অভিজিৎ দাস নিরুদ্দেশ, না গুম?

নভেম্বর ১৯, ২০১৪

10639682_10152653470298703_9115850439372164908_nঢাকা জার্নাল: বাংলাদেশের তরুণ কবি ও গণসঙ্গীত শিল্পী অভিজিৎ দাসনিরুদ্দেশ, না গুম? – প্রশ্নটি খুব একটা জোড়ালো হয়ে উঠছে না কেন যেন। অথচ প্রায় দেড় মাস ধরে তার কোনো হদিশ নেই । অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের পর তাকে আর কোথাও দেখা যায়নি। ওই মাসের সাত তারিখের পর ফেসবুকেও আর কোনো কার্যক্রম নেই তার। ওই দিন খুব ভোরে, সম্ভবত ছয়টা বা সাড়ে ছয়টার দিকে তিনি সহোদর (ছোট ভাই) বিশ্বজিৎ দাসের শ্যামলীর বাসা থেকে বেড়িয়ে যান। এরপর থেকেই তিনি লাপাত্তা।

আগের রাতে ভাইয়ের পাশাপাশি বড় বোন চৈতালী দাসের সাথেও বেশ ঝগড়া হয়েছিলো অভিজিৎ’র। তাই পরদিন সকাল থেকেই অভিমানী ভাইকে খোঁজা শুরু করেন তারা। কিন্তু এক দিন, দুই দিন করে হপ্তা পেরিয়ে গেলেও তার আর খোঁজ মেলে না বরিশালে বেড়ে ওঠা এ কবির। অবশেষে গত ১৮ অক্টোবর ঢাকার শেরে বাংলা নগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করা হয়। পুলিশও ঘটনাটি দ্রুত আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করে। এ কবিকে খোঁজার জন্য তৎপর হয় তারা। তিন দিন পর, অর্থাৎ ২১ অক্টোবর অভিজিৎ দাসের পরিবারকে জানানো হয় দেশের সকল থানায় তার ছবি পাঠানো হয়েছে। এরপর আরো একটি মাস পেরিয়ে গেছে। আজও দাসের কোনো সন্ধান মেলেনি।

ভিন্ন রূপে…
নিরুদ্দেশ হওয়ার আগের রাতে ভাইয়ের সাথে অভিজিৎ’র তর্ক হয়েছে মূলত তার দীর্ঘদিনের বোহেমিয়ান জীবনযাপন নিয়ে। মুঠোফোনে তীব্র বাগ্বিতণ্ডা হয়েছে বোনের সাথেও। কারণ বোন তাকে বলেছিলো, চুল-দাঁড়ি কেটে ভদ্রস্থ হতে। কিন্তু অভিজিৎ তার স্বকীয়তা ভাঙতে রাজি নন। তিনি ক্ষেপে গিয়েছেন। চিল্লাপাল্লা করেছেন। সেদিনের কথা বলতে বলতে বিশ্বজিৎ জানান, এর আগে দাদাকে অতটা বিক্ষিপ্ত হতে দেখেননি কখনো।

বিশ্বজিৎ আরো জানান, দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়ার কথাও বলতেন অভি। যে কারণে খবর দেয়া হয়েছে ওপার বাংলায়ও। বলা হয়েছে সকল আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবকে। কিন্তু কেউ অভিজিৎ’র কোনো খোঁজ জানেন না। সিনিয়র, জুনিয়র বা সমবয়সী বন্ধু, দূরের – কাছের স্বজন; কেউ না। তার আরেক ঘনিষ্ট বন্ধু বলেন, ‘কোলকাতায় যাওয়ার জন্য নতুন করে পাসপোর্ট করতে তিনি ক’দিন বরিশালে দৌঁড়ঝাপও করে ছিলেন। পরে অবশ্য আর পাসপোর্টটি করতে পারেন নাই।’

