মিনায় পদদলনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭১৭

সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৫

সিভিল ডিফেন্সের বরাত দিয়ে রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, শুক্রবার মিনা থেকে জামারায় ‘শয়তানের স্তম্ভে’ পাথর ছুড়তে যাওয়ার পথে পদদলনের এ ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৭১৭ জন, আরও অন্তত ৮৬৩ জন আহত হয়েছেন।

মক্কার মসজিদ আল-হারামে ক্রেইন উল্টে ১১৭ জনের মৃত্যুর ১২ দিনের মাথায় এ ঘটনা ঘটল। বিবিসির এক প্রতিবেদনে পদদলনের এ ঘটনাকে হজের ইতিহাসে গত ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিশ্বের ১৫০টি দেশের ২০ লাখের বেশি মুসলমান এবার হজ করছেন, যাদের মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা এক লাখের বেশি।

জেদ্দায় বাংলাদেশের হজ অফিসার মো. আসাদুজ্জামান জানান, “হতাহতের তালিকায় বাংলাদেশিও আছেন। কিন্তু কতজন তা আমরা এখনো জানতে পারিনি।”sodi2

সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ টেলিফোনে  বলেন, “খবর পেয়েই আমরা লোক পাঠিয়েছি। নিশ্চিত কোনো খবর পেলেই আপনাদের জানাতে পারব।”

হতাহতের এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ইসলামের রীতি অনুযায়ী, বুধবার আরাফাতের ময়দানে সমবেত হয়ে দিনভর ইবাদত করেন এবং হজের খুতবা শোনেন হজে আসা মুসলমানরা।

আরাফাত থেকে মিনায় ফেরার পথে মুজদালিফায় মাগরিব ও এশার নামাজ পড়ে তারা পাথর সংগ্রহ করেন, যা মিনার জামারায় শয়তানকে (প্রতীকী) উদ্দেশ্য করে ছোড়া হয়।

বৃহস্পতিবার সকালে ফজরের নামাজ শেষে মুসল্লিরা মিনায় ফিরে জোহরের নামাজ আদায় করেন এরপর শয়তানকে পাথর ছোড়ার পর্ব শেষ করে তারা কোরবানি দেন। কোরবানি শেষে ইহরাম ত্যাগ করে কাবা শরিফকে বিদায়ী তাওয়াফের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় হজের আনুষ্ঠানিকতা।

বিবিসির খবরে বলা হয়, স্থানীয় সময় সকাল ৯টার দিকে মিনা থেকে জামারার পথে ২০৪ ও ২২৩ নম্বর সড়কের সংযোগস্থলে পদদলনের এ ঘটনা ঘটে।

হাজিরা ‘শয়তানের স্তম্ভ’ ঘিরে থাকা পাঁচতলা কাঠামোর দিকে এগোনোর সময় ভিড়ের চাপ হঠাৎ বেড়ে গেলে হুড়োহুড়ি শুরু হয়। তাতে অনেকেই রাস্তায় পড়ে যান এবং পদদলনের সূচনা হয় বলে  সিভিল ডিফেন্সের বিবৃতিতে জানানো হয়।

ঘটনার পরপরই নিরাপত্তা বাহিনীর ও সৌদি রেড ক্রিসেন্টের চার হাজার সদস্য উদ্ধারকাজ শুরু করেন। ২২০টি অ্যাম্বুলেন্সে করে আহতদের আশপাশের চারটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

সৌদি আরবের স্বাস্থ্যমন্ত্রী খালেদ আল-ফালিহ বলেছেন, হাজিরা দিকচিহ্ন সঠিকভাবে অনুসরণ না করায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আসা অ্যামেচার ভিডিওতে দেখা যায়, ইহরাম পরিহিত শত শত মানুষ রাস্তায় পড়ে আছেন। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পানির বোতল, হুইল চেয়ার, ছেঁড়া কাপড়।

মিনায় শয়তানকে প্রতীকী পাথর ছোড়ার আনুষ্ঠানিকতা পালনের সময় বিপুল সংখ্যক মানুষের চাপে এর আগেও পদদলনের ঘটনা ঘটেছে। ২০০৬ সালে এমনই এক ঘটনায় ৩৪৫ জনের মৃত্যু হয়।

এরপর মিনার তিনটি শয়তানের প্রতীক স্তম্ভ ও জামারাত সেতুর সংস্কার করা হয়, যার ফলে ওই সেতু দিয়ে শয়তানের স্তম্ভ পর্যন্ত পৌঁছানো সহজ হয়েছে।

নিকট অতীতে হজ মৌসুমে সবচেয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে ১৯৯০ সালের ২ জুলাই। ওই ঘটনায় একটি সুড়ঙ্গে পদদলিত হয়ে ১ হাজার ৪২৬ জনের মৃত্যু হয়।

আর চলতি হজ মওসুম শুরুর পর গত ১২ সেপ্টেম্বর মক্কার মসজিদ আল-হারামের সম্প্রসারণ কাজে থাকা একটি ক্রেইন উল্টে পড়লে ১১৭ জনের মৃত্যু হয়।

গত চল্লিশ বছরে সৌদি আরবে হজ করতে গিয়ে বিভিন্ন দুর্ঘটনা ও রোগে ভুগে অন্তত তিন হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে গণমাধ্যমের খবর।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.