উদীচী ট্র্যাজেডির ১৭ বছর, বিচার হয়নি আজও

মার্চ ৬, ২০১৬

Jessore Udicheeঢাকা জার্নাল: যশোরে উদীচী ট্র্যাজেডি দিবস রোববার (০৬ মার্চ)। আজ থেকে ১৭ বছর আগে ১৯৯৯ সালের ০৬ মার্চ রাতে টাউন হল ময়দানে উদীচীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বর্বরোচিত এ বোমা হামলা চালায়। এতে ১০ জন নিহত ও দুই শতাধিক নারী-পুরুষ আহত হন। এ ঘটনায় মামলা হলেও বিচার কাজ শেষ হয়নি আজও। ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে ঘাতকরা।

দীর্ঘ ১৭টি বছর পার হলেও স্বজন হারানোর বিচার না পেয়ে হতাশ স্বজন ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা।

যশোরের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রফিকুল ইসলাম বলেন, সরকার পক্ষের আইনজীবী আশা প্রকাশ করেন, খুব তাড়াতাড়ি মামলাটির কার্যক্রম শুরু হবে।

এদিকে, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও শহীদদের স্মরণে প্রতিবাদী গান ও সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও শহীদ বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পন করা হবে।

উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী যশোর জেলা শাখার সভাপতি ডিএম শাহিদুজ্জামান বলেন, সিআইডির ত্রুটিপূর্ণ চার্জশিটের কারণে ২০০৬ সালের ৩০ মে আদালত থেকে খালাস পেয়ে যায় এই মামলার সব আসামি। পরে সরকার ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করলে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হলেও আটকে আছে আইনের বেড়াজালে।

১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ  যশোর টাউন হল মাঠে আয়োজিত বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিন ছিল। রাত ১টার কিছু সময় পর মঞ্চের পেছনে একটির পরে দুইটি শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এতে প্রাণ হারান নূর ইসলাম, নাজমূল হদা তপন, সন্ধ্যা রানী ঘোষ, ইলিয়াস মুন্সী, শাহ আলম বাবুল, বাবুল সূত্রধর, শাহ আলম, বুলু, রতন রায় এবং রামকৃষ্ণ।

আহতদের কেউ দুই পা, কারো এক পা, কারো হাত, কেউবা শ্রবণশক্তি হারিয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেন। এ ঘটনার পর দিন অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করা হয়।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামসহ ২৪ জনের নামে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। পরে তরিকুল ইসলামের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট তার নাম বাদ দিয়ে দেন।  পরে ২০০৬ সালের ৩০ মে যশোরের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল আদালত এ মামলার রায়ে ২৩ আসামিকে বেকসুর খালাস দেন। উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ন্যায়বিচার হয়নি বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পুনর্তদন্তের আবেদন করলে মামলাটির বর্ধিত তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় সিআইডিকে।

২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার হাতে গ্রেফতার হলে উদীচীর বোমা হামলা মামলা নতুন মোড় নেয়। ওই বছরের ১৯ নভেম্বর আদালতে হান্নান তার দেয়া জবানবন্দিতে উদীচী বোমা হামলায় নিজের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তার স্বীকারোক্তিতে পুলিশ হরকাতুল জিহাদের সদস্য বরিশালের আবুল হোসেন ও মাদারীপুরের মাওলানা আবদুর রউফকে আটক করে।

পরবর্তী সময় মহিউদ্দিন আলমগীর, আহসান কবীর হাসান ও মিজানুর রহমান মিজান মারা যান। আদালতের কাছে তাদের মৃত্যুর কাগজপত্র দাখিল হওয়ায় তাদের বাদে বাকি ২০ জনের বিরুদ্ধে সমন জারি করা হয়। এরপর  ২০১১ সালের ৪ মে সরকারের দায়ের করা আপিলটি গ্রহণ করেন বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান মিয়া ও কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ। এর ফলে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। উচ্চ আদালত এ মামলার খালাস প্রাপ্তদের পুনরায় আত্মসমর্পণের জন্য সমন জারির নির্দেশ দেন। এ সংক্রান্ত একটি পত্র ২০১১ সালের ২০ জুন যশোর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এসে পৌঁছায়।

এরপর ২১ জুন খালাসপ্রাপ্ত ২৩ আসামির বিরুদ্ধে সমন জারি করেন চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। সমনে উল্লেখ করা হয়, এক মাসের মধ্যে সবাইকে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিতে হবে। এরপর ১৭ জন বিভিন্ন সময়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন। কিন্তু শফিকুল ইসলাম মিন্টা, শরিফুল ইসলাম লিটু ও সোহরাব নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণ না করায় তাদের বিরুদ্ধে ২৪ জুলাই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন আদালত।

সর্বশেষ, ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আটক হন এ মামলার অন্যতম আসামি শফিকুল ইসলাম মিন্টা। পরবর্তী সময় তাকেও এ মামলায় জামিন দেন আদালত।

ঢাকা জার্নাল, মার্চ ০৬, ২০১৬

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.