বিদেশিদের নিরাপত্তায় গুলশান-বারিধারায় বিজিবি মোতায়েন

অক্টোবর ১০, ২০১৫

07ঢাকা: রাজধানীর গুলশান ও বারিধারায় বিদেশিদের নিরাপত্তায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। বাংলাদেশে পশ্চিমাদের ওপর আরো হামলার আশঙ্কায় যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় দফার সতর্কতা জারির পরদিনই কূটনৈতিক পাড়ায় বিজিবি মোতায়েন করা হলো।

বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ  বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তার জন্য কূটনৈতিক পাড়ায় দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়ন করা হয়েছে। যতদিন প্রয়োজন হবে ততদিন সেখানে বিজিবি থাকবে।

বিজিবির গণসংযোগ কর্মকর্তা মহসিন রেজা  বলেন, ‘বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় নিরপত্তা বিষয়ক ইস্যুতে বিজিবি কাজ করে। এরই ধারবাহিকতায় গুলশান-বারিধারার কূটনৈতিক এলকায় বিজিবি সদস্যরা কাজ করছেন।’

শনিবার সন্ধ্যা থেকে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে ভ্রমণের সতর্কতা জারির হালনাগাদ পরামর্শে ব্রিটিশ সরকার বলে, এখানে (বাংলাদেশে) সন্ত্রাসের বড় ধরনের হুমকি রয়েছে। পশ্চিমাদের ওপর আরো হামলা হতে পারে।

গেল মাসের শেষ দিকে ও চলতি মাসের শুরুর দিকে ঢাকার কূটনৈতিক পাড়ায় ও রংপুরে দুই বিদেশি খুন হওয়ার পর বাংলাদেশে বিদেশিদের নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে আসে। গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় দেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনা শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম মাহমুদ আলী জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশ সরকারের কাছে আরো নিরাপত্তা চেয়েছেন দেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা। অবশ্য দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশে বিদেশিদের নিরাপত্তায় বাংলাদেশ সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে কূটনীতিকরা সন্তুষ্টিও প্রকাশ করেছিলেন বলে জানিয়েছিলেন মন্ত্রী।

তবে এরই মধ্যে শুক্রবার বিকেলে বাংলাদেশে পশ্চিমাদের ওপর আরো হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করে যুক্তরাজ্য।

বাংলাদেশে পশ্চিমা স্বার্থের উপর হামলার শঙ্কা করে চলতি মাসে বাংলাদেশ সফর বাতিল করে অস্ট্রেলিয়া জাতীয় ক্রিকেট দল। এ বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যেই ঢাকায় কূটনৈতিক পাড়ায় ইতালির নাগরিক তাভেল্লা সিজার ও রংপুরে জাপানের নাগরিক হোশি কোনিওকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে দিয়েই বাংলাদেশে বিদেশিদের নিরাপত্তার বিষয়টি মূলত আলোচনায় আসে।

বাংলাদেশে বিদেশিদের উপর হামলার ঘটনা বিরল। তবে এক সপ্তাহের মধ্যে দুই বিদেশিকে হত্যার ঘটনায় নড়েচড়ে বসে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের পর মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) নামে দায় স্বীকার করে টুইট ও বিবৃতির খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে তা পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ করে। তবে এসবের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশে আইএসের কোনো অস্তিত্ব নেই।

দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ‘গোয়েন্দারা ব্যর্থ, একথা বলা যাবে না’ বলে শনিবার বিকেলে রাজধানীর ভলিবল স্টেডিয়ামে এক অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহিদুল হক। এ কে এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, দুই বিদেশি নাগরিক হত্যার পর কূটনীতিকদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তাদের আমাদের গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে আবহিত করা হয়েছে। তারা আমাদের গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

মঙ্গলবার আলোচনার পর ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বিদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনায় ঘাতকদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এ বিষয়ে কোনো বাধা থাকবে না বলেও সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সারাদেশে বিদেশি নাগরিকদের অতিরিক্ত নিরাপত্তা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

বিদেশি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন ব্লুম বার্নিকাট সোমবার চট্টগ্রামে বলেছিলেন, আইএসের দাবির সত্যতা যাচাই করছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ঘটনার তদন্তে তার দেশের আগ্রহের কথাও জানিয়েছিলেন বার্নিকাট।

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর কূটনৈতিক পাড়ায় মহড়া দেয় পুলিশের বিশেষায়িত টিম সোয়াট। শনিবার সেখানে অনুষ্ঠিত হয় নিরাপত্তা র‌্যালি। এতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.