৫০ পোশাক কারখানা, বেকার ৩০ হাজার শ্রমিক

আগস্ট ১৪, ২০১৫

Soawnঢাকা জার্নাল: ভালো নেই সদ্য বন্ধ হয়ে যাওয়া রাজধানীর আরএম ফ্যাশন গার্মেন্টের অপারেটর রুনা। এক মাস ধরে বেকারজীবন কাটাতে হচ্ছে তাকে। রুনাকে সারাদিন বিভিন্ন কারখানায় ছুটতে হয় কাজের সন্ধ্যানে। কিন্তু বারবার নিরাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে। এই দশা কেবল রুনার নয়, গত সাত মাসে বন্ধ হয়ে যাওয়া  পোশাক কারখানাগুলোর ৩০ হাজার বেকার শ্রমিকের দিন এভাবেই কাটছে।

রুনা বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে হঠাৎ করেই কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরে অবশ্য আমাদের সব পাওনাদি দিয়ে দেওয়া হয়েছে।  কিন্তু এই কিছু টাকায়  কয় দিন আর চলবে! যেখানেই যাই, বলে ‘কাজ  নাই’। ওপরওয়ালাই জানেন, সামনের দিনগুলো কিভাবে কাটবে।’

আরএম ফ্যাশনে প্রায় ৪শ’ শ্রমিক কর্মরত ছিলো বলে জানান রুনা।

অন্যদিকে রাজধানীর এক গার্মেন্টস মিফকিফ বন্ধ হয়ে যায় চলতি বছরের শুরুর দিকে। কারখানাশ্রমিক সুমন গত ছয় মাসেও কাজের সন্ধান পাননি বলে জানিয়েছেন বাংলানিউজকে।

টেক্সটাইল গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশন সূত্রে জানা যায়, একইভাবে বন্ধ হয়ে গেছে লিরিক, বনী সহ দেশের প্রায় ৫০ টি গার্মেন্ট কারখানা।

সূত্রমতে, ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে জুলাই পর্যন্ত ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৫০ টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বেকার হতে হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিককে।  তেমন কোনো গার্মেন্টেই নতুন নিয়োগ হচ্ছে না। বেশিরভাগ কারখানার সামনেই ঝুলছে “কর্মখালি নাই”। মূলত শেয়ার্ড বিল্ডিংয়ে যেহেতু কারখানা না রাখার নিয়ম শুরু হয়েছে তাই বন্ধ হয়ে গেছে এসব  কারখানা। কিছু কারখানার আবার আর্থিক দৈন্যের কারণে মালিকপক্ষকে গার্মেন্ট বন্ধ করে দিতে হয়েছে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন টেক্সটাইল গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশন এর সাধারণ সম্পাদক তপন সাহা।

তপন সাহা বাংলানিউজকে বলেন, ‘অ্যাকর্ড-অ্যালায়ান্সের পরিদর্শনে শেয়ার্ড বিল্ডিংয়ে কারখানা রাখাকে নেতিবাচকভাবে দেখা হচ্ছে। অনেক কারখানাকে অ্যাকর্ড থেকে ত্রুটিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর তা দেখে অনেক মালিক ভয়েই কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছেন। কারখানা যেমনই হোক, সমস্যা যেমনই থাকুক না কেন কাজতো ছিলো! কিন্তু গত সাত মাসে এ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারখানার সংখ্যা প্রায় ৫০টি কারখানার প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক বেকার এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পানে তাকিয়ে আছেন।

তবে বন্ধ হয়ে যাওয়া বেশিরভাগ কারখানার মালিকরা আইন অনুযায়ী বা শ্রমিকদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে পাওনাদি পরিশোধ করেছেন  বলে জানিয়েছেন এই শ্রমিকনেতা।

কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করলেও ৩০ হাজার শ্রমিকের বেকার থাকার বিষয়টি স্বীকার করেননি বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি মোঃ শহীদুল্লাহ আজীম।

শহীদুল্লাহ আজীম বলেন, শেয়ার্ড বিল্ডিংয়ে এখন আর ক্রেতারা অর্ডার দিতে চান না। তাই অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এটাই সত্যি। তাতে শ্রমিকরা বেকার হয়েছে এটাও ঠিক। কিন্তু অনেক নতুন কারখানা হয়েছে এবং হচ্ছে। এসব কারখানায় শ্রমিকদের চাকরি হচ্ছে। এবং নতুন যেসব কারখানা হচ্ছে তাতের নতুন শ্রমিক আবশ্যক। ফলে শ্রমিকদের বেকার থাকার সুযোগ নেই।

৯২ দিনের রাজনৈতিক অস্থিরতায় অর্ডার হারিয়ে অনেক উদ্যোক্তাই বিপাকে পড়েছেন বলে দাবি করেছেন পোশাকশিল্প মালিক এই নেতা।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে সহস্রাধিক শ্রমিক নিহত হওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ক্রেতাদের সংগঠন হিসেবে গড়ে ওঠে অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্স। শেয়ার্ড বিল্ডিংয়ের কারখানাকে অর্ডার না দেয়াসহ নানা সিদ্ধান্ত নেন ক্রেতারা। তারপর থেকে বিভিন্ন সময়ে অগ্নিনিরাপত্তা ইস্যুতে বাংলাদেশে বেশ কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। তারপর ৯২ দিনের রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাবে অর্ডার হারিয়ে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক কারখানা।  রিপোর্ট ঊর্মি মাহবুব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা জার্নাল, আগস্ট ১৪, ২১০৫

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.