আইএসসহ সকল জঙ্গিবাদী সংগঠনের প্রধান কেন্দ্রস্থল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিতদের ‘পক্ষ নেওয়ার’ পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের বিচারের কথা বলে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মানবতাবিরোধী অবস্থান নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইমরান এইচ সরকার।
জঙ্গিবাদে অর্থায়নের অভিযোগে লন্ডনে অ্যামনেস্টির প্রধান কার্যালয়ের এক কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে জানিয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক এই সংস্থার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদদের অভিযোগ করেছেন তিনি।
বাঙালির স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামকারী মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ‘ধৃষ্টতাপূর্ণ’ বক্তব্যের জন্য অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান।
শুক্রবার বিকালে শাহবাগে মঞ্চের এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র যখন ইরাক, আফগানিস্তান ও সিরিয়ায় বোমা মেরে নারী-শিশুসহ মানুষদের হত্যা করে তখন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মানবাধিকার উদয় হয় না।
“এখন তারা মার্কিনীদের দোসর পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে রাজাকার, মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের মুক্তির দাবি করছে। এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বিচার দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে।
“তাদের এই বিবৃতি প্রমাণ করে, অ্যামনেস্টি এখন আর কোনো মানবাধিকার সংগঠন নয়, তারা মানবতাবিরোধী সংগঠন, একটি জঙ্গিবাদী সংগঠন।”
যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের রিভিউ শুনানির আগে ২৭ অক্টোবর গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, “স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিগুলোও গুরুতর অপরাধ করেছিল। তবে তাদের কারও বিরুদ্ধে তদন্ত হয়নি বা কাউকে বিচারের আওতায় আনা হয়নি।”
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল শুরু থেকেই বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরোধিতা করে আসছে অভিযোগ করে ইমরান বলেন, “যখন কোনো যুদ্ধাপরাধীর রায় কার্যকরের সময় আসে তখন তারা বেশ সক্রিয় হয়ে যায়, সোচ্চার হয়ে উঠে। এতদিন তারা বলবার চেষ্টা করেছে তারা মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে, তাই বিচার বন্ধ চায়।
“কিন্তু দুই দিন আগে দেওয়া বক্তব্যে তারা যুদ্ধাপরাধে সাজাপ্রাপ্ত সাকা ও মুজাহিদের মুক্তিই কামনা করেনি, যারা দেশকে স্বাধীন করেছে অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধাদেরও বিচারের দাবির ধৃষ্টতা দেখিয়েছে।”
অ্যামনেস্টির এই ‘ধৃষ্টতার’ প্রতিবাদ জানাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ইমরান।
“এখন আর ঘুমিয়ে থাকলে হবে না। এমন বিবৃতির জোর প্রতিবাদ করুন। প্রয়োজনে ঢাকায় অ্যামনেস্টির প্রতিনিধিকে ডেকে বলুন, এভাবে গণহত্যাকারীদের পক্ষাবলম্বন করলে বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনার কোনো সুযোগ নাই।”
অ্যামনেস্টির বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদে মদদের অভিযোগ তুলে ইমরান এইচ সরকার বলেন, “জঙ্গিবাদে অর্থায়নের কারণে কিছুদিন আগে লন্ডনে অ্যামনেস্টির প্রধান কার্যালয়ের এক কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আইএসসহ সকল জঙ্গিবাদী সংগঠনের প্রধান কেন্দ্রস্থল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।”
তিনি বলেন, “যারা ধর্মের নামে শাসন করতে ইচ্ছুক, আইএসসহ সকল জঙ্গিবাদী সংগঠনের পৃষ্ঠপোষক ও অর্থদাতা এবং অ্যামনেস্টির অর্থ যোগানদাতা একই। তারা একদিকে বোমা মারছে, অন্যদিকে এ ধরনের সংগঠন খুলে বোমাবাজদের পক্ষে সাফাই গাচ্ছে। এটা পরিষ্কার।”
আইএস দমনে সম্প্রতি সিরিয়ায় রাশিয়ার বিমান হামলার দিকে ইঙ্গিত করে ইমরান বলেন, “শুধু সিরিয়াতে বোমা মারলে হবে না, অ্যামনেস্টির মতো জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক সংগঠনকেও ধরতে হবে, বিচার করতে হবে।”
অ্যামনেস্টির প্রতি বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে ইমরান এইচ সরকার বলেন, “অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। তা না করলে বিশ্বব্যাপী কর্মসূচি দেওয়া হবে। তাদেরকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হবে।”
যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে অ্যামনেস্টির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রেরও সমালোচনা করেছেন ইমরান।
তিনি বলেন, “স্টেট ডিপার্টমেন্ট (যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর) ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যুদ্ধাপরাধীদের রায় কার্যকর করার সময় এলে বিচার বন্ধের জন্য বিবৃতি দিত। এবার মুক্তিযোদ্ধাদের বিচার চাইবার মধ্য দিয়ে তাদের মুখোশ উন্মোচন হয়ে গেছে। তারা এখন চূড়ান্ত আক্রমণ করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সকল মানুষকে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।”
যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া তরান্বিত করার আহ্বান জানিয়ে ইমরান বলেন, “শুধু কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর বিচার করলে হবে না, জামায়াত, বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ সকল দলের যুদ্ধাপরাধীদের খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
“একইসঙ্গে যারা মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে না, তাদেরকে দল থেকে বের করে দিন।”
সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি লাকী আক্তার বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের সময় গোটা বিশ্ব দুই ভাগ হয়ে গিয়েছিল। এক ভাগ বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল। আর সাম্রাজ্যবাদী যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের দোসররা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল।
“সাম্রাজ্যবাদী দেশের মদদে ও অর্থায়নে অ্যামনেস্টির মতো সংগঠনগুলো গড়ে উঠেছে।”
তিনি বলেন, “ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইরাকসহ বিভিন্ন দেশে নিরীহ মানুষ মারার বিরুদ্ধে তারা কোনো কথা বলে না। তারা একদিকে আইএস তৈরি করেছে, অন্যদিকে আইএস ধ্বংস করার নামে সাধারণ মানুষকে বোমা মেরে হত্যা করছে।”
আইএস দমনে বছরখানেক আগে থেকে ইরাক ও সিরিয়ায় বিমান হামলা চালিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার কয়েকটি মিত্র দেশ।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ‘সাম্রাজ্যবাদীদের’ দোসর হওয়ায় যুদ্ধাপরাধে সাজাপ্রাপ্ত জামায়াত নেতাদের গণহত্যাকারী না বলে ইসলামী নেতা পরিচয় দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম এই সংগঠক।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ বীরবিক্রম, ভাস্কর রাশা প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সমাবেশ শেষে শাহবাগ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ঘুরে আবার শাহবাগে ফিরে শেষ হয় ওই মিছিল।
মিছিলে মঞ্চের নেতাকর্মীরা ‘অ্যামনেস্টির আয়োজন, জঙ্গিবাদের উৎপাদন’, ‘অ্যামনেস্টির কার্যক্রম, বন্ধ কর করতে হবে’, ‘পাকিস্তানের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।
সোমবার লন্ডনে বিক্ষোভ
অ্যামনেস্টির এই বিবৃতির প্রতিবাদে সোমবার লন্ডনে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ের সামনে গণজাগরণ মঞ্চের যুক্তরাজ্য শাখা বিক্ষোভ করবে বলে মুখপাত্র ইমরান জানিয়েছেন ।
“সেখানকার নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করবেন। প্রয়োজনে সারা বিশ্বব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যাবে,” বলেছেন তিনি।