আগস্ট ১৬, ২০১৩

ec-logo-new-tm20130815184734ঢাকা জর্নাল: নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার কথা প্রায়ই আওড়াতে দেখা যায় রাজনৈতিক নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, আইন প্রণেতা ও প্রশাসনিক কর্তাদের। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব যাদের ওপর, সেই নির্বাচন কমিশনের প্রশাসনিক কাঠামোর দিকে তাকান না কেউই। নানা অনিয়ম, প্রশাসনিক ভারসাম্যহীনতা, সার্ভিস রুলের বেড়াজাল এবং অসন্তোষে এখন বেহাল ইসি। অথচ এসবের সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেই।

ইসি কর্মকতারা বিষয়টিকে দেখছেন ইসিকে শক্তিশালী করার প্রক্রিয়ার গোড়ায় গলদ হিসেবে।

নির্বাচন কমিশনে উপ-সচিবের পদ তিনটি। এর একটিতে কাজ করছেন আবুল কাশেম। তিনি বর্তমানে দুইটি দায়িত্ব পালন করছেন। কখনো কখনো তাকে দিয়ে চারটি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করানো হয়। বাকি দুইটি পদ খালি আছে দীর্ঘ দিন। তিনজন কর্মকর্তা দিয়ে উপ-সচিবের কাজ করানো হয় চলতি দায়িত্ব হিসেবে। কিন্তু কাউকেই পদোন্নতি দিয়ে এ পদ দুটি পূরণ করা হয় না।

যুগ্ম সচিবের তিনটি পদের একটিতে দায়িত্ব পালন করছেন জেসমিন টুলি। বাকি দুইটি পদ খালি থাকলেও পদোন্নতির খবর নেই নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের কারো কাছে।

নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আগের কমিশন দেশের সাত বিভাগসহ তিনটি বৃহত্তর জেলা সদরে আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপন করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ কার্যালয়গুলোতে স্থায়ী কর্মকর্তা পদোন্নতির মাধ্যমে নিশ্চিত করেনি নির্বাচন কমিশন। এ কার্যালয়গুলো চলছে চলতি দায়িত্ব পাওয়া কর্মকর্তার মাধ্যমে। ফলে দায়িত্ব নিয়ে কেউই কাজ করতে পারছেন না। ইসিকে শক্তিশালী করার গুড়ে বালি পড়ছে অহরহ। এর একটি চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশন কার্যালয় আবার কর্মকর্তা শূন্য আছে দুই মাস।

নির্বাচন কর্মকর্তাদের উন্নত ও সার্বক্ষণিক প্রশিক্ষণের জন্য বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের আছে একটি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট। প্রায় বছর দুয়েক ধরে এ প্রতিষ্ঠানটি চলছে চলতি দায়িত্বের মহাপরিচালক, উপ-পরিচালক এবং পরিচালকের মাধ্যমে।

যুগ্ম সচিব আইন পদটি বর্তমান প্রাক জাতীয় নির্বাচনকালীন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ। এ পদে কর্মরত কর্মকর্তার মাধ্যমেই সব সময় ইসির যাবতীয় আইন, বিধির খসড়া তৈরি ও আইন পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণের কাজ চলে। কিন্তু এ পদে কাউকে নিয়োগ না দিয়েই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সামান্য আগে দায়িত্বরত কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম খানকে (এন আই খান) সরিয়ে দিয়ে একটি শূন্যতার সৃষ্টি করেছে নির্বাচন কমিশন।

অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের প্রযুক্তি বিভাগে অহরহ নিয়োগ হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় লোকবল। এদের কারো কারো বিরুদ্ধে জাল প্রত্যয়নপত্রের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়ারও অভিযোগ আছে। এসব কর্মকর্তা কর্মচারীর অনেকেরই তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান নেই বলেও অভিযোগ আছে। অনেক ক্ষেত্রে আবার নিয়োগ পাওয়া পদে কাজ করার সুযোগও নেই ইসিতে।

এদিকে আইসিটিতে এতো লোকবল নিয়োগের পরও কোনো সুফল আসছে না এ খাতে। নিয়মিত আপডেট করা হয় না ইসির ওয়েব সাইট।

আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও সচিবালয় কর্মকর্তাদের কাজের পরিধি ও সুযোগ সুবিধা নিয়ে আছে অনেক বিভ্রান্তি ও অসঙ্গতি। নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজের ব্যক্তিগত সহকারী মোশারফ হোসেন এবং আব্দুল মোবারকের ব্যক্তিগত সহকারী লুৎফর রহমান পদোন্নতি পেয়ে ২০০৫ সালে সিনিয়র সহকারী সচিব অথবা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হওয়ার কথা। কিন্তু সার্ভিস রুলের বেড়াজালে আটকা পড়েছে তাদের ভাগ্য। অথচ কিছু দিন আগে নিয়োগ পাওয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা পদোন্নতি নিয়ে সিনিয়র সহকারী সচিব এবং জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হয়ে দিব্যি দায়িত্ব পালন করছেন।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয় এবং মাঠ পর্যায়ে এ ধরনের নজির ভুরিভুরি।

একজন চলতি দায়িত্বে থাকা যুগ্ম সচিব এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, হুদা কমিশন ইসি সচিবালয় এবং মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একই মর্যাদা দিতে গিয়ে এক অসম্ভব বৈষম্যের সৃষ্টি করে গেছে। তাদের কৌশল হয়ত ভালই ছিল কিন্তু পুরো কাজ সম্পন্ন করে যেতে না পারায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। কিন্তু আগের কমিশনের দেওয়া সুযোগ মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হলেও ইসি সচিবালয়ের ক্ষেত্রে তা কার্যকর হয়নি। ফলে ভারসাম্য হারিয়ে গেছে ইসির প্রশাসনিক কাঠামোতে। এতে আগের সিনিয়ররা অবমূল্যায়িত হয়েছেন এবং জুনিয়র পদমর্যাদাধারীরা এগিয়ে গেছে। এতে ইসি সচিবালয়ে চলছে চাপা অসন্তোষ এবং কাজে অনীহা। এতে যেকোনো সময়েই বড় ধরনের বিপত্তি বা অপ্রীতিকর পরস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।

কেবল কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষই নয়, ইসির বিরুদ্ধে আন্দোলনে রয়েছেন ইসির তৃতীয় ও চতৃর্থ শ্রেণীর কর্মকর্তারাও। রমজানের মাঝ সময়ে এসে তাদের সামঞ্জস্যহীনতার আন্দোলনের চাকা থামে রমজানের কারণে। কিন্তু ভারসাম্য রক্ষা না হলে যেকোনো সময়ই তারা ইসি অচলের হুমকি দিয়ে রেখেছে।

নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তা কর্মচারীদের সার্ভিস রুলের অসামঞ্জস্য দূর করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সদ্য বিদায়ী আইন কর্মকর্তা এনআই খানকে। তিনি এ বিষয়ক কমিটির প্রধান ছিলেন। কিন্তু এনআই খান ক্যান্সারের চিকিৎসা করাতে দীর্ঘদিন কানাডায় থাকায় কাজ এগোয় নি। কমিশন এসব বিষয় দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নিচ্ছে।

ঢাকা জার্নাল, আগস্ট ১৬, ২০১৩

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.