বিশ্বকাপে তৃতীয় যুবারা

ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৬

jubaঢাকা জার্নাল :  শ্রীলঙ্কাকে ৩ উইকেটে হারিয়ে ১১তম ‍যুব বিশ্বকাপে তৃতীয় হয়েছে বাংলাদেশ। এটি যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সাফল্য। এর আগে ২০০৬ যুব বিশ্বকাপে পঞ্চম হয়েছিল বাংলাদেশি যুবারা।

২১৫ রানের টার্গেটে ব্যাটিং করতে নেমে ইনিংসের শেষ ওভারের তৃতীয় বলে বাউন্ডারি মেরে জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। ৩ বল ও ৩ উইকেট হাতে রেখে শ্রীলঙ্কার রান টপকে যায় লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।

শিরোপায় চোখ রেখে জয় দিয়ে বিশ্বকাপের যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকাকে মাটিতে নামিয়ে আনে মেহেদী হাসান মিরাজরা। এরপর গ্রুপ পর্বের আরো দুই জয়ে (স্কটল্যান্ড ও নামিবিয়ার বিপক্ষে) গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় ছোট টাইগাররা। শেষ আটে জায়গা পেয়ে বাংলাদেশ আরো দুর্ধর্ষ। গ্রুপ পর্বে চমকে দেওয়া নেপালকে বাংলাদেশ হারিয়ে দেয় ৬ উইকেটের বড় ব্যবধানে। বৈশ্বিক কোনো টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ শেষ চারে উঠে সেদিন ইতিহাস রচনা করেছিল। কিন্তু ‘বড়’ ম্যাচ না খেলার অভিজ্ঞতায় ফাইনালে যাওয়ার স্বপ্ন সেদিন ভেস্তে যায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হার বাংলাদেশের শিরোপার স্বপ্ন ভেঙে দেয়।

লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে স্কোরবোর্ডে ১ রান যোগ হতেই সাজঘরে ফিরেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান জাকির হাসান (০)। দ্বিতীয় উইকেটে ৫৮ রান যোগ করেন জয়রাজ শেখ ও পরিবর্তী খেলোয়াড় জাকের আলী। দুজন ব্যাটসম্যানের দাপটে বাংলাদেশ বেশ ভালোই এগুতে থাকে। কিন্তু ব্যক্তিগত ১৯ রানে পায়ে টান লাগায় জাকের আলীকে মাঠ ছাড়তে হয়। অবশ্য পরে মাঠে নেমে জয়ের নায়ক বনে যান জাকের আলী। অপরাজিত ৩১ রানের ইনিংস খেলে দলের জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন বীরের বেশে।

জাকের আলীকে অবশ্য মাঠে নামতেই হত না যদি মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্ত অযথা নিজেদের উইকেট বিলিয়ে না আসতেন। খুব সাবলীল ভাবেই মিরাজ ও শান্ত দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নিতে থাকেন। প্রথমে শান্ত-মিরাজের ভুলবুঝাবুঝিতে ৫৩ রানে আউট মিরাজ। এরপর শান্ত-সাইফুল হায়াতের ভুলবুঝাবুঝিতে ৪০ রানে শান্ত আউট হন।

বিপদে পড়া বাংলাদেশকে টেনে তোলার দায়িত্ব নেন সাইফুল হায়াত ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। সাইফুল ২১ রানে ফিরে যাবার পর সাইফউদ্দিন শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ের চেষ্টা চালান। কিন্তু জয়ের থেকে মাত্র ৪ রানের দূরে থেকে রান আউট হয়ে যান। তার আগে স্পিন অলরাউন্ডার মোসাব্বেক আউট হন ১১ রানে। শেষ পর্যন্ত জাকের আলীর অপরাজিত ইনিংসে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত হয় ৩ বল আগে।

এর আগে ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২১৪ রান সংগ্রহ করে লঙ্কান যুবারা। লঙ্কানদের শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। বাংলাদেশের পেসারদের প্রথম এক ঘন্টায় বেশ ভালোই শাসন করেন দুই ওপেনার। উইকেটের খোঁজে থাকা বাংলাদেশ স্পিন আক্রমণে এসে নিজেদের ফিরে পায়। বাংলাদেশের পেসারদের বিপক্ষে লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা যতটা সবলীল ছিলেন, স্পিনে ঠিক ততটাই নড়বড়ে। এজন্য ভালো শুরুর পরও বড় স্কোর গড়তে পারেনি মাঝপথের ব্যাটসম্যানরা।

ইনিংসের শুরুতে ১০ ওভারে ৫৩ রান জমা করে লঙ্কানরা, যা পাওয়ার প্লেতে তাদের সর্বোচ্চ রান। দুই ওপেনার কামিন্দু মেন্ডিস ও সালিন্দু উশান প্রথম উইকেটে ৬০ রান যোগ করেন। বিপজ্জনক হয়ে ওঠা এ জুটি ভেঙে বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

সালিন্দু উশান এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে স্টাম্পিংয়ের শিকার হন। জাকির হাসানের পরিবর্তে উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে অসাধারণ স্টাম্পিং করেন জাকির আলী। দলীয় রান ৬০ থেকে ৭০ পর্যন্ত যেতেই আরো ২ উইকেট হারায় সফরকারীরা। কামিন্দু মেন্ডিস (২৬) মিরাজের বলে এলবিডব্লিউ ও আভিশকা ফার্নার্ন্দো (৬) ক্যাচ দিয়ে আউট হন।

পরের ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিলে টিকে ছিলেন অধিনায়ক চারিথ আসলাঙ্কা। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৭৬ রান করেন তিনিই। আউট হন ইনিংসের ৪৯তম ওভারে। ৯৯ বলে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ইনিংসটি সাজান আসলাঙ্কা। অধিনাকেয়ের সঙ্গে ৩০ রান যোগ করেন উইন্ডু হাসরাঙ্গা। ২৭ রান করেন সাম্মু আহসান।

শুরুতে না পারলেও লঙ্কানদের ইনিংসের শেষ ৫টি উইকেট নেন বাংলাদেশের পেসাররা। ছিল ১টি রান আউটও। ২ পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন  ও আব্দুল হালিম ২টি করে উইকেট নেন। ১টি করে উইকেট নেন মেহেদী হাসান রানা ও সালেহ আহমেদ শাওন। তবে সবাইকে ছাড়িয়ে দলের সেরা বোলার মেহেদী হাসান মিরাজ। ১০ ওভারে ২৮ রানে নেন ৩ উইকেট। ছিল ২টি মেডেন ওভারও।

অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের জন্যে ম্যাচসেরা নির্বাচিত হন বাংলাদেশেল অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ।

ঢাকা জার্নাল,১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬।

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.