ভারত থেকে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎকিনবে

আগস্ট ২৬, ২০১৫

বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন ও বিদ্যুৎ কেনা নিয়ে ভারতের আদানি ও রিলায়েন্স গ্রুপের সঙ্গে সরকার আরও সমঝোতায় যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে আদানির সঙ্গে ১০ আগস্ট দ্বিতীয় সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, আদানি গ্রুপ ভারতে তাদের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আগামী দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশের কাছে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বিক্রি করবে। ভবিষ্যতে বিক্রির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের যে প্রস্তাব আদানির রয়েছে, সে কাজও চলবে। আদানি ভারতে প্রায় ১১ হাজার মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করলেও বিদেশে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কোনো অভিজ্ঞতা তাদের নেই।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সরকারি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের গতি ধীর হওয়ায় সরকার আদানি ও রিলায়েন্সকে দেওয়া নতুন প্রস্তাবকে একটি বিকল্প হিসেবে ভেবেছে। বিশেষ করে পরিকল্পিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাস্তবায়ন ক্রমেই পিছিয়ে পড়ায় সরকার চিন্তিত। এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অগ্রগতিও আশানুরূপ নয়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় (গত ৬ জুন) আদানি ও রিলায়েন্সের সঙ্গে সরকার (বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড) আলাদা দুটি সমঝোতা স্মারক সই করেছিল। সেই সূত্র ধরে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কোম্পানি দুটির আরও একাধিক বৈঠক হয়েছে। সেসব বৈঠকে নতুন সমঝোতার বিষয় উঠে এসেছে।
রিলায়েন্স প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের প্রস্তাবের বাস্তবায়ন দুই পক্ষের জন্য অপেক্ষাকৃত কঠিন। কারণ, তারা মেঘনা ঘাটে ৭৫০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র করার জন্য গ্যাস সরবরাহের যে নিশ্চয়তা চায়, তা আমরা দিতে পারব কি না, নিশ্চিত নয়। অন্যদিকে মহেশখালীতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ভাসমান মজুতাগার ও পুনরায় গ্যাসে রূপান্তরকরণ ইউনিট (এফএসআরইউ) স্থাপন করে সেই গ্যাস দিয়ে রিলায়েন্স প্রায় ২ হাজার ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে প্রস্তাব দিয়েছে, সেটা তারা করতে পারবে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত নয়।’
মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, প্রথম সমঝোতা স্মারকে বলা হয়েছিল, আদানি গ্রুপ বাংলাদেশে মোট ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করবে। আর রিলায়েন্স মহেশখালীতে এফএসআরইউ স্থাপন করে আমদানি করা এলএনজি দিয়ে ২ হাজার ২৫০ মেগাওয়াট এবং মেঘনা ঘাটে বাংলাদেশের সরবরাহ করা গ্যাস দিয়ে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। দুটি কোম্পানিই তাদের উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাংলাদেশেই বিক্রি করবে।
এখন রিলায়েন্স গ্রুপকে সরকারের দেওয়া নতুন প্রস্তাবে বলা হচ্ছে, তারা ভারত কিংবা নেপালে জলবিদ্যুৎকেন্দ্র করে সব বিদ্যুৎ বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করুক।
এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিদ্যুৎ ও জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ম. তামিম বলেন, আন্তসীমান্ত বাণিজ্যের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বা জ্বালানি যত নেওয়া যায় ততই ভালো। এর ফলে নিজেদের বড় বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে না। পরিবেশদূষণ হবে না। আর এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি যদি বিদ্যুৎ নেওয়া যায় সেটা ভালো হবে বলে তিনি মনে করেন।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ (বিশেষ বিধান)’ শীর্ষক বিশেষ আইনের আওতায় আদানি ও রিলায়েন্সের অযাচিত (আনসলিসিটেড) প্রস্তাব গ্রহণ ও বাস্তবায়ন প্রয়োজন। ২০১০ সালে ওই বিশেষ আইনটি সরকার তিন বছরের জন্য করেছিল। পরে একাধিকবার তার মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সাল পর্যন্ত বহাল করা হয়েছে। এ আইনের আওতায় প্রচলিত দরপত্র-প্রক্রিয়া ছাড়াই কোনো কোম্পানিকে আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ দিতে পারে সরকার। এ নিয়ে কখনো কোনো আদালতেরও শরণাপন্ন হওয়া যাবে না।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.