যেভাবে রায় ফাঁসের রহস্য উদঘাটন
অক্টোবর ৫, ২০১৩ ঢাকা জার্নাল: নয়ন আলী ট্রাইব্যুনালের একজন মাস্টার রোল বিভাগের অস্থায়ী কর্মচারী। তিনি গত দেড় বছর ধরে ট্রাইব্যুনালে পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে কাজ করছেন। তবে তার কম্পিউটার দক্ষতা রয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে ডিবি পুলিশ। কারণ তিনি প্রায়ই ট্রাইব্যুনালের ছোট খাটো চিঠি কম্পোজ করতেন।
শুক্রবার নয়নকে গ্রেফতারের পর তিনি রায় ফাঁসের খসড়া কপি পেনড্রাইভে নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। কিন্তু তিনি বলেন, মোটা অংকের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে এক আইনজীবীর সহকারী তাকে দিয়ে এ কাজ করিয়ে নেন।
রায় ফাঁসের পর আসামিদের চিহ্নিতকরণ এবং তদন্তের বিভিন্ন পর্যায় নিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেছেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে তিনি এ ব্রিফ করেন।
মনিরুল ইসলাম জানান, তদন্তভার পাওয়ার পর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) প্রথম পর্যায়ে কোন কম্পিউটার থেকে রায়ের কপি বের করা হয় এবং কারা কারা সেই কম্পিউটার ব্যবহার করেন এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজেন।
তারপর ট্রাইব্যুনালে গিয়ে রায় কম্পোজ করা ওই কম্পিউটার জব্দ করে ডিবি পুলিশ। কম্পিউটারে কোনো ইন্টারনেট সংযোগ ছিল না। এ কারণে ডিবি পুলিশ নিশ্চিত হয়, এখান থেকেই রায়ের খসড়া কপি ইউএসবি পেন ড্রাইভ কিংবা সিডিতে করে অন্য কম্পিউটারে নেওয়া হয়েছে।
কম্পিউটার জব্দের পাশাপাশি ডিবি পুলিশ ট্রাইব্যুনালের সব কর্মচারীদের ওপর নজর রাখে এবং অফিসের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে। ফুটেজ দেখেই নয়ন আলীকে (২০) চিহ্নিত করে যে, ওই কম্পিউটার থেকে রায়ের কপি তিনিই বের করে নিয়ে যান।
তিনি আরও জানান, নয়ন আলী ট্রাইব্যুনালের একজন মাস্টার রোল বিভাগের অস্থায়ী কর্মচারী। তিনি গত দেড় বছর ধরে ট্রাইব্যুনালে পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে কাজ করছেন। তবে তার কম্পিউটার দক্ষতা রয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে ডিবি পুলিশ। কারণ তিনি প্রায়ই ট্রাইব্যুনালের ছোট খাটো চিঠি কম্পোজ করতেন।
শুক্রবার নয়নকে গ্রেফতারের পর তিনি রায় ফাঁসের খসড়া কপি পেনড্রাইভে নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। কিন্তু তিনি বলেন, মোটা অংকের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে এক আইনজীবীর সহকারী তাকে দিয়ে এ কাজ করিয়ে নেন।
নয়ন জানান, তাকে একটি ফাইল আনার নির্দেশ দেন সাকা চৌধুরীর মামলার পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার ফকরুলের সহকারী আইনজীবী মেহেদী হাসান। পরে ওই ফাইল আনার পর যখন নয়ন দেখেন সেটি রায়ের কপি, তখন তিনি ফাইলটি দিতে অস্বীকৃতি জানান।
সেই সহকারী আইনজীবী বলেন, ট্রাইব্যুনালের তথ্য নেওয়ার দায়ে তিনি নয়নকে ফাঁসিয়ে দেবেন। সেই ভয়ে নয়ন তাকে ফাইল দিয়ে দেন।
পরে কোন কম্পিউটারে এই রায়ের কপি ট্রান্সফার করা হয়েছে সেই কম্পিউটার জব্দ করে পুলিশ।
এরই সূত্র ধরে শুক্রবার দুপুরে সাকার আইনজীবী ব্যারিস্টার ফকরুলের চেম্বারে তল্লাশি চালিয়ে ২টি সিপিইউ, ১টি প্রিন্টার ও কয়েকটি সিডি আটক করে ডিবি পুলিশ।
পরে নয়নের দেওয়া জবানবন্দির সঙ্গে মেহেদী হাসানের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পায় ডিবি।
এ ঘটনায় নয়ন ছাড়া ফারুক নামে ট্রাইব্যুনালের আরেক অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট জড়িত রয়েছেন।
ডিবি পুলিশ নয়নকে কথা না বলতে দিলেও নয়ন বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ কাজ করতে মেহেদী হাসান বলেছেন!’
মনিরুল ইসলাম বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে আইসিটি অ্যাক্ট ৫৭ এবং ৬৩ ধারায় অপরাধ মামলা করা হয়েছে।
যারা রায়ের কপি ফাঁসে সহযোগিতা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে আইসিটি অ্যাক্টের ৫৪ ধারায় মামলা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
মনিরুল ইসলাম জানান, কপি যুক্তরাজ্য থেকে আপলোড করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ থেকেও রায়ের কপি আপলোড করে যুক্তরাজ্য দেখানো হতে পারে।
মনিরুল ইসলাম বলেন, এই রায় ফাঁস হওয়ায় অনেকে লাভবান হচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে। যদি এর সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায় তবে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
ঢাকা জার্নাল, অক্টোবর ০৪, ২০১৩