনা।

ঢাকা জার্নাল, মে ০১, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.