প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া ঠেকানো যাচ্ছে না
প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া বন্ধে সরকারি উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে। ৮২টি উপজেলার বিভিন্ন স্কুলে দুপুরে দেয়া হচ্ছে উন্নত মানের বিস্কুট অথবা রান্না করা খাবার। এতকিছুর পরও প্রাথমিকে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া কমছে না। খোদ সরকারেরই সর্বশেষ হিসাবে প্রাথমিক পর্যায়ের প্রায় ২১ ভাগ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। এর আগের বছরও প্রায় একই পরিমাণ শিক্ষার্থী প্রাথমিক ধাপ থেকে ঝরে গেছে। এরা লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে কাজে লেগে যাচ্ছে।
গতকাল (সোমবার) সরকারি এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে- দেশে এখনো প্রাথমিক স্কুলের গ-ি পেরিয়ে ২১ ভাগ ছেলে-মেয়ে ঝরে পড়ছে। অর্থাৎ তারা পঞ্চম শ্রেণির গ-ি পেরিয়ে মাধ্যম বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছে না। শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে ঠেকাতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও তা কেন সফল হচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা পিরোজপুরের সিকদার মল্লিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, শহর থেকে মল্লিকা এই স্কুলটি ১৭ কিলোমিটার দূরে অস্থিত। তবে আগের তুলনায় ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে এসেছে। এরপরেও শতকরা ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ছে।
তিনি বলেন, ২০০৪ সালে এই স্কুলের ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীর হার ছিল ১৫-২০ শতাংশ। কিন্তু বর্তমান সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের কারণে ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে এসেছে। এরপরেও ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীর হার শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসতে পারিনি।
আপনার আশেপাশে যেসব স্কুল রয়েছে সেখানে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ারা হার কেমন বিবিসি বাংলার এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার স্কুলের আশেপাশে যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে সেগুলোতে আগের তুলনায় শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার কমেছে। অর্থাৎ এখন ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে।
সরকার শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিচ্ছে, টিফিনের ব্যবস্থা করছে এরপরেও শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার কেন বন্ধ হচ্ছে না বিবিসি বাংলার এ কথার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার ‘মিড ডে মিল’ প্রকল্প চালু করেছিল। তখন শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার ছিল ১ ভাগ।
তিনি আরো বলেন, প্রত্যেক দরিদ্র্য শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেওয়া হয় না। এরফলে অনেক দরিদ্র্য শিক্ষার্থী স্কুলে আসতে চায় না। এসব ছাত্র-ছাত্রী পরিবারের অর্থ উপার্জনের জন্য লেখাপড়া বাদে কাজ করে। যে কারণে ঝরে পড়ার হার শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা সম্ভব নয়। এই এলাকার অনেক পরিবারের ছেলে-মেয়েরা ‘শামুক’ বিক্রি করে সংসার চালায় এবং লেখাপড়া চালায়। অর্থাৎ পরিবারের অস্বচ্ছালতার কারণে অনেক শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ে। এজন্যই ঝরে পড়ার হার কমানো যাচ্ছে না।
শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে ঠেকাতে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছিল তা থমকে আছে বিবিসি বাংলার এই প্রশ্নের সঙ্গে একমত পোষণ করে তিনি বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য ‘মিড ডে মিল’ সরকারের একটি প্রকল্পটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল। কিন্তু এটা এক পর্যায় এসে থেমে গেছে। অনেক ছেলেমেয়ে সকালে না খেয়ে স্কুলে আসায় তাদেরকে বাধ্য হয়ে দুপুরে বাড়ি যেতে দিতে হয়। মিড ডে মিল প্রকল্প চালু থাকলে এসব শিক্ষার্থীরা বাড়িতে যেত না। তারা স্কুলের ক্লাস শেষ করে একবারে বাড়িতে যেত। বিবিসি