‘রাকিব মরেনি, মরেছে খুলনার মানুষের বিবেক’

আগস্ট ৫, ২০১৫

Rakibঢাকা জার্নাল (খুলনা): ‘রাকিব মরেনি, মরেছে খুলনার মানুষের বিবেক, রাকিব ক্ষমা করে দিস- আমরা মানুষ নই, মানবিকতা, মানবতা, বিবেক সবই সমাজ দেখানো ভাই, পারলে ক্ষমা করে দিস এই মেকি সভ্যতাকে, এ সমাজ নষ্ট সমাজ, নষ্টা নারীর পথভ্রষ্ট সন্তানের সমাজ’।

খুলনার এক চাকরিজীবী এস এম শের আলী শেরবাগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রাকিব  হত্যার প্রতিবাদ জানাতে এমন উক্তি করেছেন।

ক্ষোভের সাথে তিনি লিখেছেন, ‘প্রকৃতির হাওয়া থেকে বঞ্চিত করে কেন রাকিবকে সিলিন্ডারের হাওয়া দিলো খুনিরা, রাকিবের হত্যাকারীদের বিচার বাংলার মাটিতে হবে তো? আর কত রাজন, রাকিবরা অকালে খুনিদের শিকার হবে?

পৈশাচিক কায়দায় খুলনায় রাকিবের মলদ্বারে কমপ্রেসার মেশিন বসিয়ে পেটে বাতাস ঢুকিয়ে তাকে হত্যার ঘটনায় এস এম শেরআলী শেরবাগের মতো হাজার হাজার মানুষ ছবি দিয়ে, স্ট্যাটাস লিখে, মন্তব্য করে ফেসবুকে পোস্ট করছেন। আবার কেউ কেউ নিজেদের মন্তব্য দিয়ে তৈরি করেছেন কবিতা। যেখানে ঘৃণা প্রকাশ করে।

ফাঁসি দাবি করা হয়েছে গ্যারেজ মালিক শরীফ ও সহযোগী মিন্টুর। জাকির হোসেন তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এদের আদালত পর্যন্ত আসার সময় দেয়া উচিৎ নয়।’ গোলাম কিবরিয়া লিটন লিখেছেন, ‘এদের ফাঁসি হওয়া উচিত’।

রাকিব হত্যার প্রতিবাদে এভাবেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন দেশের সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে যার মতো করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এভাবেই খুনিরা ফেসবুক পরিবারের লাখ লাখ সদস্যের ঘৃণার আগুনে দগ্ধ হচ্ছে। অসংখ্য ফেসবুক ব্যবহারকারী পোস্ট ও কমেন্টের মাধ্যমে নিন্দা জানাচ্ছেন। দাবি জানাচ্ছেন হত্যাকারীদের কঠোর সাজার। অনেকেই রাকিবের হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার চেয়ে নিজেদের প্রোফাইল ও কভার ফটো পরিবর্তন করেছেন।
অনলাইন রাইটার্স এসোসিয়েশন বাংলাদেশের ফেসবুক পেজে দালান জাহান নামের এক ব্যক্তি ‘হে মানবতা তুমি কোথায় ?’ শিরোনামের একটি কবিতার এক জায়গায় লিখেছেন-

‘আর কত রাজন আর কত রাকিবের/ মতো নক্ষত্র শিশুরা/ শিশির সুস্নিগ্ধ আলোর কুটিরে/ অনবৃত্ত পৃথিবীর মায়া-কেটে/নির্মম যন্ত্রণায় ছাড়বে গালাময় নিঃশ্বাস ?/জবাব দিতে পার কি ?/হে সভ্য মানব জাতি/ কোথায় কণ্ঠাগত মানবতার দালালগিরি ?/জবাব দিতে পার কি হে ন্যায় বিচারক?/নিশিদিন সকরুণ মৃত্যু বজ্রবেলার ?/এ কেমন প্রহসনের খেলায়/মেতেছে আমার মানুষেরা/তবে কি/তোমাদের পৃথিবীতে নিষ্পাপ শিশুরাও নিঃশ্বাস নিতে পারবে না !!!?

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়া অবস্থায় প্রথমে রাকিবের ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করে আলোড়ন সৃষ্টিকারী সংবাদকর্মী তপু বিশ্বাস বলেন, ‘এ রকম ক্ষোভ, এ রকম প্রতিক্রিয়া- মানুষের একেবারে ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে, এত স্বতঃস্ফূর্ত আবেগের বহিঃপ্রকাশ, খুলনার কোন বিষয়ে এর আগে চোখে পড়েনি।’

তিনি জানান, ‘সামাজিক যোগাযোগের হোম পেজে গেলেই স্পষ্ট বোঝা যায় তার তোলা ওই ছবিটি মানুষজনকে কিভাবে নাড়া দিয়েছে।’

শিশু রাকিবের হত্যাকাণ্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে যেমন ঝড় তুলেছে, পাশাপাশি বিষয়টি যথাযথ গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও।

মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক সংবামাধ্যম বিবিসি বাংলায় রাকিব হত্যাকাণ্ডের শিরোনাম ছিল ‘খুলনায় শিশু শ্রমিককে বর্বরোচিত নির্যাতন করে হত্যা’। একইভাবে প্রায় সবগুলো অনলাইন নিউজপোর্টাল, জাতীয় দৈনিক ও টেলিভিশন চ্যানেলে গুরুত্ব পেয়েছিলো খবরটি।

এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, অরাজনৈতিক এবং মানবাধিকার সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিবৃতিতে রাকিবের হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার আইনের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।

বিবৃতি প্রদানকারী সংগঠনগুলো হলো- খুলনা মহানগর বিএনপি, মহানগর ছাত্রলীগ, ওয়ার্কার্স পাটি, ইসলামী আন্দোলন, উদীচী, মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা, জনউদ্যোগ, বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন, খুলনা নাগরিক সমাজ, চাইল্ড রাইটস এ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন, বিভাগীয় মটর সাইকেল গ্যারেজ সমিতি।

ঢাকা জার্নাল, আগস্ট ৫, ২০১৫

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.