জামায়াত নিষিদ্ধ হলে নতুন নামে নবীন নেতৃত্বে!

নভেম্বর ২৬, ২০১৫

09নিষিদ্ধ করা হলে খোলস পাল্টে নতুন রূপে ও নতুন সজ্জায় আবিভর্‚ত হবে জামায়াত। ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ নাম বদলে ফেলে নতুন নাম রাখা হবে এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আমূল পরিবর্তন আনা হবে। এরপর নতুন নামের রাজনৈতিক দলটির নিবন্ধনের চেষ্টা করা হবে। মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় নিয়ে যাতে জনগণের কাছে আর বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে না হয়, সে জন্য নতুন দলের নেতৃত্ব সম্পূর্ণভাবে নবীনদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে। যাঁদের বয়স স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় চার বা পাঁচ বছর ছিল বা তারও পরে যাঁদের জন্ম, এমন নবীনরাই দলটির নেতৃত্বে আসবেন।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় একটি সূত্র জানায়, শীর্ষস্থানীয় নেতারা বছরের পর বছর কারাগারে থাকার পরও তাঁদের পদ-পদবি প্রত্যাহার করা হয়নি। এর উদ্দেশ্য ছিল কর্মীদের মনোবল রক্ষা করা। কিন্তু সর্বশেষ গত শনিবার দলটির কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর থেকে সারা দেশে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন করে হতাশা শুরু হয়েছে। দলের সর্বস্তরে বোধোদয় হয়েছে যে এ অবস্থায় পুরনো নেতৃত্বের ওপর ভর করে আর দলকে এগিয়ে নেওয়া যাবে না।

তাই দলটির মধ্যম সারির নেতাদের পেছনে রেখে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পরিবর্তনের চিন্তাভাবনা করছে জামায়াত। জামায়াতের সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে বিরোধিতা করার কারণে বর্তমান প্রেক্ষাপটে নতুন কর্মীরা দলে আসতে ভয় পাচ্ছে। কারণ যুদ্ধাপরাধের দায় দলটির প্রবীণ ও শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে সঙ্গে নবাগতদেরও ভোগাচ্ছে। নাশকতা বা বোমা হামলা মামলায় যেসব নেতাকর্মী কারাগারে আছে বা যাচ্ছে তাদের জামিন থেকে শুরু করে মামলা পরিচালনা এবং তাদের পুরো পরিবারের দায় এখন দলকে নিতে হচ্ছে। এর ওপর আবার সরকারি নজরদারি ও আইনি তৎপরতার কারণে কঠিন সময় পার করছে জামায়াত। জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার একজন সদস্য  বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধ মামলায় আইনি মোকাবিলা করেও শীর্ষস্থানীয় নেতাদের রক্ষা করা যাচ্ছে না।

নেতাদের রক্ষায় একসময় রাজপথে শক্ত অবস্থান নিয়ে নাশকতার দায়ে এখন দল নিষিদ্ধের পথে। তবে সরকার গণতান্ত্রিকভাবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে পারবে না। যদি তা করেও তবে পরিস্থিতি বুঝে নতুন নামে আসবে জামায়াত। দল নিষিদ্ধ করা হলেও নেতাকর্মীদের তো আর নিষিদ্ধ করা যাবে না।’ দলটির ঢাকা মহানগরীর এক নেতা বলেন, এখনো জামায়াত তো নিষিদ্ধ সংগঠনের মতোই আছে। তাদের কোথাও প্রকাশ্যে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হচ্ছে না। নাশকতার মামলায় সারা দেশের নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এ অবস্থায় একটি দল যখন আট বছর ধৈর্য ধারণ করে আছে, ভবিষ্যতেও তা পারবে। জামায়াতের যশোর জেলার একটি উপজেলার আমির নাম না প্রকাশের শর্তে   বলেন, তাঁরা এখন দলের নিষিদ্ধ হওয়া নিয়ে ভাবছেন না।

কারণ অতীতেও দলকে নিষিদ্ধ হতে হয়েছে। ইসলামী আদর্শের দল হিসেবে সরকার হয়তো জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে পারে, তবে একেবারে নিশ্চিহ্ন করতে পারবে না। সারা দেশে জামায়াতের লাখ লাখ সমর্থক রয়েছে। গত কয়েকটি উপজেলা, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও জামায়াতের নেতারা নির্বাচিত হয়ে তার প্রমাণ দিয়েছেন। তাই এত বিপুল সমর্থনের দলকে নিশ্চিহ্ন করা যাবে না। আগামী দিনে দলটির কেন্দ্রীয় আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীর বিচারের রায় কার্যকর করার বিষয়েও সচেতন রয়েছে জামায়াত। আগের মতো এই দুই নেতার রায় বিপক্ষে গেলেও জামায়াত হরতালসহ কর্মসূচি দেবে, কিন্তু কোনো নাশকতার পথে হাঁটবে না বলে দলটির বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগরীর এক নেতা বলেন, ‘স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সংকট এখন মোকাবিলা করছে জামায়াত-শিবির।

জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামান, আবদুল কাদের মোল্লার পর চলে গেলেন সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদও। এই শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই বর্তমান আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায় নিয়ে তোড়জোড় চলছে। তাঁদেরও হয়তো বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। এ অবস্থায় দলটির নেতাকর্মীরা কিছু বুঝে উঠতে পারছে না; পাচ্ছে না কোনো দিকনির্দেশনা। দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পরপরই হরতাল দিয়ে কঠোর আন্দোলন করছে জামায়াত-শিবির। কিন্তু সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে তারা সুবিধা করতে পারছে না। জানা গেছে, এ অবস্থায় দলের নেতাকর্মীরা আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে, সাংগঠনিক কর্মসূচিও গতি পাচ্ছে না।

দীর্ঘদিন বিভিন্ন মামলার রায় ঝুলে থাকায় দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারাও ভাবতে পারেননি ট্রাইব্যুনাল-আপিল বিভাগে নেতাদের পরপর রায় হবে। হিসাব মেলাতে পারছেন না তাঁরা। রবিবার জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ বলেন, সরকার পরিকল্পিতভাবে জামায়াতের নেতাদের হত্যার ষড়যন্ত্র করছে। জামায়াত নেতারা সরকারি ষড়যন্ত্রের শিকার। জামায়াতে ইসলামীর মজলিসে শুরার একজন সদস্য বলেন, ‘আমরা জানি না সরকার কেন এত দ্রুত রায় দিচ্ছে।

সরকার হয়তো চাচ্ছে রায়গুলো দিলে নেতাকর্মীরা সহিংস হয়ে উঠবে। তখন সরকার বহির্বিশ্বকে দেখাতে পারবে বাংলাদেশে জঙ্গি আছে। কিন্তু নেতাকর্মীরা বুঝেশুনেই সামনের দিকে এগোবে। তিনি বলেন, এখন থেকে জামায়াতের সব কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ। নিষিদ্ধ হলে দল কী করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সব কিছুরই তো বিকল্প আছে। সময় হলে সবই জানতে পারবেন।’ তরুণ নেতৃত্ব বিষয়ে তিনি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে বলেন, ‘সারা বিশ্ব যেখানে তরুণদের নেতৃত্বে আনছে, আমাদের আনতে তো কোনো দোষ নেই।’

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.