হাসান আলী কোথায়?

জুন ১০, ২০১৫

Hasan_ali_01_633212558ঢাকা জার্নাল: একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত কিশোরগঞ্জের তাড়াইল থানার রাজাকার কমান্ডার সৈয়দ মো. হাসান আলী কোথায় পালিয়ে আছেন তার কোনো তথ্য নেই সংশ্লিষ্ট কারো কাছে। এ মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু থেকে রায় পর্যন্ত কোনো হদিস মেলেনি তার।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা, প্রসিকউশন এমনকি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শেষ পর্যন্ত আসামিকে ও তার অবস্থান শনাক্ত করতে পারেননি।

ট্রাইব্যুনাল বার বার বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়ার পরও হাসান আলীকে গ্রেফতারের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

এদিকে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হাসান আলীর ছবি নিয়েও সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। ছবিটি আসলেই হাসান আলীর কি-না মঙ্গলবার (৯ জুন) রায় প্রদানের দিনও ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গনে অনেক সাংবাদিকদের বলাবলি করতেও দেখা গেছে।

আসামির অনুপস্থিতিতে বিচার  শেষ করা ট্রাইব্যুনালের জন্য খুব হতাশাজনক বলেও  রায় ঘোষণাকালে উল্লেখ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। আসামি গ্রেফতারে সংশ্লিষ্ট বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ট্রাইব্যুনাল।

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে মঙ্গলবার ১৯তম এ রায় ঘোষণা করা হয়। ১৯ মামলার রায়ে ২১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করেছেন উভয় ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে পাঁচটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ছয়জন আসামি পলাতক।

ছয়জনের মধ্যে পাঁচ আসামি কোথায়, কোন দেশে পলাতক তদন্ত সংস্থা থেকে তা বিভিন্ন সময় উল্লেখ করা হলেও হাসান আলী কোথায় তার কোনো হদিস নেই সংস্থার কর্মকর্তাদের কাছে। সংশ্লিষ্ট অন্য সংস্থাগুলোর কাছেও এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই।

হাসান আলীর অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে মামলাটির সংশ্লিষ্ট প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী বলেন, হাসান আলী কোথায় আছে তা আমার জানা নেই। বিচারের শুরু থেকেই এ আসামি পলাতক রয়েছেন।

সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত ছবিটি হাসান আলীর কি-না জানতে চাইলে ট্রাইব্যুনালের এই প্রসিকউটর বলেন, এটাই আসল হাসান আলীর ছবি। পুলিশ ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে এ ছবি সংগ্রহ করা হয়েছে। বিশ্বস্থ স্থান থেকে ছবিটি কেউ একজন সংগ্রহ করেছেন।

এ বিষয়ে হাসান আলীর পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আব্দুস শুক্কুর খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হাসান আলীর যে ছবিটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তা তার জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এটাই হাসান আলীর আসল ছবি।

হাসান আলী কোথায় আছেন বা তার কাছে কোনো খোঁজ আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি কোথায় আছেন, তা আমার জানা নেই। আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগও হয়নি। তবে বিচার শুরু হওয়ার ২/৩ মাস পর হাসান আলীর ভাতিজা পরিচয় দিয়ে একজন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। সাফাই সাক্ষীসহ বিভিন্ন তথ্যও দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরে আর কোনো যোগাযোগ করেননি তিনি।

আইনজীবী শুক্কুর খান বলেন, আমার ধারণা, হাসান আলী বিদেশে পালিয়ে আছেন।

তদন্ত সংস্থার সদস্য মতিউর রহমান বলেন, আমার মনে হয়, হাসান আলী দেশের মধ্যেই পালিয়ে আছেন। রাজনৈতিক পরিচয়ে ছোট রাজাকার হওয়ায় পালিয়ে থাকা তার জন্য সহজ হচ্ছে।

এ মামলার সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা হরি দেবনাথের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এ পর্যন্ত দুই ট্রাইব্যুনাল থেকে ঘোষিত পাঁচ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ছয় পলাতক আসামি হচ্ছেন- মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সাবেক রোকন (সদস্য) আবুল কালাম আজাদ বাচ্চু রাজাকার, একই মামলার আসামি জামায়াত নেতা বুদ্ধিজীবী হত্যার দুই ঘাতক আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মাঈনুদ্দিন, ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার বহিষ্কৃত মেয়র ও পৌর বিএনপির সহ সভাপতি জাহিদ হোসেন খোকন রাজাকার, কিশোরগঞ্জের তাড়াইল থানার রাজাকার কমান্ডার সৈয়দ মোঃ হাসান আলী ওরফে হাছেন আলী এবং আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বার ।

গত ১৩ মে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের জন্য একটি তদারকি সেল বা কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১। বিচারাধীন আসামিদের গ্রেফতারের জন্য ১৫ দিনের মধ্যে একটি তদারকি সেল গঠন করতে বলেন ট্রাইব্যুনাল।

এ আদেশের পর কমিটি গঠন করে তার একটি প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে দাখিল করলেও পলাতকদের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি জানায়নি সরকার।

মঙ্গলবার ঘোষিত রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, সরকার ইচ্ছা করলে হাসান আলীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে অথবা তাকে গ্রেফতার করার পর গুলি করে (ফায়ারিং স্কোয়াড) হত্যার মধ্য দিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করতে পারে। মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এ দুই প্রক্রিয়ার যেকোনো একটি অবলম্বন করা সরকারের ইচ্ছাধীনও করা  হয়েছে রায়ে।

ঢাকা জার্নাল, জুন ১০, ২০১৫

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.