গৌতমবাবু-অরুণাভবাবুদের ওই নাগরিক মঞ্চের ছাতার তলাতেই কংগ্রেস এবং বামফ্রন্ট একসঙ্গে প্রার্থী দেবে, এমন জল্পনা তৈরি হয়েছিল কোনও কোনও মহলে। বামফ্রন্ট প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দেওয়ায় আপাতত সেই জল্পনায় ইতি পড়ল। এই নিয়ে প্রশ্নের জবাবে গৌতমবাবুর বক্তব্য,  ‘‘ফোরামের হয়ে প্রার্থী দেওয়া হবে, এই রকম কোনও আলোচনা তো হয়নি! ভারতের রাজনীতিতে দু’টো (সিপিএম এবং কংগ্রেস) দলের আলাদা অস্তিত্ব আছে। একটা ছোট শহরে এসে তারা হঠাৎ মিলে যাবে, এ রকম হয় নাকি! আমরা শুধু চাইছি, ভোটের সময় তৃণমূলের বাইক বাহিনীর দাপট এলাকার সবাই মিলে যাতে ঠেকিয়ে দেওয়া যায়।’’

অসীমবাবুর লড়াই অবশ্য মোটেও সহজ নয়। লোকসভা ভোটের নিরিখে দেখলে বিধাননগর পুর-এলাকায় বামেদের ফল ছিল শোচনীয়। তার উপরে তৃণমূল ময়দানে নেমে পড়েছে এই প্রচার নিয়ে যে, সিপিএম আর লোক খুঁজে পেল না! ভোটে হেরে প্রত্যাখ্যাত, বর্ষীয়ান এক নেতাই বিধাননগরে সিপিএমের মুখ! অসীমবাবুও বিলক্ষণ জানেন, এই প্রচারের মোকাবিলা তাঁকে করতে হবে। করুণাময়ী এলাকায় এ দিন সন্ধ্যাতেই প্রচার শুরু করে তিনি অবশ্য মানুষের ভাল সাড়াই পেয়েছেন। সেই প্রত্যয় থেকেই প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী বলছেন, ‘‘প্রচারের মোকাবিলা করব! এ বার অন্য রকম লড়াই হবে! লোকসভা ভোটে বেলা ১টার পর থেকে তো সুষ্ঠু ভোটই হয়নি।’’ বিধাননগরের মানুষ নিজের ভোট নিজে দিন এবং স্বচ্ছ প্রশাসন গড়ে উঠুক— এই দু’টি কথাই তাঁর প্রচারে তুলে আনছেন অসীমবাবু। সেই সঙ্গে বলছেন, ‘‘রাজারহাট-নিউটাউনে সিন্ডিকেটের দাপটে মানুষ অতিষ্ঠ। তাঁরা একটু শান্তি খুঁজছেন। আমরা শান্তির কথাই বলছি।’’ প্রসঙ্গত, পুরভোটে নামার ব্যাপারে অসীমবাবু গোড়ায় একটু নিমরাজি ছিলেন বলেই সিপিএম সূত্রের খবর। কিন্তু গৌতমবাবু এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মিলে বুঝিয়েছেন, বিধাননগরের মতো শিক্ষিত, শহুরে এলাকায় লড়াইয়ের উপযুক্ত মুখ তিনিই হতে পারেন। তাতে বাম কর্মী-সমর্থকেরাও বিধাননগরে হারানো জমি ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে উৎসাহিত হবেন। আর আপত্তি করেননি অসীমবাবু।

বামেরা প্রাক্তন এক মন্ত্রীকে সামনে রেখে লড়াইয়ে নেমে যাওয়ায় বিধাননগরের পুর-যুদ্ধ আরও উচ্চতায় উঠল। গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের কাঁটায় জেরবার শাসক দলও কি চাপে পড়ল না? মানতে নারাজ তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর সাফ কথা, ‘‘আমাদের সঙ্গে আছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ। আর ওরা তো প্রিমিয়ার ডিভিশনে হেরে গিয়ে এ বার সপ্তম ডিভিশনে নেমে পড়েছে! বাংলাকে দেনার দায়ে ডুবিয়ে দিয়ে গিয়ে এখন বিধাননগরকে বিক্রি করার জাল পাতছে সিপিএম! ওদের কাণ্ড দেখে মানুষ হাসছে!’’

হাসতে হাসতেই গৌতমবাবুও দাবি করছেন, ‘সিটিজেন্স ফোরাম’কে সামনে রেখে নির্বাচনের সন্ত্রাস মোকাবিলায় এ বার জোর লড়াই হবে। যদিও পার্থবাবু বা তৃণমূলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকেরা কটাক্ষ করছেন, বামেরা লাল পতাকা বার করতে ভয় পাচ্ছে বলে এই ফোরামের আশ্রয় নিচ্ছে! জ্যোতিপ্রিয়বাবু তো কোথাও কোথাও এমন দাবিও করেছেন, বিধাননগরে ফল ৪১-০ হবে! এই প্রশ্নে গৌতমবাবুর জবাব, ‘‘জ্যোতিপ্রিয়বাবুকে বলুন, খালের ও পারে বাইক রেখে সল্টলেকে আসতে! তার পরে দেখবেন, লোকে কেমন কান মলে দেয়!’’ কিন্তু বাইক কি কেউ রেখে আসবে? নিয়েই তো ঢুকবে! গৌতমবাবুর মন্তব্য, ‘‘আমরাও তৈরি হচ্ছি। কিছু বাইক জলে পড়বে!’’