১১ বছরেও শেষ হয়নি গ্রেনেড হামলার বিচার

আগস্ট ২১, ২০১৫

21 Augustঢাকা জার্নাল: ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা ও দলটিকে নেতৃত্বশূন্য করতে দেশের ইতিহাসে ভয়াবহতম নৃশংস বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলার বিচার ১১ বছরেও শেষ হয়নি।

এ সময়ে চারটি সরকার ক্ষমতায় এসেছে। পাঁচটি আদালত ঘুরেছে। একাধিক বিচারক মামলাটির কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর পরও চারটি বছর গত হয়েছে। কিন্তু মামলার নিষ্পত্তি হয়নি।

তবুও বছরের পর বছর ধরে দ্রুত নিষ্পত্তির আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন মামলায় নিয়োজিত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। তবে গত এক বছরে সাক্ষ্যগ্রহণের হার বেড়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মামলা প্রমাণের জন্য যে কয়েকজন সাক্ষীর সাক্ষ্যের প্রয়োজন হবে তা গ্রহণ করে এ বছরের মধ্যেই বিচার নিষ্পত্তির একটি পর্যায় আসবে।

তিনি আরও বলেন, আইনকে সমুন্নত রেখে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে যতো দ্রুত সম্ভব মামলাটি এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।

রাষ্ট্রপক্ষের অপর আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, গত ১ বছরে ৮৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। এর আগে নেওয়া ৯২ জনসহ মোট ১৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য সমাপ্ত হয়েছে। এ মামলায় সাক্ষীর সংখ্যা ৪৯১ জন। আসামির সংখ্যা ৫২ জন।

তিনি বলেন, মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও গ্রেনেড হামলায় নিহত আইভি রহমানের ছেলে নাজমুল হাসান পাপনসহ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত করা হবে।

আগামী ডিসেম্বর নাগাদ এ মামলার নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

মামলাটির প্রধান আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমানের সহকারী আইনজীবী আকরাম হোসেন শ্যামল জানান, মামলাটি দুই দফা তদন্তে সময় লেগেছে ৬ বছর। তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছেন ছয়বার। আসামিপক্ষ বিভিন্ন সময় হাইকোর্টে যাওয়ায় ২৯২টি কার্যদিবস তথা প্রায় দু’বছর মামলার কার্যক্রম স্থগিত ছিল। প্রায় ৮ মাস ধরে মামলাটির চার্জ শুনানির পর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে। তারা বিচারের জন্য দুই বছরের কিছু বেশি সময় পেয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, মামলাটি প্রমাণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময়টিতে এ মামলাটিকে উল্টো পথে পরিচালনা করা হয়েছে। মামলার তদন্তের নামে এর আলামত ধ্বংস করা হয়েছে। অনেক আলামত ধ্বংসের চেষ্টা করা হয়েছে। জজ মিয়া নাটক সৃষ্টি করে মূল আসামিদের আড়াল করার চেষ্টা করা হয়েছে। তারপরও মামলাটিতে যেভাবে সাক্ষ্য আসছে তাতে সকল আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করা সম্ভব হবে।

আসামি মুফতি হান্নানের আইনজীবী সাইফুর রশিদ সবুজ বলেন, তদন্ত যেভাবে চলছে, মামলার বিচারও সেভাবে চলছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য না হওয়া পর্যন্ত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবে কি হবে না এখনই বলা যাচ্ছে না।

২০০৮ সালের ১১ জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ২২ জনকে অভিযুক্ত করে প্রথম চার্জশিট দেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সিনিয়র সহকারী সুপারিন্টেনডেন্ট ফজলুল কবির।

চার্জশিট দাখিলের পর মামলাটির বিচার শুরু হয় ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে। ২০০৮ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে ২০০৯ সালের ৯ জুন পর্যন্ত মাত্র ৭ মাস ১২ দিনে ট্রাইব্যুনাল ৬১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।

কিন্তু ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনক্রমে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। হামলায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেডের উৎস, এর মদদদাতা, সরবরাহকারী ও পরিকল্পনাকারীর নাম উল্লেখ না থাকায় রাষ্ট্রপক্ষের অধিকতর তদন্তের আবেদনক্রমে ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।

এবার মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ।  ১৩ আগস্ট থেকে তিনি মামলাটির অধিকতর তদন্ত শুরু করেন। ২০১১ সালের ৩ জুলাই সম্পূরক চার্জশিট দাখিলের মধ্য দিয়ে মামলাটির তদন্ত শুরু শেষ হয়। দুই দফায় তদন্তে সময় লাগে ৬ বছর।

সম্পূরক চার্জশিটে আসামি হন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক মন্ত্রী জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ আরও ৩০ জন। এতে আগের ২২ জনসহ মোট আসামি দাঁড়ায় ৫২ জনে।

২০১২ সালের ১৮ মার্চ বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সম্পূরক চার্জশিটের ৩০ আসামির বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগ গঠন করে ফের বিচার শুরু হয়।

মামলার ৫২ আসামির মধ্যে খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহিদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং মামলাটির তিন তদন্ত কর্মকর্তা সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডি’র সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, এএসপি আব্দুর রশীদ ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম জামিনে আছেন।

সাবেক মন্ত্রী জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, হুজি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ২৬ জন আসামি কারাগারে আটক আছেন।

অন্যদিকে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক এমপি কাজী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদসহ ১৮ জন আসামি পলাতক আছেন।

মামলার আটজন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা হলেন- মুফতি হান্নান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি, শরীফ শাহেদুল আলম বিপুল, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, জাহাঙ্গীর আলম, আরিফ হাসান সুমন ও রফিকুল ইসলাম সবুজ।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের জনসভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নির্মমভাবে নিহত হন। তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রানে বেঁচে যান। আহত হন শতাধিক নেতাকর্মী।

এ ঘটনায় মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক ফারুক হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল জলিল ও সাবের হোসেন চৌধুরী বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেন।

পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে স্থাপিত ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের অস্থায়ী আদালতে মামলার বিচার চলছে। আগামী ২৪ ও ২৫ আগস্ট মামলাটির বাকি সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য আছে।

ঢাকা জার্নাল, আগস্ট ২১, ২০১৫

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.