শেষ হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বসন্ত উৎসব

মার্চ ১৬, ২০১৬

bosoঢাকা জার্নাল: দিনব্যাপী উৎসব। তবু শেষবেলা এসে মন কেমন করে! মনে হয়, এতো দ্রুত সময় ফুরিয়ে গেলো! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই বোধ হয়েছে মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) বসন্ত উৎসবের দিন।

সেই সকাল থেকে শুরু, দুপুর ও রাত অবধি তারা মেতেছিলো গানে-ছন্দে-নৃত্যে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কালচারাল সোসাইটির আয়োজনে প্রথমবার অনুষ্ঠিত হলো ‘বসন্ত উৎসব ১৪২২’। অনুষ্ঠানের যবনিকা টেনেছেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী বাপ্পা মজুমদার ও তার বন্ধুরা।

বসন্ত উৎসব ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে ছিলো তারুণ্যের পদচারণা। অনুষ্ঠান উপভোগ করতে দূর-দূরান্ত থেকে এসেছিলেন অনেকে। তাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন শেষভাগের তিন শিল্পী ও ব্যান্ড। তারা হলেন কিরণ চন্দ্র রায়, জলের গান এবং বাপ্পা মজুমদার অ্যান্ড ফ্রেন্ডস। এর আগে হয়ে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পরিবেশনাও উপভোগ করেন তারা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর মূলমঞ্চে বিকেল ৩টা থেকে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ঢাবি শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় মঞ্চে ছিলো ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, গম্ভীরা, গীতিনাট্য, নকশী কাঁথার মাঠের মঞ্চায়ন, মঞ্চ নাটক, পুঁথি পাঠ, জারী গান ও আবৃত্তিসহ লোকজ সংস্কৃতির বেশকিছু পরিবেশনা।

সাংস্কৃতিক পরিবেশনার পাশাপাশি মেলায় অাগত দর্শকের দৃষ্টি ও মনোযোগ কেড়েছে প্রাঙ্গণে সাজানো গ্রামীণ মেলা। এখানে ছিলো ফুড কর্ণার, চটপটি, ফুসকা, হাওয়াই মিঠাই, নানা ধরনের পিঠা, নাগরদোলা, বায়োস্কোপ, বানর খেলা, ফরচুন টেলার, ক্যারিকেচার ড্রয়িং, সাপের খেলা, মাটির তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র, মেয়েদের জন্য চুড়ি এবং মেহেদি কর্ণার।

‘রঙিলা রঙিলা রঙিলা রে/আমারে ছাড়িয়া বন্ধু কই রইলারে’ গান দিয়ে পরিবেশনা শুরু করেন কিরণ চন্দ্র রায়। দর্শক গ্যালারি ততোক্ষণে পূর্ণ। ঘড়ির কাটা ছুঁয়েছে সন্ধ্যা সাতটার ঘর। বরাবরের মতো তার পরিবেশনায় মুগ্ধ দর্শক। প্রচলিত ও অপ্রচলিত কয়েকটি লোকগানে দর্শক মাতিয়েছেন তিনি।

গানের ফাঁকে কথা বলেও আনন্দ দিয়েছেন কিরণ চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘…এখানে গান করতে সবসময় ভালো লাগে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হলো সংস্কৃতিচর্চার দারুণ এক জায়গা। এখানে আসি প্রাণের তাগিদে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রিয় ব্যান্ডের তালিকায় জলের গান আছে ওপরের দিকে। প্রিয় গায়েনদের গান শোনার জন্য দিনভর প্রতীক্ষা ছিলো সবার। অবশেষে মঞ্চে এলেন রাহুল আনন্দ, কনক আদিত্য ও ব্যান্ডের অন্য সদস্যরা। জলের গানের পরিবেশনা শুরু হলো ‘এমন যদি হতো/আমি পাখির মতো/উড়ে উড়ে বেড়াই সারাক্ষণ…’ গানটি দিয়ে। পুরো গানে কণ্ঠ মেলালো সবাই।

লোকগানের দারুণ উপস্থাপনা করে জনপ্রিয়তা পাওয়া জলের গানের প্রতিটি গান যেন একেকজন দর্শকের মনের কথা। সহজ আর সাবলীল মাটিগন্ধী সুরে বসন্তের গরম সন্ধ্যাটি যেন মুহূর্তে শীতল আর স্বর্গীয় হয়ে উঠলো! জলের গানের পরিবেশনায় ‘তুমি আমার পাশে বন্ধু হে’, ‘বকুল ফুল বকুল ফুল’ প্রভৃতি গানগুলো মল চত্বরে যেন নতুন মাত্রা পেয়েছিলো সবার কণ্ঠে।

পরিবেশনা শেষ করতে হবে, কারণ মঞ্চে আসার অপেক্ষায় আছেন বাপ্পা। জলের গানের ভোকালিস্ট রাহুল আনন্দ সান্ত্বনা দিলেন সবাইকে, ‘মঞ্চে না হয় আর একটি গান করি। আরও অনেক গান হবে মঞ্চের বাইরে…।’ এমন বক্তব্য দিয়ে শেষ গান পরিবেশন করলেন তারা।

এবার বাপ্পার পালা। যেন সারাদিনের অবসাদ মুছে দিতে এসেছেন প্রিয় শিল্পী। হলোও তা। বাপ্পার গান আর কথায় কখন যেন ফুরিয়ে গেলো শেষ প্রহরটি। ছয়টি গান করেছেন বাপ্পা। লোকগান নিয়ে সাজানো অ্যালবামের শিরোনাম গান ‘বেনানন্দ’ ছাড়া বাকি সব গানই সবার মুখস্থ।

পরিবেশনার ফাঁকে বাপ্পা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে তার জীবনের গুরুত্বপূ্র্ণ কিছু সময় কেটেছে। এখানে গান পরিবেশন করা তিনি বেশ উপভোগ করেন। প্রাণের টানেই এখানে আসেন বলেও জানালেন।

বাপ্পা একে একে গেয়ে শোনান তার হিট ট্র্যাক। বসন্ত উৎসবে প্রেম ও বিরহের সুর ছড়িয়েছেন জনপ্রিয় এই শিল্পী ও সংগীত পরিচালক। ‘দিন বাড়ি যায়’, ‘গাড়ি চলে না’, ‘বাজি’, ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর’ ‘পরী’ প্রভৃতি গানে উৎসব যেন পূর্ণতা পেলো। বাপ্পার গানের পর ফানুস ওড়ানোর মধ্য দিয়ে শেষ হয়

সকালে বসন্ত উৎসবে  উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন নাট্য ব্যক্তিত্ব আলী যাকের। আরও ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের মডারেটর সাবরিনা সুলতানা চৌধুরী, বসুন্ধরা গ্রুপের বসুন্ধরা পেপার মিলসের ব্র্যান্ড হেড সলিম উল্লাহ সেলিম, সংগঠনের সভাপতি ওয়াসেক সাজ্জাদ ও সাধারণ সম্পাদক আহসান রনি।

ঢাকা জার্নাল,মার্চ১৬, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.