মুজাহিদের রিভিউয়ের রায় বুধবার

নভেম্বর ১৭, ২০১৫

প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চে মঙ্গলবার সকাল ৯টার পর এ শুনানি শুরু হয়, চলে বেলা ১২ টা পর্যন্ত।

বেঞ্চের বাকি সদস্যরা হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

প্রথমে মুজাহিদের পক্ষে শুনানি করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। পরে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার যুক্তি তুলে ধরেন।

মঙ্গলবার এ আদালতেই আরেক যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রিভিউ আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা ছিল। তবে মুজাহিদের শুনানি শেষে তার আইনজীবীর আবেদনে শুনানি বুধবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।

দণ্ড কার্যকরের আগে দুই যুদ্ধাপরাধীর শেষ আইনি সুযোগ এই রিভিউ আবেদন। এ আবেদনে রায়ের কোনো পরিবর্তন না হলে তাদের সামনে কেবল রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সুযোগ থাকবে।

এর আগে যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লা ও মো. কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন একদিনের মধ্যে শুনানি শেষে খারিজ হয়ে গিয়েছিল। তারা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা চাননি বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পরে তাদের ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।

নিয়ম অনুযায়ী, রিভিউ নিষ্পত্তির আগে দণ্ড কার্যকর করা যাবে না। রিভিউ খারিজ হয়ে গেলে সেই রায়ের অনুলিপি কারাগারে যাবে এবং কারা কর্তৃপক্ষ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসামিদের ফাঁসি কার্যকর করবে।

রিভিউ শুনানির দিন থাকায় সকাল থেকেই সুপ্রিম কোর্টের সবগুলো প্রবেশ পথে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। প্রবেশের সময় সবার পরিচয়পত্র দেখা হয়, সেন্দেহ হলে করা হয় তল্লাশি।

রিভিউ শুনানিতে পাঁচ পাকিস্তানিসহ আটজনের সাফাই সাক্ষ্য নেওয়ার আবেদন করেছিলেন বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের। তার ওই আবেদন ২ নভেম্বর খারিজ হয়ে যায়।

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদের রিভিউ শুনানিতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীকে কনিষ্ঠ দুই আইনজীবী যাতে নির্বিঘ্নে সহায়তা করতে পারেন, সে নির্দেশনা চেয়ে করা আবেদনও নাকচ হয়ে যায়।

আপিল বিভাগের এই বেঞ্চ গত ১৬ জুন একাত্তরের বদর প্রধান মুজাহিদের আপিলের রায় ঘোষণা করে। মুক্তিযুদ্ধকালীন চট্টগ্রামের ত্রাস সালাউদ্দিন কাদেরের আপিলের রায় আসে ২৯ জুলাই।

দুই আপিলের রায়েই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির রায় বহাল থাকে। তাদের আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় একই দিনে, ৩০ সেপ্টেম্বর।

এরপর নিয়ম অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল দুজনের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠায়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মুজাহিদকে এবং গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে থাকা সালাউদ্দিন কাদেরকে সেই মৃত্যু পরোয়ানা ১ অক্টোবর পড়ে শোনানো হয়।

সালাউদ্দিন কাদের ও মুজাহিদ রিভিউ আবেদন দায়েরের পর রাষ্ট্রপক্ষ শুনানির দিন নির্ধারণের জন্য গত ১৫ অক্টোবর আবেদন করে।

এরপর সালাউদ্দিন কাদের রিভিউ শুনানিতে পাঁচ পাকিস্তানিসহ আটজনের সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য ১৯ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন, যাতে আদালতে এসে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ওই আটজনের নামে সমন জারির আরজি জানানো হয়।

এরা হলেন- পাকিস্তানের স্থপতি মুনিব আরজুমান্দ খান, পাকিস্তানের ডন গ্রুপের চেয়ারম্যান আমবর হারুন সায়গল, পাকিস্তানের সাবেক মন্ত্রী ইসহাক খান খাকওয়ানি, ভিকারুন্নেসা নূনের নাতি রিয়াজ আহমেদ নূন এবং পাকিস্তানের প্রাক্তন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান মিয়া মোহাম্মদ সুমরো।

২০ অক্টোবর এসব আবেদন অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতির আদালতে ওঠে, আদালত রিভিউসহ এ আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেয়।

পরে মুজাহিদের রিভিউ শুনানিতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীকে কনিষ্ঠ দুই আইনজীবী যাতে নির্বিঘ্নে সহায়তা করতে পারেন, সে নির্দেশনা চেয়ে ২৫ অক্টোবর আরেকটি আবেদন করা হয়।

দুটি মামলায়ই প্রধান আইনজীবী হিসেবে রয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন। তাকে সহায়তা করতে যে আইনজীবী দল রয়েছে, তাতে শিশির মনির ও আসাদ উদ্দিন সদস্য রয়েছেন।

আসামির আইনজীবীদের অভিযোগ, ওই দুই আইনজীবীকে শুনানি থেকে বিরত রাখতে সরকার হয়রানি করছে। তাদের জন্যই আবেদন দুটি করা হয়। পাশাপাশি রিভিউ শুনানির আগে চার সপ্তাহ সময়েরও আবেদন করেন মুজাহিদের আইনজীবীরা।

২ নভেম্বর শুনানি শেষে আপিল বিভাগ সালাউদ্দিন কাদেরের আবেদন খারিজ করে রিভিউ শুনানির দিন ঠিক করে দেয়। মুজাহিদের আবেদনেও কোনো সাড়া দেয়নি আদালত।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.