অভিজিৎ কি তবে তার প্রিয় অগ্রজ বিষ্ণু বিশ্বাসের মতোই স্বেচ্ছায় আত্মগোপন করলেন? এম্নিতেই বিষ্ণুকে প্রচণ্ড পছন্দ করেন তিনি। তার দুটি কবিতায় সুরও দিয়েছেন। আর বিষ্ণুর মতো তিনিও ডোবেন আজব হ্যালুসিনেশনে। কাছের মানুষেরা তার ভীতিবিহবলতার মুখোমুখি হয়েছে বহুবার। ১৯৬২’র ২৯ মে ঝিনাইদহের বিষয়খালিতে জন্মানো বিষ্ণুও হ্যালুসিনেশনে ভীতচকিত হতেন। তিনি দেখতেন একটা সাদা গাড়ী অথবা ছুরি হাতে কেউ একজন তাকে তাড়া করে ফিরছে।
পাঠকদের জ্ঞাতার্থে আরো জানিয়ে রাখি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স শেষ করে ৮৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে এসেছিলেন বিষ্ণু। কিছুটা বাউন্ডুলে হলেও তার লেখালেখি, আড্ডা – সবই চলছিলো স্বাভাবিক। ছন্দপতন ঘটলো ভারতের বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার ঘটনায়। সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতা প্রসূত হিংস্রতা কবিকে বিপর্যস্ত করে মারাত্মকভাবে। করে তোলে আতঙ্কগ্রস্ত। এই আতঙ্ক নিয়েই ১৯৯৩ সালে তিনি উধাও হন। এর প্রায় ১৮ বছর পর পশ্চিমবঙ্গে তার সন্ধান মেলে।

ফিরবেন জানি…
কয়েক বছর আগে অভিজিৎ জানিয়েছিলেন, বরিশালের জাগুয়া গ্রামের যে জমিতে তাদের আদি ভিটা ছিলো তা দখল করে সেখানে ক্লিনিক তৈরী করছেন এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা। ভেঙে ফেলা হয়েছে তাদের পুরানো বাড়ি-ঘর, পূর্বপুরুষদের সমাধি। কোনো ভাবে এটা ঠেকাতে না পারার কারণে প্রচণ্ড হতাশ ছিলেন কবি। যদিও তার জ্ঞাতিদের কয়েকজন ক্ষতিপূরন বাবদ কিছু নগদার্থও পেয়েছেন।

বয়সে খানিকটা বড় হলেও অভিজিৎ দাসের সাথে আমার অন্তরঙ্গতায় কোনো ঘাটতি নেই সম্ভবত। যে কারণে তার নিপাট নির্লিপ্ত অভিমানের সাথেও আমি পরিচিত। আর এ কারণেই হয়ত ভাবতে বাধ্য হচ্ছি, অভিমানী কবিকে লাপাত্তা হতে বাধ্য করিনি’তো আমরা; মানে পুঁজিবাদী চমকে মোহাবিষ্ট স্বজন, বন্ধু আর সমাজ? বা সেলফিজমের যমানাই গুম করেনি’তো তাকে? নানা শঙ্কা উঁকি দেয় মনে।

