এক যুগেও হয়নি হুমায়ুন আজাদ হত্যার বিচার

ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৬

Azadঢাকা জার্নাল : বিশিষ্ট লেখক অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদ হত্যার বিচার দীর্ঘ ১২ বছরেও শেষ হয়নি।

২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বই মেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে বাংলা একাডেমির উল্টা দিকের ফুটপাতে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে মারাত্মক আহত হন হুমায়ুন আজাদ। এ হামলার জন্য তিনি মৌলবাদী গোষ্ঠীকে দায়ী করেছিলেন।

আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি ২২ দিন ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতালে এবং ৪৮ দিন ব্যাংককে চিকিৎসারত ছিলেন। কয়েক মাস চিকিৎসা নেওয়ার পর ২০০৪ সালের আগস্টে গবেষণার জন্য জার্মানিতে যান হুমায়ুন আজাদ। ওই বছরের ১২ আগস্ট মিউনিখে ভাড়া ফ্ল্যাট থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

মামলাটি ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. রুহুল আমিনের আদালতে বিচারাধীন। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষীদের আদালতে হাজির করতে না পারায় শেষ হয়নি বিচারকাজ। মোট ৫৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। সর্বশেষে তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা চলছে।

মামলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে ওই আদালতের সরকারি কৌঁসুলি এ বি এম বশির উদ্দিন মিয়া বলেন, মামলার কার্যক্রম শেষের দিকে। আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক লুৎফর রহমানকে আসামীদের পক্ষে জেরা শেষ হবে বলে আশা করছেন। তদন্ত কর্মকর্তার জেরা শেষ হলে সাক্ষী ক্লোজ করা হবে। এরপর আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে এবং এরপরই রায়ের তারিখ ধার্য করবেন। আগামী তিনমাসের মধ্যে মামলার বিচার শেষ হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সিআইডির পরিদর্শক লুৎফর রহমান মামলার মূল তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন। তিনিই মামলাটি তদন্তের পর ২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল ৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। হুমায়ুন আজাদের ওপর চরমপন্থি ইসলামি জঙ্গিরা এই হামলা চালিয়েছিল বলে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে। প্রথমে এটি হত্যাচেষ্টা মামলা হলেও সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিলের মধ্য দিয়ে এটি হত্যামামলায় পরিণত হয়। ২০১২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর জেএমবির পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগ গঠন হয়।

হুমায়ুন আজাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ওয়াজে বিষোদগার করা জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে প্রথমে আসামি করা হলেও পরে তাকে বাদ দেওয়া হয়।

মামলার আসামিরা হলেন- জেএমবির সূরা সদস্য মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ ওরফে শফিক, আনোয়ার আলম ওরফে ভাগ্নে শহিদ, সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিন, হাফিজ মাহমুদ ও নূর মোহাম্মদ ওরফে সাবু। সালাহউদ্দিন, হাফিজ মাহামুদ ও নুর মোহাম্মদ পলাতক রয়েছেন।

২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রিজনভ্যান থেকে এ মামলার দুই আসামি সালাহউদ্দিন  এবং রাকিবুল হাসানকে ছিনিয়ে নেয় সন্ত্রাসীরা। রাকিব ওইদিন রাতেই ধরা পড়ে এবং পরে ক্রসফায়ারে নিহত হয়।

এ মামলার অন্যতম সাক্ষ্যদাতাদের মধ্যে রয়েছেন- হুমায়ুন আজাদের ভাই মঞ্জুর কবির, আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গণি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাকালীন এলএলবি অনার্সের ছাত্র অ্যাডভোকেট এস এম শফিকুর রহমান আশিক, ড. হুমায়ুন আজাদের স্ত্রী লতিফা, কবি মোহন রায়হান ও কবি সাংবাদিক নাসির আহমেদ।

হুমায়ুন আজাদের উপর হামলার পরদিন তার ভাই মঞ্জুর কবির রমনা থানায় যে হত্যাচেষ্টা মামলা করেছিলেন, সেটিই পরবর্তীকালে আদালতের আদেশে অধিকতর তদন্তের পর হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।

ঢাকা জার্নাল, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৬।

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.