`অপ্রকাশিত তসলিমা নাসরিন’

ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৫

Taslima 1 এস এম আববাস, ঢাকা জার্নাল : কোনো আড়ম্বর নয়, নয় কোনো লোকজানাজানি। নিরবেই প্রবেশ `অপ্রকাশিত তসলিমা নাসরিন’র। না, সরাসরি তসলিমা নাসরিন নয়, তার দূরন্ত সময়ের লেখা একগুচ্ছ অপ্রকাশিত চিঠি নিয়ে একটি গ্রন্থনা।

একুশে গ্রন্থমেলায় প্রতিদিন কতনা বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হচ্ছে। অথচ তসলিমা নাসরিন ও তার স্বামী ৭০’র দশকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জীবন ঘীরে যে বই, তা মেলায় এসেছে খুব নিরবে।

শুক্রবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় লিটল ম্যাগ চত্তরের পুর্বকোনে কবি বদরুল হায়দারের স্টলে ‘অপ্রকাশিত তসলিমা নাসরিন’ বইটি চকচক করছে। পাতা উল্টাতেই দেখা গেল কিনতে হলে যেতে হবে জোনাকী প্রকাশনীর স্টলে। আরো দু-একটি পাতা উল্টাতেই চোখে পড়ে তসলিমা নাসরিনের চিঠি। একটি দু’টি নয়, একগুচ্ছ। ‘নির্ভেজাল সরল নারী  হৃদয়ের আকুতি’ নিয়ে লেখা এ চিঠিগুলো। চিঠিতে স্থান পেয়েছে তসলিমার প্রেম আর রুদ্রের জন্য অপেক্ষার কষ্ট।

বইটির খোঁজ পাওয়া গেল, এবার লেখকের খোঁজ পাওয়া দরকার। মৌলবাদী ছোবলের ভয়েই হয়তো বইটি নিরবে মেলায় এসেছে। তাই লেখককে খোঁজা-খুঁজি। সারা মেলা খুঁজে লেখকের দেখা পাওয়া গেল না। তবে মোবাইল নম্বর পাওয়া গেল লেখকের।

আর দেরী নয় সঙ্গে সঙ্গেই কল। শুরু হল কথা। এক টানেই লেখক আলমগীর রেজা চৌধুরী বলে ফেললেন অনেকগুলো কথা।

Taslima Nasrin‘এখন জগত জুড়ে এক নারীর নাম তসলিমা নাসরিন। একদিন তাকে নিয়ে গবেষণা হবে। আর তার লেখা চিঠিগুলোও গবেষণা সহায়ক হিসেবে কাজে দেবে।’

কথাগুলো প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস থেকে জানালেন কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর ঘনিষ্ঠ বন্ধু এই বইয়ের লেখক আলমগীর রেজা চৌধুরী। শুধু রুদ্রের নয়, তসলিমারও শ্রদ্ধার পাত্র এই লেখক।

জানা গেল, যে কয়জন মানুষকে তসলিমা কাছ থেকে শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখেন, লেখক আলমগীর রেজা তাদের অন্যতম। বড়ভাইয়ের মতো শ্রদ্ধা ছিল সব সময়। এখন তা ম্লান হয়নি।

IMG_20150221_024218নির্ভেজাল সরল নারী  হৃদয়ের আকুতি’ জানাতে যার কাছে যাওয়া যায়, রুদ্রের খোঁজ-খবর নিতে যার কাছে বার বার চিঠি লেখা যায়, প্রিয় সেই ব্যক্তি রুদ্রের এই লেখক বন্ধু। তার কাছে লেখা বিভিন্ন সময়ের চিঠিগুলো বইটির উপজীব্য। চিঠি ছাড়াও স্থান পেয়েছে তসলিমা-রুদ্রের সঙ্গে লেখকের সাবলীল সম্পর্ক, আর তসলিমা নাসরিনের নিজ হাতে আঁকা ছবি।

