কালিহাতীতে পুলিশ-এলাকাবাসীর সংঘর্ষ, নিহত ২
সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৫ ঙ্গাইলের কালিহাতীতে মায়ের সামনে ছেলেকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করার ঘটনায় আজ শুক্রবার বিকেলে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ মিছিলে
পুলিশ গুলি চালালে দুইজন নিহত ও অন্তত পঞ্চাশজন কম বেশি আহত হয়েছেন। আহতদের টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে দুইজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, কালিহাতীতে মায়ের সামনে ছেলেকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করার প্রধান আসামী রফিকুল ইসলাম রোমা ও তার ভগ্নিপতি হাফিজুর রহমান দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে বিকেল চারটার দিকে মিছিল বের করে। কালিহাতী ও ঘাটাইল উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে কালিহাতী বাসস্ট্যান্ডে এসে একত্র হয়। সেখান থেকে পাঁচটার দিকে মূল মিছিল শুরু করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। তখন মিছিলকারীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায় মিছিলটি থানার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ আবার বাধা দেয়। এ সময় দুইপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকেও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। তখন উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। বাসস্ট্যান্ডে কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করা হয়। একটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়া হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি ছুড়ে। পুলিশের লাঠিচার্জ ও গুলিতে অর্ধশতাধিক আহত হয়। গুলিবিদ্ধ কয়েকজনকে কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে একজন এবং টাঙ্গাইলে নেয়ার পর আরেকজন মারা যান। নিহতরা হলেন কালিহাতীর কুষ্টিয়া গ্রামের ফারুক হোসেন (৩০), ঘাটাইল উপজেলার সালেঙ্কা গ্রামের শামীম হোসেন (৩১)। কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বেলায়েত হোসেন জানান, আহত অবস্থায় দশজনকে ভর্তি করা হয়। ফারুক হোসেন নামে একজন মারা যায়। বাকিরা গুরুতর আহত হওয়ায় তাদের টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।
টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. আশরাফ আলী জানান, চারজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। শামীম হোসেন নামে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকায় নেওয়ার উদ্দেশ্যে হাসপাতাল থেকে বের করার পরই সে মারা যায়। বাকি তিনজনের মধ্যে দুইজনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
এদিকে কালিহাতী বাসস্ট্যান্ড ও আশপাশের এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী ঘাটাইল উপজেলা হামিদপুরে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিকেল থেকেই সকল দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় এবং যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কালিহাতী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজহারুল ইসলাম তালুকদার বলেন, কালিহাতীতে এক মাকে অপমান করে তার সামনে ছেলেকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিকেলে দুই উপজেলার কয়েক গ্রামের মানুষ মিছিল করে। বাসস্ট্যান্ডে এলে পুলিশ বাধা দেয়। জনগণও পুলিশকে আক্রমণ করে। দুজন মারা গেছে। কয়েকজন আহতও হয়েছে। আমরা চাই নির্যাতনের ঘটনার চূড়ান্ত শাস্তি।
এ ব্যাপারে কালিহাতী থানার ওসি শহিদুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইলে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে সহকারী পুলিশ সুপার (গোপালপুর সার্কেল) তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার সঞ্চয় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি একজনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করেন। তবে পুলিশের গুলিতে তার মৃত্যু হয়েছে কিনা এ ব্যাপারে তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
প্রসঙ্গত, কালিহাতী উপজেলার সাতুটিয়া গ্রামের মোজাফফর আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম রোমার তৃতীয় স্ত্রীর সঙ্গে পার্শ্ববর্তী ঘাটাইল উপজেলার আঠারদানা গ্রামের এক ছেলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কয়েক মাস আগে ওই ছেলের সঙ্গে রোমার স্ত্রী চলে যায়। পরে পারিবারিক বৈঠকের মাধ্যমে স্ত্রীকে রোমার কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়। ঘটনার তিনদিন আগে রোমার স্ত্রী আবার ওই ছেলের কাছে চলে যায়। পরে গত মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রোমাকে বিষয়টি জানানো হলে সে (রোমা) তার ভগ্নিপতি হাফিজুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে স্ত্রীকে আনতে আঠারদানা গ্রামে ওই ছেলের বাড়ি যায়। তখন রোমা ও তার পরিবারের লোকদের সঙ্গে আলোচনার কথা বলে স্ত্রীসহ ওই ছেলে ও তার মাকে সাতুটিয়ায় নিজ বাড়িতে নিয়ে ওই ছেলেকে মারপিট শুরু করে। এক পর্যায় তাকে বিবস্ত্র করে ছবি তোলা হয় এবং লাঠি দিয়ে আঘাত করাসহ কিল, ঘুষি মারতে থাকে রোমা। ছেলের মুখ দিয়ে রক্ত পড়তে থাকলে মা এগিয়ে যায়। তখন মাকেও বিবস্ত্র করার কথা বলে রোমা তার (ছেলের মা) কাপড় ধরে টানতে থাকে। তখন ওই মহিলা বিবস্ত্র না করার জন্য আকুতি জানায়। পরে তাকে মারপিট করা হয়। তারপর ওই ছেলেকে তার মায়ের সঙ্গে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হতে বলে। তখন মা-ছেলে নিজেদের কান চেপে কান্না শুরু করলে তাদের একটি ঘরে নিয়ে তালাবদ্ধ করা হয়।
এ খবর জানাজানি হলে এলাকাবাসী এগিয়ে আসে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে এলাকাবাসীর সহায়তায় মা ও ছেলেকে উদ্ধার করা হয়। ওইদিনই তাদের ঘাটাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার পর ছেলেটির বাবা বাদি হয়ে কালিহাতী থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ঘটনার দিনই রোমাকে ও পরেরদিন তার ভগ্নিপতি হাফিজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে।