নাগরিক যাবে কোথায়?

নভেম্বর ১০, ২০১৫

16ঢাকা: কদিন আগেই নিরাপত্তা আর মাদক সেবনের অজুহাতে সন্ধ্যার পর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও তৎসংলগ্ন ছবির হাটে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এবার সেগুনবাগিচাস্থ শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গনে সাধারণ মানুষের চলাচল আর আড্ডার উপর মৌখিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরে সন্ধ্যার পর শিল্পকলা প্রাঙ্গনে সাধারণ মানুষের প্রবেশ ও অবস্থানের উপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।  প্রদর্শনী চলাকালীন সময়ে কাউকে আর একাডেমির মাঠ কিংবা সিঁড়িতে বসতে দেয়া হচ্ছে না। যার প্রভাব পড়েছে নাটকের প্রদর্শনীগুলোতে। ইতিমধ্যেই দর্শক সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। তাছাড়া নাট্যকর্মীরাও বিষয়টিকে ইতিবাচক মনে করছেন না।

গেল শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে প্রাচ্যনাটের নতুন নাটক ‘ট্র্যাজেডি পলাশবাড়ি’র পরপর দুটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। প্রথম প্রদর্শনীতে দর্শক সমাগম থাকলেও, দ্বিতীয়টিতে একেবারেই দর্শক ছিলো না। এর কারণ হিসেবে দলটির কর্মী ও সর্বনাম ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রিফাত আহমেদ নভেল   বলেন, ‘আমাদের দুটি শো’র মাঝখানে খানিকটা বিরতি দেয়া হয়। এ সময় নাট্যকর্মী থেকে সাধারণ দর্শক সবাই শিল্পকলার মাঠ কিংবা সিঁড়িতে বসে আড্ডায় মেতে উঠেন। সেদিনও তার ব্যাতিক্রম ছিলো না। কিন্তু হঠাৎই শিল্পকলার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা আমাদের আড্ডায় বাধা দেয়। নাট্যকর্মী পরিচয় পাওয়ার পরও তারা আমাদের চলে যেতে বলেন। অন্যদিকে সাধারণ দর্শক, যারা শিল্পকলার এদিক সেদিন বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন তাদেরকেও চলে যেতে বাধ্য করা হয়। যার প্রভাবে আমাদের দ্বিতীয় প্রদর্শনীতে তেমন একটা দর্শক ছিলো না।’

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘নিজের ঘরে নিজেই বসতে পারব না। এটা হতে পারে না। এমনিতেই নাটকের দর্শক কমে যাচ্ছে। তার উপর শিল্পকলা প্রাঙ্গনে আড্ডা কিংবা বসতে বাধা দিলে কেউই শিল্পকলা মুখী হবে না।’

অন্যদিকে সাংবাদিক ও নাট্যকর্মী পাভেল রহমান   বলেন, ‘প্রায় এক সপ্তাহ পর গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালায় গিয়েছিলাম। প্রবেশদ্বারেই কয়েকজন নাট্যকর্মীর জটলা দেখে এগিয়ে গেলাম। তারা জানালেন শিল্পকলার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার বাহিনী তাদেরকে এখান থেকে চলে যেতে বলেছে। অথচ ঘড়িতে তখন সাড়ে ৭টা বাজে, মঞ্চে তখনও প্রদর্শনী চলছে।’

এদিকে  বেশ কয়েকজন নাট্যকর্মী জানান, এখন থেকে নাট্যকর্মীদের আইডি কার্ড গলায় ঝুলিয়ে শিল্পকলায় প্রবেশ করতে হবে। আর দর্শরা গেটের বাইরে থেকে টিকিট কেটে তবেই ভিতরে প্রবেশ করতে পারবেন। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিল্পকলা একাডেমির একজন কর্মকতা জানান, কয়েকমাস আগে শিল্পকলায় আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসব চলাকালে স্থানীয় একদল বখাটে হামলা চালায়। এ ঘটনায় কয়েকজন নাট্যকর্মীসহ দর্শক আহত হয়। এর পরপরই নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। তখন সরেজমিনে দেখা যায়, নাট্যকর্মী ও দর্শক ছাড়াও বেশ কিছু বহিরাগত নিয়মিত শিল্পকলার মাঠসহ বিভিন্ন জায়গায় আড্ডা দেয়। এমন কী, তারা সেখানে মাদকও সেবন করে। বিষয়টা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে নিরাপত্তা বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে কয়েকবার অভিযানও পরিচালনা করা হয়। কিন্তু কোন ইতিবাচক ফলাফল না আসায়, এখন থেকে সন্ধ্যার পর শিল্পকলায় প্রবেশ ও আড্ডার ক্ষেত্রে কড়কড়ি আরোপ করা হয়েছে। সারগ নামে এক নাট্যকমী বলেন আমাদের এখন মাথা ব্যথার জন্য মাথা কেটে পেলতে হবে,নিরাপত্তা না দিয়ে বলা হচ্ছে আপনি বাসায় চলে জান ।  নাগরিক অধিকার তাহলে কি বলতে পারেন?

উল্লেখ্য, সম্প্রতি সন্ধ্যার পর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও তৎসংলগ্ন ছবির হাটে সবার প্রবেশের উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ফলে চারুকলা ইনস্টিটিউট এর উদ্যোগে গড়ে ওঠা ছবির হাটের নিয়মিত সংস্কৃতিচর্চাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ছবির হাটকে কেন্দ্র করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গড়ে ওঠা কবি, শিল্পী ও ব্যান্ডদলগুলোর আড্ডা ভেঙ্গে গেছে সরকারি সিদ্ধান্তে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.