অভিজিৎ’র নিখোঁজ হওয়াটা যে কোনো বাজে রসিকতা নয়, বরং যথেষ্ট শঙ্কা জাগানিয়া তা প্রথম টের পেয়েছিলাম চৈতালী’দির ফোন পেয়ে। পরে একই শঙ্কা টের পেয়েছি কফিল আহমেদ, টোকন ঠাকুর, কামরুজ্জামান কামু, বিপ্লব মোস্তাফিজ, মাহফুজ জুয়েল, ওয়াহিদ রনি, তপু আহমেদ মুনিরুদ্দিন, দয়িত আন্নাহাল, রোকসানা আমিন, হাসিবা আলি বর্না, প্রবর রিপন, মুয়ীয মাহফুজ, অতনু শর্মা, পদ্ম, ইমরান মাঝি, মহিবুল্লাহ শাওয়াল, রাসেল আহমেদ, আমিনুল এহসান, শ্মশান ঠাকুর, হীরা মুক্তাদির, গালিব হাসান, আসাদ ইকবাল সুমন, আবু বরকত, মিছিল খন্দকার, ধীরা আনান, ফারজানা খান নীপা, অনার্য তাপস, শাহরিয়ার শাওন, হিশাম খান সেতু, মাসুদ পথিক, আনিস রায়হান, দুখু সুমন, সৈয়দ বৃন্ত, আহমেদ হাসান সানি, তাসনোভা তামান্নাসহ তার আরো অনেক শুভাকাঙ্খীর কণ্ঠ বা দৃষ্টিতে। শঙ্কিত সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের চায়ের দোকানদার দুলালও। রাতের পর রাত এই তার দোকানেও কাটিয়েছেন কবি। ছবির হাট সংলগ্ন ওই এলাকাতেই আ্ড্ডা দেন তিনি ও তার বন্ধুরা। দুলালসহ ওখানকার আরো অনেকেই অবশ্য দাবি করেছেন, অভিজিৎ প্রায়ই দুই-তিন মাসের জন্য উধাও হওয়ার কথা বলতেন। কিন্তু তিনি সত্যিই যে উধাও হয়ে যাবেন, এটা তারা কেউ আন্দাজও করতে পারেননি।

এত শঙ্কার মাঝে দাঁড়িয়েও কেন যেন  মনে হচ্ছে, বইমেলার আগেই ফিরে আসবেন কবি। সাথে থাকবে তার নতুন কাব্যগ্রন্থ। নিগ্রো পরীর হাতে কামরাঙা কেমন সবুজ, ভাঙা আয়নার প্রতিবিম্বগণ, মাটির চামচ মুখে এবং করপল্লবসঙ্গিনী’র সঙ্গে যুক্ত হবে আরেকটি নাম।
শূন্য দশকের কবিদের নিয়ে এক আলোচনায় পড়েছিলাম – “কবি নামের সঙ্গে নান্দনিক হতাশার যোগসূত্রতা সেই সৃষ্টির শুরু থেকেই। পৃথিবীর তাবৎ কবি-শিল্পীর বহু মহিমান্বিত সৃষ্টির জন্য নান্দনিক হতাশার রয়েছে অসামান্য ভূমিকা। বরং বলা চলে, কবিদের সত্ত্বার ভেতর এই নান্দনিক নামক জিনিসটি না থাকলে শিল্পের অনেক কিছুরই জন্ম হতো না। কবিতা বঞ্চিত হতো বহু বিস্ময়কর সৃষ্টি ও সৌন্দর্য থেকে। ঘটনাটা ঘটেছে কবি অভিজিৎ দাসের বেলাতেও। পৃথিবীর মহৎ শিল্পকর্মে এই সহজাত প্রক্রিয়া লক্ষ্য করি বেশ। অস্তিত্ব-অনস্তিত্বের যে সংবেদন তার প্রতিটি মুহুর্তের অধিবিদ্যাকে কবি অনুভব করেন অতিসংবেদনশীলতা। যারা হতাশায় তাড়িত হয় তারা আসলে জীবনের পক্ষে যায়না। তারা আসলে এই বর্তমান হাইড্রোলিক হর্ণ সংবলিত জীবনধারাকে অস্বীকার করে এবং কাঙ্খিত, স্বচ্ছ স্রোতস্বিনী স্রোতধারাময় জীবনের অপেক্ষায় থাকে। তাদের হতাশা আসলে এক নীরব প্রতিবাদ-এক নৈঃশব্দিক কাতরতার দ্বারা তারা একে একে প্রকাশ করে যায় নিজেকে। একটি কাঙ্খিত জীবনের জন্যে একটি কাম্য জীবনের জন্য তারা নিজেকে ধ্বংস করে যায়। অতএব লেখক হিসেবে তার এই cosmic pathos – আমরা বুঝি। কবি অভিজিৎ দাস-এর হৃদয় সম্ভবত জীর্ণবস্ত্রের মতো সুঁই হয়ে এ ফোঁড় ও ফোঁড় তোলে। তার আত্মপক্ষীয় লেখার মধ্যে সমুদ্র সমান অসন্তোষ আগ্নেয় উষ্ণতায় বিধৃত। সুষ্ঠু ও সুস্থ আত্মপ্রকাশের অক্ষমতা সম্পর্কে সচেনতা এবং ভয়াবহ অতৃপ্তি এর পরতে পরতে। এই গহীন অতৃপ্তি মানসিক যন্ত্রনা তার সৃষ্টিশীল নন্দন-মানসকে কুঁরে কুঁরে খায়। অতৃপ্তি অসন্তুষ্টি, নিরন্তর পরিবর্তনমানতা শিল্পসৃষ্টির ক্ষেত্রে উচ্চতর শুদ্ধির কাছে পৌঁছে দেয়। অনেক সময় স্রষ্টার অন্তরকে অক্টোপাশী প্রজননী-বেদনা ফালাফালা করে। তার অভ্যন্তরে সৃষ্টি অগ্নি আলোকিত করে। যে নিজের লাল রক্তকে কালো কালিতে রুপান্তরিত করে সেই তো কবি। আর অভিজিৎ সেই অস্থিরতার সংলাপে অম্লমধু ধারণ করে সেই পথটিকেই বেছে নিয়ে হাঁটছেন। কেননা তিনি রক্ত-মাংসের কবি।”

