হাবের তদবির, সচিবের চেষ্টা
এ বিষয়ে ধর্মসচিব বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে ট্রলিব্যাগ সরবরাহ করছে হাব। এ বছর তারা সরবরাহ করবে না বলে জানিয়ে দেওয়ায় মন্ত্রণালয়ের একাউন্টে টাকা জমা নেওয়া হয়েছে। টেন্ডারও করা হয়েছে ট্রলিব্যাগ সরবরাহের জন্য। তবে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি কীভাবে সরবরাহ করা হবে।
২০১৪ সালে হাবের ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের জন্য ট্রলিব্যাগ সরবরাহ করে জান্নাত স্টোর। তারা নিম্নমানের ব্যাগ সরবরাহ করে এবং সময়মতো তা পৌঁছাতেও ব্যর্থ হয়।
দরপত্রে অংশ নেয় চার প্রতিষ্ঠান। প্রতিটি ট্রলিব্যাগ সরবরাহে এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নিউ এক্সিম এক হাজার ৪২০ টাকা, জান্নাত স্টোর এক হাজার ৪৩৭ টাকা, ভারটেক্স এক হাজার ৬৯০ এবং মেঘনা এন্টারপ্রাইজ এক হাজার ৬৯৫ টাকা কোটেশনে দরপত্র জমা দেয়।
এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে নিউ এক্সিম কাজ পাওয়ার কথা। কিন্তু নমুনা সরবরাহ না করায় কাজে অযোগ্য বিবেচিত হয় প্রতিষ্ঠানটি।
অন্যদিকে, গত বছর নিম্নমানের ট্রলিব্যাগ সরবরাহ এবং সময়মতো সরবরাহ না করতে পারায় ৭ লাখ টাকা জরিমানা দেয় দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান জান্নাত স্টোর। ব্যর্থ প্রতিষ্ঠান হিসেবে এ বছর ট্রলিব্যাগ সরবরাহে অযোগ্য বিবেচিত হয়। ফলে তৃতীয় দরদাতা হিসেবে ভারটেক্স কাজটি পাওয়ার কথা।
গত ১০ মে দরপত্র কমিটির দরদাতা প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা করলেও আজ অবধি যোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত ভারটেক্সকে কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। তবে সচিব দপ্তর থেকে ভারটেক্সকে আগে থেকে ট্রলিব্যাগ তৈরির জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়। আর এ কারণে ভারটেক্স ওই কাজের পুরো প্রস্তুতিও সম্পন্ন করে।
মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সূত্র থেকে জানা গেছে, ২০১৪ সালের হজযাত্রীদের জন্য ট্রলিব্যাগ সরবরাহে হাবের অনিয়ম-দুর্নীতি করে হাব। বিগত নির্বাহী কমিটির সভাপতি আবারো বর্তমান কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। যদিও নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে দীর্ঘ বিতর্ক এবং কমিটির কার্যকারিতা নিয়ে মামলা গড়ায় উচ্চ আদালত পর্যন্ত।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আগের কমিটির সভাপতি মো. ইব্রাহিম বাহার বর্তমান বিতর্কিত কমিটিরও সভাপতি। যার বিরুদ্ধে রয়েছে ওমরার নামে মানবপাচারের অভিযোগ। আর মানবপাচারের কারণে বর্তমানে ওমরা ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।
ধর্ম মন্ত্রণালয় জানায়, সম্প্রতি হাবের ২০১৫-২০১৭ সালের দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে ইব্রাহিম বাহারের প্যানেল বিজয়ী হওয়ার অনিশ্চয়তা ছিল। তাই প্রতিপক্ষ প্যানেল নির্বাচিত হয়ে যাতে ট্রলিব্যাগ সরবরাহের কাজ পায় তার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেজন্য ট্রলিব্যাগ সরবরাহ করতে অসম্মতি জানিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় আগের কমিটি।
তবে নতুন কমিটিতে আবার ইব্রাহিম বহার সভাপতি হলে ট্রলিব্যাগ সরবরাহ নিয়ে দেনদরবার শুরু করে হাব। আর হাব সভাপতির সঙ্গে এই দেনদরবারে যুক্ত রয়েছেন মানবপচারে অভিযুক্ত অন্য হাব নেতারাও।
নিজ দায়িত্বে ট্রলিব্যাগ দিতে চান এজেন্টরা
নিজ দায়িত্বে হজযাত্রীদের মধ্যে ট্রলিব্যাগ সরবরাহ করতে চায় এজেন্সিগুলো। হাবের বিরুদ্ধে নিম্নমানের ট্রলিব্যাগ সরবরাহের অভিযোগে এবং ট্রলিব্যাগ সরবরাহে সিদ্ধান্তহীনতার কারণে এজেন্সিগুলো নিজ দায়িত্বেই তা সরবরাহের কথা ভাবছে। অনিশ্চতায় মধ্যে না থেকে মন্ত্রণালয়ের জমা নেওয়া অর্থ নির্দিষ্ট এজেন্সি ফেরত দিলেই সরকারের দেওয়া নির্দেশনা ও নমুনা অনুযায়ী স্বল্প সমেয় ব্যাগ সরবরাহ করতে পারবেন বলে জানান বেশ কয়েকজন এজেন্সি মালিক। তাহলে অর্থ লুটপাটের সম্ভাবনাও থাকবে না বলে জানান তারা।
হাবের ট্রলি সরবরাহ কেলেঙ্কারি
২০১৪ সালের হজযাত্রীদের ট্রলিব্যাগ সরবরাহ করতে কাজ দেওয়া হয় জান্নাত স্টোরকে। সরবরাহ করা ট্রলিব্যাগ নিম্নমানের হওয়ায় অর্থের বিনিময়ে কাজটি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। হজযাত্রীরা এ নিয়ে বিক্ষুদ্ধতা দেখায় এবং লিখিত অভিযোগ করেন সৌদি আরবে অবস্থিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং হজ মিশনে। পরে হাব নির্ধারিত ট্রলিব্যাগ সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠান জান্নাত স্টোর ৭ লাখ টাকা জরিমানা দেয়।
ঢাকা জার্নাল, জুন ১৩, ২০১৫