ব্লগার নিলয় হত্যা, প্রতিমন্ত্রীর ভাতিজা গ্রেপ্তার

আগস্ট ১৪, ২০১৫

ঢাকা জার্নাল: ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয় হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার সন্দেহে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুর ভাতিজা।

বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম দুজনকে গ্রেপ্তারের খবর নিশ্চিত করেন।

প্রতিমন্ত্রীর ভাতিজা সাদ আল নাহিনকে উত্তরা থেকে এবং মাসুদ রানা নামে অন্যজনকে মিরপুরের কালশী থেকে বৃহস্পতিবারই গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ কর্মকর্তা মুনতাসিরুল বলেন, এরা দুজনই আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। গত শুক্রবার (আগস্ট ৭) রাজধানীর পূর্ব গোড়ানের ৮ নম্বর রোডের ১৬৭ নম্বর বাসায় ব্লগার নিলয় খুন হন। বাড়িতে চার যুবক হামলা চালিয়েছিল।

Saad-Al-Nahin-ed
সাদ আল নাহিন (ফেইসবুক থেকে নেওয়া )

গ্রেপ্তার দুজন ওই চারজনের কেউ কি না- জানতে চাইলে গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মাহবুবুল আলম বলেন, তা এখনও নিশ্চিত না। নিলয় হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত ছিল, তাদের সম্পর্কে এদের কাছে তথ্য পাওয়া যেতে পারে। আমাদের কাছেও কিছু তথ্য রয়েছে, আমরা এদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তা যাচাই-বাছাই করব।

গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. নুরুন্নবী বলেন, অন্য এক ব্লগারকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে মাসুদ রানার বিরুদ্ধে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর ছাত্র নাহিনকে কয়েকদিন আগে পুলিশ তুলে নিয়েছিল বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছিল। তবে পুলিশ স্বীকার করেনি।

নাহিন ব্লগার আসিফ মহীউদ্দীন হত্যাচেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বছর খানেক কারাগারে থেকে জামিনে ছাড়া পান।

২০১৩ সালে উত্তরায় আসিফের উপর হামলা হয়েছিল। তার মাস খানেক পর গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের মধ্যে মিরপুরের কালশীতে খুন হন ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার।

এরপর এই বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান বাবু ও অনন্ত বিজয় দাশ। সর্বশেষ গত ৭ অগাস্ট নিজের বাড়িতে খুন হন ব্লগার নিলয়।

এসব হত্যাকাণ্ডে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম জড়িত বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা দাবি করে আসছিলেন। সংগঠনটির প্রধান মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানী ব্লগার রাজীব হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত।

নিলয় হত্যাকাণ্ডের পর কয়েকদিন আগে পুলিশ পরিচয়ে উত্তরার বাসা থেকে নাহিনকে তুলে নেওয়া হয় বলে তার বাবা নজরুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন।

নজরুল হক কিশোরগঞ্জের একটি স্কুলের শিক্ষক। তিনি কিশোরগঞ্জের তাড়াইলের দাহিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, গত শনি বা রোববার গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে এসে একটি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে আমার ছেলেকে নিয়ে যায়। এরপর আমরা আর তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি।

নাহিনকে তুলে নেওয়ার খবর বড় ভাই জাতীয় পার্টির নেতা মুজিবুল হক চুন্নুকে জানিয়েছিলেন নজরুল।

মুজিবুল হক বলেন, এই সপ্তাহের শুরুতে আমার ভাই ফোন করে জানিয়েছিল,  নাহিনকে গোয়েন্দা পুলিশ কোনো একটি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছে। এরপর থেকে নাহিনের বাবার সঙ্গে আমার আর যোগাযোগ হয়নি।

আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কেউ যদি কোনো অপরাধে জড়িয়ে থাকে, আইন অনুযায়ী তার বিচার হোক, এটা আমার প্রত্যাশা, যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।

নজরুল হক বলেন, আগের একটি মামলায় নাহিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। জামিন পাওয়ার পর ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা একাধিকবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করে বিভিন্ন ধরনের তথ্য চাইতেন। নাহিদ তাকে সাধ্যমতো সাহায্যও করত।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, ২০১৩ সালে উত্তরায় ব্লগার আসিফ মহীউদ্দীনের উপর হামলার পর নাহিন গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। এক বছরের বেশি সময় কারাবাসের পর তিনি জামিনে ছাড়া পান।

আসিফ মহীউদ্দীন হত্যাচেষ্টা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক নিবারণ চন্দ্র বর্মন বলেন, নাহিন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সক্রিয় সদস্য বলে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন। তারা কয়েকজন ব্লগার আসিফ মহীউদ্দীনকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন বলে স্বীকার করেন।

ঢাকা জার্নাল, আগস্ট ১৩, ২০১৫।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.