আন্দোলনে…
কবি অভিজিৎ ২০১১ সালের ১১ নভেম্বর বাবা এবং তার আগে ২০০৭ সালের ১৬ মে মা’কে হারান। অবশ্য তাদের মৃত্যুর অনেক আগেই তিনি ভালোবেসে ফেলেছিলেন কাব্যিক উদাসীনতা। সংসারের দিকে তার খেয়াল ছিলো না কোনো। তবে জ্ঞাতসারে কখনো কারো ক্ষতির কারণ হননি আমাদের এই আত্মভোলা বন্ধু । তাই বিশ্বাস করি, তারও ক্ষতির কারণ হবেন না কেউ। যেখানেই আছেন, ভালো আছেন – সুস্থ আছেন কবি। যদিও অযন্ত-অবহেলায় তার স্বাস্থ্যের অবস্থা খুব বেশী ভালো নেই জানি। তবুও আশা করতে দোষ কি?

নিখোঁজ হওয়ার আগে দীর্ঘ সময় কবি অভিজিৎ’র কোনো আয় ছিলো না। তার সর্বশেষ কর্মস্থল ছিলো দৈনিক আমাদের সময়। পত্রিকাটির মালিকানা নিয়ে শিল্পপতি নূর আলী ও সাংবাদিক নাইমুল ইসলাম খানের দ্বন্দ্ব চলাকালে ছাঁটাই হওয়া কর্মিদের মধ্যে ছিলেন কবিও। এরপর আর কোথাও কাজ করেননি তিনি। তবে কর্মহীন ছিলেন না কখনো। কবি বা যন্ত্রী বন্ধুদের নিয়ে ব্যস্ত থেকেছেন সারাদিন। আর যেখানেই নিপীরনের খবর পেয়েছেন, ছুটে গিয়েছেন। খোলা গলায় গান ধরেছেন শোষিতদের পক্ষে – ‘দুধ ভাত শুধু তোমাদের আর আমরা কেবলই পাথর চিবুতে বাধ্য’। শোষকদের বিরুদ্ধে গানই তার শ্লোগান। এমন অজস্র গানের স্রষ্টা তিনি। কয়েক বছর ধরে ছবি আঁকার ভুতটাও মাথায় চেপেছে তার । এঁকেছেন এবং হারিয়েছেন অজস্র ছবি।
তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ডাকা অর্ধদিবস হরতালকে সমর্থন জানাতে গিয়ে ২০১১ সালের জুলাইয়ে অভিজিৎ গ্রেফতারও হয়েছিলেন। বিভিন্ন স্থানে তিনি লাঠিচার্জ ও ধাওয়ার সম্মুখীনও হয়েছেন বহুবার। তবুও রাজপথ ছাড়েননি কখনো। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত – পথেই কাটিয়ে দিয়েছেন।

