৩০ মার্চের মধ্যে রিভিউ না করলে ফাঁসি কার্যকর

মার্চ ১৬, ২০১৬

nujamiঢাকা জার্নাল: জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী তার ফাঁসির দণ্ডের প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায় পুর্নবিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে সময় পাচ্ছেন ১৫ দিন (৩০ মার্চ পর্যন্ত)। এ সময়ের মধ্যে রিভিউ আবেদন না করলে আইন অনুসারে দণ্ড কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

আসামিপক্ষ যদি রিভিউ করেন এবং এ আবেদন যদি খারিজ হয় সবশেষে ফাঁসির দড়ি থেকে বাঁচতে নিজামীর জন্য একমাত্র সুযোগ হিসেবে থাকবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়া।

মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) দেশের এ শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর আপিল মামলার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আগামীকাল (বুধবার ১৬ মার্চ) থেকে ১৫ দিন গণনা শুরু হয়ে যাবে। কালকের মধ্যে তিনি (নিজামী) রায়ের বিষয়ে অবগত হবেন। ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদন  করলে শুনানি হবে। আর যদি রিভিউ না করেন তাহলে আইন অনুসারে দণ্ড কার্যকর হবে। যেমনটি হয়েছিলো অন্যান্য রায়ের ক্ষেত্রে। আর কাদের মোল্লার রায়ে বিষয়টি পরিষ্কার করা আছে। রিভিউয়ের রায়ের ওপর ভিত্তি করে দণ্ড কার্যকর হবে। রিভিউ খারিজ হয়ে যদি ফাঁসি বহাল থাকে তাহলে বাকি থাকবে শুধু প্রাণভিক্ষা।

সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণার প্রায় আড়াই মাসের মাথায় এসে  পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ পায়। এ রায় লিখেছেন আপিল বিভাগের বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। লিখিত রায়ে সহমত পোষণ করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
রায়ে বলা হয়, আপিলকারী (নিজামী) ওই সময়ে ইসলামী ছাত্রসংঘের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। পাকিস্তানি বর্বরতার সব কিছু তিনি জানতেন। আর ইসলামী ছাত্রসংঘের লোকজনই আলবদরের নেতাকর্মী। তিনি (নিজামী) কর্মীদের উৎসাহ দিয়েছেন দেশবিরোধী কাজে। বিভিন্ন বক্তব্যে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের ‘দুষ্কৃতিকারী’, ‘ভারতের এজেন্ট’ ও ‘দেশের শত্রু’ বলে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তাসহ বুদ্ধিজীবীদের হত্যায় তার সংশ্লিষ্টতা ছিলো। এজন্য ট্রাইব্যুনাল তাকে যথাযথ শাস্তি দিয়েছেন।

মঙ্গলবার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর নিজামীর আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে গত ০৬ জানুয়ারি সংক্ষিপ্ত রায় প্রকাশের পর নিজামী রিভিউ আবেদন করবেন কি-না এ প্রশ্নের জবাবে তার প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছিলেন, আগেরগুলোতে (কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান, মুজাহিদ) রিভিউ করে ফল পাওয়া যায়নি। এখন এটাতে করা হবে কি-না সেটা মাওলানা সাহেব (নিজামী) জানেন। রায় পর‌্যালোচনা করে নিজামী যদি বলেন, তাহলে রিভিউ করা হবে।

পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মৃত্যুদণ্ড দেন আপিল বিভাগ। এর প্রায় আড়াই মাস পর ওই বছরেরই ০৫ ডিসেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন সর্বোচ্চ আদালত।

২০১৪ সালের ০৩ নভেম্বর জামায়াতের অপর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির দণ্ড বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। এর সাড়ে তিনমাস পর ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।

আর জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির দণ্ড গত বছরের ১৬ জুন বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। এর প্রায় সাড়ে তিন মাস পর ৩০ সেপ্টেম্বর তার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীর আপিল মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে একই বছরের ২৯ জুলাই। আর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পায় দুই মাস পরে মুজাহিদের সঙ্গে ৩০ সেপ্টেম্বর।

তারা সবাই চূড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে রিভিউ আবেদন করেন এবং প্রত্যেকের রিভিউ খারিজ হয়েছে। তবে সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদ ছাড়া অন্য দু’জন প্রাণভিক্ষা চাননি। কাদের মোল্লা-কামারুজ্জামানের রিভিউ খারিজের পর এবং সাকা-মুজাহিদের প্রাণভিক্ষা নাকচের পর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে সরকার।

০৬ জানুয়ারি সকালে বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ একাত্তরে গণহত্যা ও ধর্ষণের দায়ে আলবদর বাহিনীর সর্বোচ্চ নেতা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে সংক্ষিপ্ত আকারে চূড়ান্ত রায় দেন আপিল বিভাগ।

নিজামীকে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং হত্যা-গণহত্যা ও ধর্ষণসহ সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির প্রমাণিত ৮টি মানবতাবিরোধী অপরাধের মধ্যে ৪টিতে ফাঁসি ও ৪টিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে ৩টিতে ফাঁসি ও ২টিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। অন্য তিনটিতে চূড়ান্ত রায়ে দণ্ড থেকে খালাস পেয়েছেন নিজামী, যার মধ্যে একটিতে ফাঁসি ও দু’টিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ ছিল ট্রাইব্যুনালের রায়ে।

ঢাকা জার্নাল, মার্চ১৬, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.