প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি

মার্চ ৩০, ২০১৩

Sahabag-bg20130330071546ঢাকা জার্নাল: আমরণ অনশনের ১০০ ঘণ্টা পূর্তিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর খোলা চিঠি দেবে শহীদ রুমী স্কোয়াড-এর অনশনরত সদস্যরা। শনিবার বিকেল ৫টায় শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের কাছে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অনশনস্থলের পাশে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা ও অসুস্থতার কথা জানান শহীদ রুমী স্কোয়াড-এর মুখপাত্র সেঁজুতি শোণিত নদী।

এদিকে, অনশনরতদের মধ্যে আলিফ ও মানিক সূত্রধর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে মানিক সূত্রধরকে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে।

সেঁজুতি শোণিত নদী বলেন, “জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে আমরণ অনশনের ৯০তম ঘণ্টায় শাহবাগে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে ‘শহীদ রুমী স্কোয়াড’।

আর মাত্র ১০ ঘণ্টা পর আমাদের আমরণ অনশন ১০০ ঘণ্টায় পড়বে। তখন আমরা অনলাইনে প্রধানমন্ত্রী বরাবর খোলা চিঠি দেবো।” নদী বলেন, “খোলা চিঠি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যুদ্ধারপরাধী জঙ্গি দল জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধে সরকারের পদক্ষেপ কী হবে এবং কবে নাগাদ শুরু হবে, তা স্পষ্টভাবে জানতে চাওয়া হবে।”

তিনি বলেন, “আমরা আমাদের দাবিতে অনড় আছি এবং থাকবো। আমরা আমাদের দাবি অবিলম্বে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অনশন চলতেই থাকবে।”

সংবাদ সম্মেলনে শোণিতা নদী বলেন, “অনশনের কারণে আমাদের অনেকেরই শারীরিক অবস্থা খারাপ থেকে খারাপ হয়েছে। কিন্তু তার পরও কেউ মনোবল হারাননি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন চলতেই থাকবে।” তিনি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ সবার প্রতি যার যার অবস্থান থেকে এক ঘণ্টা অনশন কর্মসূচি পালন করতে বলেন।

নদী বলেন, “আপনারা যে যার জায়গা থেকে অন্তত এক ঘণ্টা কালো ব্যাজ ধারণ করে ‘প্রতীকী অনশন কর্মসূচি’ পালন করুন। কেউ যদি সশরীরে আমাদের কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করতে চান, তাহলে এখানে এসে অনশনে সরাসরি অংশ নিতে পারেন।”

তিনি বলেন, “যারা যার যার অবস্থান থেকে এক ঘণ্টা কালো ব্যাজ ধারণ করে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করবেন, তারা সেই সময়কার ছবি তুলে ফেসবুক পেইজ- ‘শহীদ রুমী স্কোয়াড’-এ ট্যাগ করে দিন।” নদী বলেন, “৩০ মার্চ থেকে কালো ব্যাজ ধারণ করে দেশের সব স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আমরা ১ ঘণ্টা প্রতীকী অনশন করে শহীদ রুমী স্কোয়াডের সঙ্গে সংহতি প্রকাশের আহ্বান জানাচ্ছি।”

গণজাগরণ মঞ্চের শনিবারের কর্মসূচি প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “গণজাগরণ মঞ্চ থেকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি-সব যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি ও জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে সংগৃহীত গণস্বাক্ষর জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে পেশের উদ্দেশে বিক্ষোভ-মিছিলে সব স্তরের ছাত্র-ছাত্রীদের যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে শহীদ রুমী স্কোয়াড। গণজাগরণ মঞ্চের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা ও সমর্থন আছে আমাদের।”

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে আমরণ অনশনের সমন্বয়ক সাদাত হোসেন নিলয় বলেন, “স্মারকলিপি দেওয়ার সময় জাগরণ মঞ্চের সমন্বয়ক ডা. ইমরান এইচ সরকারের হাতে আমাদের প্রাণ তুলে দেবো। দেখি, তিনি আমাদের জন্য কী বার্তা নিয়ে আসেন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে!” সেঁজুতি শোণিত নদী জানান, ২২ ফেব্রুয়ারি গণজাগরণ মঞ্চ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, আগামী ৩১ মার্চ স্পিকার বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হবে। আগামীকাল রোববার গণজাগরণ মঞ্চ থেকে প্রায় ৫০ লাখ স্বাক্ষর সম্বলিত স্মারকলিপি স্পিকার বরাবর দাখিল করা হবে। সেই কর্মসূচিতে সবাইকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনের শেষ করার আগে নদী বলেন, “রাষ্ট্রের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো দিক-নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত শহীদ রুমী স্কোয়াড-এর সবাই তাদের আমরণ অনশন চালিয়ে যেতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ রয়েছেন এবং থাকবেন!” এদিকে, শনিবার দুপুরের পর নতুন আরও একজন যোগ দেওয়ায় শহীদ রুমী স্কোয়াড-এর আমরণ অনশনকারীর সংখ্যা ২০ জনে উন্নীত হয়েছে।

এ ছাড়া ১৩০টি সংগঠন স্কোয়াডের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়েছে। ব্যক্তিপর্যায়ে অনেকেই ফোন ও অনশনস্থলে এসে আন্দোলনকারীদের প্রতি সংহতি জানিয়েছেন। এর মধ্যে নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষে শাহরিয়ার কবির, শিক্ষাবিদ ড. জাফর ইকবাল, সঙ্গীত শিল্পী মাকসুদ, অভিনয় শিল্পী রোকেয়া প্রাচী, তথ্য কমিশনার সাদেকা হালিম, অধ্যাপক কাবেরী গায়েন, অভিনেত্রী বন্যা মির্জা প্রমুখ।

এদিকে, সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়, অনশনরতদের মধ্যে আলিফ প্রধান ও মানিক সূত্রধরের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে চিকিৎসক তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। কিন্তু মানিক সূত্রধরের শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় তাকে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা ভালো নয়।

উল্লেখ্য, ৫ ফেব্রুয়ারি গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চ থেকে ২৬ মার্চের মধ্যে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। কিন্তু ২৬ মার্চের মধ্যে সরকার সে দাবি না পূরণ করায় সে দিন রাত সাড়ে ১০টা থেকে ‘শহীদ রুমী স্কোয়াড’-এর সাত সদস্য আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে অনশনকারীর সংখ্যা ১৪ জনে দাঁড়ায়। শুক্রবার তা ১৯ জনে উন্নীত হয় ও আজ শনিবার মোট অনশনকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২০ জনে। এ ছাড়া শুক্রবার খুলনা প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ৩ শিক্ষার্থী একই দাবিতে অনশন শুরু করেন।

শনিবার আরও ২ জন যু্ক্ত হলে বর্তমানে সেখানে ৫ জন আমরণ অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। অপরদিকে, নেত্রকোনা জেলা শহীদ মিনারে ১০ তরুণ অনশন পালন করেন। তারা শিগগিরই ঢাকায় অনশনকারীদের সঙ্গে যু্ক্ত হবেন বলে জানা গেছে। এছাড়া মার্কিন যু্ক্তরাষ্ট্রের সবকটি স্টেটে শুক্রবার রাত ১২টা থেকে টানা ১৪৪ ঘণ্টা অনশন কর্মসূচি শুরু করেছেন সেখানকার প্রবাসী বাঙালিরা।

ঢাকা জার্ণ্টানাল, মার্চ ৩০, ২০১৩

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.