প্রভাত ফেরিতে লাখো মানুষ

ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৫

file (2) - Copyঢাকা জার্নাল: একুশের ভোরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রভাত ফেরির মিছিলে লাখো মানুষের ঢল নেমেছে। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই হাতে ফুল ও মুখে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি…’ সেই কালজয়ী গান গেয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করছেন বিভিন্ন বয়সের লাখো নারী-পুরুষ।

সারিবদ্ধভাবে শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও আসছে ভাষা শহীদদের বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে। 

এর আগে একুশের প্রথম প্রহরে ভাষা শহীদদের প্রতি জাতির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাত ১২টা ১ মিনিটের পর প্রথমে রাষ্ট্রপতি এবং পরে প্রধানমন্ত্রী শহীদ মিনারের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তারা।  

এ সময় তারা শহীদদের স্মরণে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। 

পরে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী শহীদদের স্মরণে শহীদ বেদিতে ফুল দেন। 
এরপর সফররত যুক্তরাজ্যের হাউজ অব লর্ডসের স্পিকার ব্যারোনেস ডি সুজা। 

পরে সফররত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাষা শহীদদের ফুল দিয়ে বিনম্র শ্রদ্ধা জানান।  

এসময় তার সফরসঙ্গী রাজনীতিক, শিল্পী ছাড়াও ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণও উপস্থিত ছিলেন। 

এরপর মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এসময় আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। 

এরপর ১২টা ১০ মিনিটের দিকে বায়ান্নর ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও জাতীয় পার্টির নেতারা। 

এসময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও ছিলেন। 

এরপর পর্যায়ক্রমে তিন বাহিনীর প্রধান, ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) চেয়ারপারসন সাবের হোসেন চৌধুরী, পুলিশের মহাপরিদর্শক, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ভাষা সৈনিক এবং বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও বিদেশি সংস্থার প্রধানরা শ্রদ্ধা জানান।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা জানানোর পর সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয় শহীদ মিনার এলাকা। এরপর থেকে বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। 

একে একে সরকারি দল আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, আওয়ামী প্রজন্ম লীগ, বাংলা একাডেমি, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন শহীদ মিনারের বেদিতে শ্রদ্ধা জানায়। 

তবে অন্যান্য বার ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে গেলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবার যাচ্ছেন না বলে জানা গেছে।  তবে তার পক্ষে বিএনপি নেতারা ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ভাষা শহীদদের। 

এর আগে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে শুক্রবার দিনগত রাত ১০টার পর থেকেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আশপাশের এলাকায় জড়ো হতে থাকেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। 

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারির এই দিনে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিকসহ নাম না জানা শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি পায় মাতৃভাষার মর্যাদা।

পরে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে ইউনেস্কো। 
এরপর ২০০০ সাল থেকে প্রতিবছর বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে দিনটি। 

দিবসটি উদযাপনে শনিবার জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে, উত্তোলন করা হবে শোকের কালো পতাকা। 

ঢাকা জার্নাল, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৫

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.