‘বিজিএমইএ অসুস্থ, সরকার অমানবিক’

জুলাই ১৮, ২০১৫

kamalঢাকা জার্নাল: রাজপথে সোয়ান গার্মেন্টস শ্রমিকদের ঈদের দিন খেয়ে না খেয়ে কাটলেও খবর নেয়নি বিজিএমইএ কিংবা সরকার।

আর সে কারণেই বিজিএমইএ-কে অসুস্থ এবং সরকারের এ আচরণকে অমানবিক অভিহিত করেন আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা।

ঈদের দিন শনিবার সকাল থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন সোয়ান শ্রমিকরা। শ্রমিকদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন দেশের বিশিষ্ট জনেরা।

শ্রমিকদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে সমাবেশে বিজিএমইএ-এর উদ্দেশে ড. কামাল হোসেন বলেন, আপনার আমার অনেক সেবা নিয়েছেন। আপনাদের হয়ে কতবার আমি বিদেশ গিয়েছি, খুঁজে দেখেন। বিদেশে আপনাদের জিজ্ঞেস করা হয়েছিল ‘তোমাদের শ্রমিক আছে?’ আপনারা বলেছিলেন- আছে। আজকে আমার শ্রমিকরা ন্যায্য শ্রমের মুজুরীর জন্য ঊদের দিনে ঈদ না করে ফুটপথে বসে আছে।আপনাদের আজ সুস্থ মনে হচ্ছে না। আপনার আজ অসুস্থ।

ড. কামাল হোসেন বিজিএমইএ-এর সুস্থতা কামনা করে মোনাজাতের জন্য শ্রমিকদের আহ্বান জানান সমাবেশে।

soawn lastবাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সভাপতি মুজহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে ১০ জুলাইয়ের মধ্যে বেতন এবং ১৪ জুলাইয়ের মধ্যে উৎসব ভাতা প্রদানের নির্দেশের কথা বলেছিলেন। আমি প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করতে চাই- সোয়ান গার্মেন্টস কর্মীরা কি শ্রমিক নয়? তাহলে তারা বেতনের জন্য ঈদের দিনেও প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থঅন করছেন। তাহলে কি আপনার নির্দেশ পালন করা হয়নি। নাকি শ্রমিকদের সঙ্গে ভাওতাবাজি করা হচ্ছে।

যদি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়ন না হয়, আমরা এমন প্রধানমন্ত্রী চাই না। আর যদি ভাওতাবাজি হয়, তাহলেও ভাওতাবাজ প্রধানমন্ত্রী চাই না।

সিপিবি সভাপতি আরো বলেন, আমাদের অর্থমন্ত্রীর কাছে হলমার্ক কেলেঙ্কারির ৪ হাজার কোটি টাকা কোনো টাকাই নয়। তাহলে শ্রমিকের মাত্র চার কোটি টাকা কোনো দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

সিপিবির সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান খান বলেন, দেশে একজন প্রধানমন্ত্রী আছেন, শ্রমমন্ত্রী আছেন, বাণিজ্যমন্ত্রী আছেন, বিজিএমইএ রয়েছে। অথচ গত সাত দিনে কেউ শ্রমিকদের খোঁজ নেয়নি। শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেননি। এমন অমানবিক সরকার আমি দেখিনি।

s g 1বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জমান বলেন, জাতীয় সংসদ একটি ক্লাবে পরিণত হয়েছে। জাতীয় সংসদের চল্লিশ জন সদস্য রয়েছেন, যারা গার্মেন্টস মালিক। সরকার চাইলে দুই ঘণ্টার মধ্যে সরকারের জরুরী তহবিল থেকে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা সম্ভব। সরকার কোনো উদাহরণ সৃষ্টি করতে চান না বলেই শ্রমিকদের এ অমানবিক অবস্থার মধ্যে দিন যাপন করতে হচ্ছে। ঈদের দিনেও রাস্তায় কাটাতে হচ্ছে।

সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য হায়দার আকবর খান রনো বলেন,এই সরকার নিজেদের শ্রমিক বান্ধব হিসবে দাবি করে। অথচ শ্রমিকরা দীর্ঘ সাত দিন ধরে রাস্তায় রোদ বৃষ্টিতে রাজপথে দিন কাটাচ্ছে। ঈদের দিনেও রাস্তায় কাটছে তাদের। তারা আশা করেছিল ঈদের আগেই তারা তাদের বেতন পাবে। কিন্তু সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

সোয়ান শ্রমিক মাকসুদা সমাবেশে বলেন, আমার আজকে সেমাই চিনি নিয়ে ঈদ করার কথা। আমি বেতন পাইনি, তাই সন্তানদের সঙ্গে ঈদ করতে পারছি না। মাত্র তিন হাজার টাকার আমার সন্তানের পরীক্ষা দেওয়া হয়নি।

মাকসুদা আহাজারি করে বলেন, যে সরকার আমাদের খবর নেয় না, সেই সরকার আমরা চাই না। আমরা প্রয়োজনে সব শ্রমিক রাস্তায় নামবো। এই সরকারকে ক্ষমতায় থাকতে দেবো না।

ঈদের দিন শ্রমিক আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে সমাবেশে অংশ নেন যুব ইউনিয়নের সভাপতি কাফী রতন, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হাকিম লালা, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ জহির চন্দন, সিপিবি নেতা আহসান হাবিব লাভলু,ডা: সাজেদুল হক রুবেল, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নেতা আব্দুর রাজ্জাক, খালেকুজ্জামান লিপন,গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী,  গণজাগরন মঞ্চের মূখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার, তরূন লেখক ও ব্লগার পারভেজ আলম,  বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাংগাঠনিক সম্পাদক জিলানী শুভ, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি অ্যডভোকেট মন্টু ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক কাজী রুহুল আমিন এবং যুগ্ম সম্পাদক জলি তালুকদার।

ঢাকা জার্নাল, জুলাই ১৮, ২০১৫।

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.