ঐতিহাসিক দায় আর নির্মল শ্রদ্ধা আর ভালবাসার যে ঋণ তা শোধ করতেই যেন তসলিমার অপ্রকাশিত চিঠি নিয়ে আলমগীর রেজার গ্রন্থনা ‘অপ্রকাশিত তসলিমা নাসরিন’। লেখকের মতে ‘তসলিমার এই চিঠিগুলো নির্ভেজাল সরল নারী  হৃদয়ের আকুতি’।

লেখক আলমগীর রেজা চৌধুরী তার অনুভূতির কথা জানিয়ে বলেন, বেগম রোকেয়া আর তসলিমা নাসরিনের প্রতিবাদ এক। তবে ভাষা ভিন্ন। দু’জনের বলা দুই রকম। বেগম রোকেয়া শৈল্পিকভাবে যা বলেছেন, তসলিমা নাসরিন তা বলেছেন কথনের মধ্যমে। বেগম রোকেয়া নিগৃহীত হয়েছেন, আর তসলিমা দেশান্তরি।

`একদিন তসলিমা নাসরিরনের জীবন নিয়ে গবেষণা হবে। তাই একজন নারী হিসেবে তার সরলতা, প্রেম এবং ব্যক্তিত্ব কেমন ছিল তা ধরে রাখতে চিঠিগুলোর প্রকাশ ঘটানো, জানান লেখক।

বলেন, ‘মহাকালের তথাকথিত আর সব চিঠির মতো তারেএই চিঠিগুলো হারিয়ে না যাক, তা চাইনি। তাই চিঠিগুলো আমি তুলে ধরেছি।

‘আমি ওকে চিনতাম কেকা নামে। সরু গ্রীবা, শ্যামলা রঙ, মায়াবি চোখ, বয়সের তুলনায় একটু দীর্ঘাঙ্গিনী বালিকা। ময়মনসিংহ শহরে আমাদের বাসার দু-তিন গলি পর কেকাদের বাসা অবকাশ। ভূমিকা শুরু এভাবে।

IMG_20150221_024227কবি রুদ্র মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ’র সঙ্গে কীভাবে লেখকের বন্ধুত্ব, ছোট্ট কেকা বড় হয়েছে, তসলিমা নাসরিন হয়ে সুনাম বদনাম কুড়িয়েছেন, সেজুতি কবিতাপত্র প্রকাশের পর কীভাবে লেখক তাকে জানতে পারেন তাও তুলে ধরেন ভূমিকায়।

বন্ধুত্বের পর রুদ্র আর তসলিমা নাসরিনের ভাল থাকা মন্দ থাকা নিয়ে কথা হয় লেখকের। সরল নারী সুলভ তসলিমার চিঠিগুলো সযতনে রাখেন লেখক। দীর্ঘকাল পর যখন রুদ্র নেই, তসলিমাও দেশান্তরি তখন লেখক সেই রুদ্র প্রেমের অপেক্ষার বালিকার চিঠি গ্রন্থনা করলেন।

লেখক আলমগীর রেজা চৌধুরী প্রতিক্রিয়ায় জানালেন, ‘তসলিমার দেশে ফেরা, চাওয়া পাওয়ার হিসেব নয়, ন্যয্যতা’।

লেখকের কাছে পাঠানো তসলিমা নাসরিনের একটি চিঠির অংশ

“ভালবাসা কাকে বলে আমি আজও তা জানিনা। মানুষ ‘ভালবাসা’ বলতে কি বুঝে, আমি ঠিক বুঝি না। আমি শুধু জানি, রুদ্রের জন্য আমার বুকের খুব গভীরে (একেই বুঝি হৃদয় বলে) এক ধরণের জলতরঙ্গের মতো বাজে, কেবলই বাজে। এর নাম যদি ভালবাসা হয়, তবে আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি ‘আমি রুদ্রকে ভালবাসি’।”

লেখক : এস এম আববাস, বাংলানিউজ।

ঢাকা জার্নাল, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৫।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.