‘রাজনের মরদেহ ফেলতে গিয়ে আমি ধরা খাই’

জুলাই ২২, ২০১৫

rajon Moynaঢাকা জার্নাল: শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যার ঘটনায় নিজের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন মামলার প্রধান আসামি মুহিত আলম।

বুধবার (২২ জুলাই) বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত দেড় ঘণ্টাব্যাপী মহানগর মুখ্য হাকিমের তৃতীয় আদালতে ১৬৪ ধারায় তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন বিচারক আনোয়ারুল হক।

এর আগে দুপুরে পুলিশি প্রহরায় মুহিতকে আদালতে আনেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) সুরঞ্জিত তালুকদার।

মুহিত আলমের জবানবন্দির বরাত দিয়ে আদালত সূত্র জানায়, মুহিত জবানবন্দিতে দাবি করেছেন, তার ভাইয়েরা ও ময়না চৌকিদারসহ আটককৃতরা মিলে রাজনকে নির্যাতন করেন। ঘটনার দিন ছোট ভাই কামরুল তাকে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘চোর ধরেছি’। তখন ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি দেখতে পান, কামরুলসহ কয়েকজন তাকে বেঁধে মারপিট করছে।

Razonওই সময় রাজনকে হাসপাতালে নিতে মাইক্রোবাসে ওঠান বলে দাবি করে মুহিত আলম বলেন, মাইক্রোবাসে তোলার সময় রাজন মারা গেছে দেখে মরদেহ ফেলে আসার প্রক্রিয়ায় অন্যদিকে রওনা হই। কিন্তু মাইক্রোবাসযোগে মরদেহ ফেলতে গিয়ে স্পিড ব্রেকারে গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় গাড়িতে মরদেহ দেখে জনতা তাকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। মরদেহ ফেলতে গিয়েই আমি ধরা খাই।

তবে নির্যাতনের সময় তিনি নিজে উপস্থিত ছিলেন বলে স্বীকার করেন মুহিত আলম। ‘চোর’ ধরার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান বলে আদালতে জবানবন্দি দেন তিনি। গ্রেফতারকৃতরাসহ জড়িত আরও ২/৩ জনের নাম বলেন মুহিত। যারা এখনও আটক হননি। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (ওসি) সুরঞ্জিত তালুকদার বলেন, মুহিত আলম দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে আদালতের বিচারক তাকে কারাগারে প্রেরণের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন।

গত ৮ জুলাই শিশু রাজনকে নির্মম নির্যাতন করে হত্যার পর মরদেহ গুম করার সময় মুহিত আলমকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয় জনতা।

গ্রেফতারের পর আসামি মুহিত আলমের দুই দফায় পাঁচদিন ও সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হ্য়। দ্বিতীয় দফা রিমান্ডের পঞ্চম দিনে মুহিত আলম আদালতে স্বীকারোক্তি দেন। একই সঙ্গে সাতদিনের রিমান্ডে রয়েছেন মুহিত আলমের ভাই আলী হায়দার ও তালতো ভাই আবলুস।

গত ৮ জুলাই সকালে চুরির অপবাদ দিয়ে পৈশাচিক নির্যাতন চালিয়ে ১৩ বছরের শিশু সামিউল আলম রাজনকে হত্যা করা হয়। শিশু রাজনকে পেটানোর ভিডিও ফুটেজ ধারণ করে নির্যাতনকারীরাই ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেন। ২৮ মিনিটের ওই ভিডিওচিত্র দেশ-বিদেশে তোলপাড় সৃষ্টি করে।

নিহত রাজন কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের বাদেআলী ভাইয়ারপাড় গ্রামের মাইক্রোবাস চালক শেখ আজিজুর রহমান আলমের ছেলে। রাজন হত্যার ঘটনায় নিহতের পিতা বাদী হয়ে মুহিত আলমকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

এ মামলায় এ পর্যন্ত সৌদি আরবে আটক কামরুল ছাড়াও এক নারীসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।  ইতোমধ্যে এ মামলায় দুই প্রত্যক্ষদর্শী আসামিসহ মোট ছয়জন শিশু রাজন হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। অন্যরা হলেন, চৌকিদার ময়না, চা দোকানি দুলাল, নির্যাতনের ভিডিওচিত্র ধারণকারী নুর মিয়া এবং প্রত্যক্ষদর্শী আসামি ফিরোজ আলী ও আসমত উল্লাহ।

ঢাকা জার্নাল, জুলাই ২২, ২০১৫

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.