রাজপথে…
অভিজিৎ বলেছিলেন, প্রায় দেড় দশক আগে বরিশালের দৈনিক প্রবাসীতে তার সাংবাদিকতার হাতেখড়ি। ওস্তাদ ছিলেন সাংবাদিক শওকত মিল্টন। এছাড়াও যদ্দুর জানি অভি বরিশালের দৈনিক আজকের বার্তা, ঢাকার দৈনিক বাংলাদেশ সময়, আর্ট ম্যাগাজিন শিল্পরূপসহ আরো অগণিত পত্রিকায় কাজ করেছেন। বেসরকারি সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকাপন ইনিস্টিটিউট (আইআরআই) আর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সাথেও ছিলেন বেশ দীর্ঘ সময়। ধ্রুবতারা, শূন্য মাতাল, কালনেত্র, কাঠবিড়ালীসহ আরো অসংখ্য লিটল ম্যাগাজিনও বেরিয়েছে তার হাত দিয়ে।
অভিজিৎ দাসের কবিতা

মনোবিকলন
আমার ভাবনার পেরেক
আমি ঠুকতে চাইনি কোনোমতেই
তোমাদের সম্পর্ককেন্দ্রের গোপনীয়তায়
ঘুমের অসমাপ্ত রেখাচিত্র
পাথরে খোদাই হোক
তাও দেখতে চাইনি কখনো
অথচ যখন আজ আমার দিকেই
তেড়ে আসছে তোমাদের ছুড়ে দেয়া
মনোবৈকল্যের বিষাক্ত তীর
অনুভূতির সকল জটপাকানো
শিমুল তুলোকে আমি
টংকারে উড়িয়ে দেখতে চাই
ধুনুরির মত তাই
আজ একবার…

ফেরার পথ
ফেরার পথগুলো কেন এত ঢালময়
যাবার সময় এ কথা তো বলে দাওনি কেউ !

যাত্রাকালে যাকিছু দিয়েছ সাথে ঠিকঠাক সাজিয়ে গুছিয়ে
গড়িয়ে নেমেছে সেতো পথের ধুলোয়

এ কেমন খাড়া পথে আমাকে পাঠালে
পাহাড়ে ওঠাও সহজসাধ্য এর চেয়ে
ঝরাফুল , একা সে পথের শীর্ষে দাড়িয়ে থেকে তো
তোমাতে আমাতে হয়েছিল পরিমিত পতন সংলাপ !

আমি তাই সমতলে নেমে আসি
না গিয়েই ফিরে এসে বলি:
“ঝরা পাতা গো ,আমি তোমারি দলে”

কফিল আহমেদ, মুয়ীয মাহফুজ ও পদ্ম’র সাথে…
পোশাক
সেলাই মেশিন ছুটছে তুমুল গতি
লজ্জারা যত লুকোচ্ছে এসে
পোশাকের আবডালে
তোমার কণ্ঠে এনে দিতে পরিমিতি
রাষ্ট্র নেমেছে; আধপেটে বাঁচো
কোনোমতে চালেডালে

সকালে এসেছ, রাত হলে হবে ছুটি
ক্যারিয়ার ভরা টিফিন ছিল যা সাথে
তাই ভাগ করে কোনোমতে ডাল-রুটি
‘কাজে হাত লাগা…চুপ যা ! হাড়হাভাতে’…
তবুও এমন কারখানাতেই তুমি
দিন আনো- রাতে খেতে পাওনাতো রোজ
শিশুর কপালে পোড়াচাঁদ যায় চুমি
সাহেবের ঘরে পার্টি, পানীয়, ভোজ !

