পৌরসভা নির্বাচনে ৭২.১২ শতাংশ মেয়র প্রার্থী ব্যবসায়ী : সুজন

ডিসেম্বর ১৮, ২০১৫

34রাজনীতি ব্যবসায়ীদের কব্জায় চলে যাচ্ছে উল্লেখ করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) জানিয়েছে, আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের ৭২ শতাংশ ব্যবসায়ী। এ ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব আর আচরণবিধি লংঘন বড় অন্তরায় বলে মনে করছে সংস্থাটি। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও উত্সবমুখর পরিবেশে আয়োজনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সুজনের নেতৃবৃন্দ। শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে সুজন আয়োজিত ‘আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের তথ্য প্রকাশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এ আহ্বান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সুজন নির্বাহী সদস্য ড. হামিদা হোসেন, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার প্রমুখ। সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমাদের রাজনীতি ক্রমান্বয়ে ব্যবসায়িদের কব্জায় চলে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা নির্বাচনে অংশ নিন, এ অধিকার তাদের অবশ্যই রয়েছে। আমাদেরও কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সব প্রার্থীই যদি ব্যবসায়ী হন, তাহলে জনগণের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় গুরুত্ব পাবে না।’ প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ সংক্রান্ত সুজনের প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, পৌরসভা নির্বাচনে ৯০৪ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ৬৫২ জনই ব্যবসায়ী, যা শতকরা হিসাবে ৭২.১২।

এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ২২১ জনের মধ্যে ১৬৫ (৭৪.৬৬%), বিএনপি ২০৬ জনের মধ্যে ১৬২ (৭৮.৬৪%) এবং অন্যান্য রাজতৈতিক দল ও স্বতন্ত্র ৪৭৭ জনের মধ্যে ৩১৫ জন (৬৮.১৩) মেয়র প্রার্থী ব্যবসায়ী। প্রতিবেদনে বলা হয়, মোট ৯০৪ জন প্রার্থীর মধ্যে ২২৪ জন স্কুলের পাঠ শেষ করতে পারেননি। এইচএসসি (উচ্চ মাধ্যমিক) শেষ করেছেন ১৯৮ জন, স্নাতক ২১৫ এবং স্নাতকোত্তর ১২৬ জন। বাকি ১৮ জনের কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হলফনামায় উল্লেখ নেই।   ঋণ গ্রহীতা ৯০৪ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ঋণ গ্রহীতার ১৬.১৫ শতাংশ অর্থ্যাত্ ১৪৬ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ৪৮ জন (২২.৭৪%), বিএনপির ৪২ (২০.৩৮%) এবং অন্যান্য রাজতৈতিক দল ও স্বতন্ত্র ৫৫৬ (১১.৭৪%) জন। মোট ১৪৬ জন ঋণ গ্রহীতার মধ্যে কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছে ১৮ জন (১২.৩২%)। যার মধ্যে আওয়ামী লীগের ৫ জন, বিএনপির ৭ জন এবং অন্যান্য রাজতৈতিক দল ও স্বতন্ত্রের ৬ জন।   করদাতা গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রার্থীদের অধিকাংশ করদাতা। সকল দলের মধ্যে করতাদার হার কাছকাছি। ৯০৪ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে কর প্রদানকারী ৭২৯ জন (৮০.৬৪%)। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ১৮১ জন, বিএনপির ১৬৯ জন এবং স্বতন্ত্র ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ৩৭৯ জন।   বাত্সরিক আয় বাত্সরিক অধিক আয়কারী প্রার্থীর সংখ্যা আওয়ামী লীগে বেশি, স্বল্প আয়কারী প্রার্থীর সংখ্যা বিএনপি সামান্য এগিয়ে। ৯০৪ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ৮ জনের বাত্সরিক আয় (০.৮৮%) কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ৫ জন, বিএনপিতে ২ জন এবং অন্যান্য দলে একজন রয়েছেন। ২ লাখের কম টাকা বাত্সরিক আয় করে এ রকম প্রার্থীর সংখ্যা ১৭৪ জন (১৯.২৪%)।

সম্পদের বিবরণ ৯০৪ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ৪৭ জন (৫.১৯%) কোটিপতি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ২০ জন, বিএনপির ১৩ জন এবং অন্যান্য ১৪ জন। তবে মোট প্রার্থীর মধ্যে ২৩ জনের সম্পদের বিবরণ দেয়া নেই তাদের হলফনামায়।   মামলা আওয়ামী লীগের তুলনায় বিএনপির প্রার্থীদের মামলা বেশি। বর্তমানে মোট ৯০৪ জন প্রার্থীর মধ্যে ২১৯ (২৪.২২%) জনের বিরুদ্ধে ৬৭৭টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৩, বিএনপির ৯৬ এবং অন্যান্য ৯০ জনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। এছাড়া বর্তমানে হত্যা মামলা রয়েছে ৩৬ জনের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ৭ জন, বিএনপির ১৫ জন এবং অন্যান্য দলের ১৪ জন। নির্বাচনে ব্যবসায়ীদের আধিক্য স্থানীয় পর্যায়ে কর্তৃত্ব বাড়াবে উল্লেখ করে সুজন সম্পাদক বলেন, হলফনামার তথ্য নিয়ে এবার যথেচ্ছাচার হয়েছে। যে যা পেরেছে তথ্য দিয়েছে। যেন কেউ নেই, এগুলো খতিয়ে দেখার। প্রার্থীর মধ্যে ব্যবসায়ীর অনুপাত কম দেখা যায়, কিন্তু যাঁরা নির্বাচিত হবেন, দেখা যাবে তাদের ৮০ শতাংশই ছাড়িয়ে যাবে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.