জলবায়ু তহবিল ঘাটতি কপ-২১’র চ্যালেঞ্জ

ডিসেম্বর ৬, ২০১৫

18ঢাকা: ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে চলমান বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২১) এরই মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। রাষ্ট্রনেতারা একত্রিত হয়ে আমাদের আবাসস্থল রক্ষায় কাজ করবেন বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু সামনে রয়ে গেছে এখনও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাধা, যা অতিক্রম করার উপর নির্ভর করছে এতো ঘটা করে আলোচনায় বসার ফলাফল।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কুফল মোকাবেলায় অর্থায়নের ক্ষেত্রে ন্যায়সঙ্গত ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া সবচেয়ে বেশি জরুরি। কারণ অর্থের সুষ্ঠু বণ্টন ও ব্যবস্থাপনার উপরই নির্ভর করছে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরন হ্রাস ও দরিদ্র দেশগুলোর অভিযোজন।

তাদের মতে, কপ-২১ এ গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে ভারত। এখনই পদক্ষেপ না নিলে পরবর্তী চীন হয়ে উঠবে দেশটি। ২০৩০ সালের মধ্যে ‘জীবাশ্ব জ্বালানি শক্তি’র ব্যবহার ৪০ শতাংশে কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে ভারত, যা বাস্তবায়ন করতে দরকার ২.৫ ট্রিলিয়ন ডলার (এক কোটি ৯৫ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা)। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়া এটি কিছুতেই সম্ভব না। আর ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে যদি রাষ্ট্রনেতারা এবারের সম্মেলনে একমত হতে না পারেন, তাহলে মাঠে মারা যাবে এই জলবায়ু সম্মেলন।

ভারতের দাবি, তারাসহ এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের উন্নয়নশীল অনেক দেশই জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী নয়। আর যদি কিছু থেকেই থাকে, তা হলো, সামান্য পরিমাণ গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরন। যেখানে এসব দেশে কোটি কোটি মানুষ দারিদ্র্য সীমার নীচে বাস করছে, তাহলে তারা কেন ক্ষতিপূরণ দেবে?

এই শক্ত যুক্তির সাপেক্ষে উন্নত দেশগুলোর উচিত ক্ষতিপূরণের পর্যাপ্ত অর্থ দান করা। কিন্তু সমস্যা হলো, জলবায়ু তহবিল সংগ্রহ ও বণ্টনে ন্যায়সঙ্গতা এবং স্বচ্ছতায় এখনও ঘাটতি রয়ে গেছে। অন্যদিকে উন্নত রাষ্ট্রগুলো তাদের দেওয়া কথা অনুযায়ী অর্থ দিতে চাইলেও তা পর্যাপ্ত নয়।

এ প্রসঙ্গে ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফেডারেশনের গ্লোবাল ক্লাইমেট অ্যান্ড এনার্জি প্রোগ্রামের প্রতিনিধি সামানথা স্মিথ বলেছেন, ধনী ও উন্নত রাষ্ট্রগুলো যে পরিমাণ অর্থ সহায়তা দিতে চাইছে তা যথেষ্ট নয়। এক্ষেত্রে আমাদের এমন পরিকল্পনা দরকার, যার ফলে রাষ্ট্রনেতারা তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেন।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মেক্সিকোর কানকুনে অনুষ্ঠিত এর আগের কপ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রসহ শিল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলো ‘গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড’ গঠনে একমত হয়। এ সময় সিদ্ধান্ত হয়, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার প্রসারসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো নিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বছরে গ্রিন ফান্ড থেকে একশ বিলিয়ন ডলার (সাত লাখ ৮১ হাজার ৫০৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা) সহায়তা দেওয়া হবে। কিন্তু পাঁচ বছর পর এসে এখনও অনিশ্চিত, ২০২০ সালের মধ্যে কিভাবে এ লক্ষ্য অর্জিত হবে। যে কারণে এবারের সম্মেলনে লক্ষ্যে পৌঁছাতে আর্থিক সহায়তার বিষয়টি নিশ্চিতে গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জলবায়ু-নির্বাপন নিঃসরণ ও অভিযোজন খাতে সুষ্ঠু অর্থ বণ্টন। যা বাস্তবায়ন করতে অধিকাংশ দেশই বিগত সময়ে ব্যর্থ হয়েছে।

এখনও বাংলাদেশ, প্রশান্ত মহাসাগর উপকূলীয় দেশগুলোর মানুষ, এমনকি মিয়ামির বাসিন্দারা ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ জীবনযাপন করছেন। এখনই সেদিকে নজর দেওয়া দরকার। নতুবা বিশ্বকে বিপুল সংখ্যক জলবায়ু শরণার্থী দেখতে হবে, যে সংকট বর্তমানে ইউরোপে দেখা যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে হোয়াইট হাউজ কাউন্সিলের এনভায়রনমেন্টাল কোয়ালিটি’র সাবেক সদস্য জোস সাউসলাক বলেন, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আর্থিকভাবে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর উচিৎ সরকারি ও বেসরকারি উভয় প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা নেওয়া।
ডিসেম্বর ০৬, ২০১৫

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.