এ্যাম্বুলেন্স
আমাদের মাঝে কে আছে এমন
একটি ব্যক্তিগত বেদনার নীল এ্যাম্বুলেন্স
সাথে নেই যার!
আমরা প্রত্যেকেই গোপনে বা প্রকাশ্যে
একটি গমগমে নিস্তব্ধ এ্যাম্বুলেন্স
সাথে নিয়ে ঘোরাফেরা করছি
মহাকাশগামী এক এ্যাম্বুলেন্স সাইরেন বাজিয়ে
প্রায়শই আবর্তিত হয় আমাদের ঘিরে
গতরাতে দেখি
মুমূর্ষু স্বপ্নদের নিয়ে গানের ক্লাশে যাচ্ছে
মৃত্যুর স্বরলিপি শিখতে
বেসুরো কণ্ঠে যে কিছু ইস্পাতের
ধ্বনিরাগ ছুঁড়ে দিয়েই খালাস!
আমি আমার দেহের গ্যারেজে ঐ ব্যক্তিগত বেদনার্ত নীল
এ্যাম্বুলেন্সটিকে রেখে পথে নেমেছি
আগামীকাল ওকে সঙ্গে নিয়ে যখন ঘুরতে বেড়োব
রঙ পাল্টে কৃষ্ণচূড়া বর্ণের এই লেলিহান এ্যাম্বুলেন্সটি
তখন ব্রহ্মাণ্ডের সকল মানবযানের পথে
জ্যামের কারণ হয়ে উঠবে
ভেতরে গুমরে চলা বিভৎস স্বপ্ন
যারা আপাত নিস্ফল
কুণ্ডুলি পাকিয়ে উঠবে
বিস্ফোরণের এক মুহূর্ত আগে
আমি আমার ব্যক্তিগত লাল এ্যাম্বুলেন্সের সাথে
একবার লিপ্ত হতে চাই সহবাসে

ভাঙ্গা আয়নার প্রতিবিম্বগণ
একটি ভাঙ্গা আয়না তোমাকে শিখিয়েছে
কিভাবে প্রতিবিম্বগণ নিজেরই বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে
প্রকাশ্য ময়দানে ইহলৌকিকতার দুর্নাম রটায় ।

যে সকল অপবাদকে তুমি প্রশংসা
পদবাচ্য মেনে গভীর রাতের পথে গেয়ে গেছ উন্মাদগীতি ,
তাতে প্রশাখাবহুল নক্ষত্রও
মাথার ওপরে ফেলেছে তীর্যক রশ্মির ফলা
আর নগরের সমাধিস্হ তন্দ্রাহীন প্রেতেরাও
তোমার বেসুরো কন্ঠের বৈতালিক লয়ে
বিদ্রুপে ইঙ্গিত ছোড়ে ,
তুমি কি এখনো তবে গেয়ে যাবে
পুরোনো সে শুকনো পাতার সুরে শীতের সংগীত ?

আহা ! বসন্ত জাগ্রত দ্বারে …

ভোরবেলা দেখো যদি পরিত্যক্ত প্রতিবিম্বগণ
তোমারই শবাধার কাঁধে নিয়ে
সবুজ পাতায় ঢেকে রেখে গেছে তোমারই দুয়ারে,
তবে গোপনতাকামী স্মৃতির পোকারা
যেন শতচ্ছিন্ন তোমার শরীর খোদাই করে লিখে রাখে
“তিনি, কবি, নিজেরই প্রতিবিমম্বগণ যার হন্তারক”।

কবি ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ – এই ছবিটি আপলোড করেছিলেন।
এই পোস্টের সকল ছবি ও কবিতা তার ফেসবুক একাউন্ট থেকে নেয়া।
ঢাকা জার্নাল, নভেম্বর ১৯, ২০১৪।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.