কামারুজ্জামানের ফাঁসি, দায় মেটালো বাংলাদেশ
ঢাকা জার্নাল: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডসহ প্রথম চারটি ও সপ্তম অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ অভিযোগ পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবের কারণে প্রমাণিত হয়নি।
বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এর এজলাসকক্ষে ২১৫ পৃষ্ঠার রায়ের সংক্ষিপ্তসার (৬২ পৃষ্ঠা) পাঠ শুরু হয়। সকাল ১১টা ৫ মিনিটে কামারুজ্জামানকে এজলাসকক্ষে তোলা হয়। এরপরই এজলাসে বসেন তিনজন বিচারক। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে বিচারপতি মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারক প্যানেলের সদস্য শাহিনুর ইসলামের আদালতে এ বিচারকাজ শেষ হয়েছে গত ১৬ এপ্রিল।
বিচারক শাহিনুর ইসলাম রায়ের প্রথম অংশ পড়ে শেষ করেন। তার পর দ্বিতীয় অংশ পড়েন বিচারপতি মুজিবুর রহমান মিয়া। দুপুর সোয়া ১টার দিকে তৃতীয় অংশ পড়া শুরু করেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। রায়ের মোট ৬৫১টি অনুচ্ছেদ।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনাল-২-এ নেওয়া হয়। এদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাকে বহনকারী মাইক্রোবাসটি ট্রাইব্যুনালে পৌঁছে। আগের দিন সন্ধ্যার দিকে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের সশস্ত্র বিরোধীতাকারী, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত জামায়াতের এই নেতাকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়।
জামায়াতের এই গুরুত্বপূর্ণ নেতার রায় ঘোষণা উপলক্ষে ট্রাইব্যুনাল ঘিরে নিরাপত্তা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বুধবার রায় ঘোষণার এ দিন ধার্য করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। সকাল ১১টায় এ আদেশ দেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে গত ১৬ এপ্রিল বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হওয়ায় যে কোনো দিন কামারুজ্জামানের মামলার রায় দেওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) বলে রেখে দেন ট্রাইব্যুনাল।
কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে যতো অভিযোগ
ট্রাইব্যুনাল কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন, একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বরসহ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা কামারুজ্জামান। শেরপুর ডাকবাংলোয় বসে মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সন্দেহভাজনসহ নিরীহ বাঙালিদের ধরে আনার নির্দেশ দিতেন এবং হত্যা, নির্যাতন চালাতেন তিনি।
এছাড়া শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার সোহাগপুর গ্রামে কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে তার পরিকল্পনা ও পরামর্শে ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই ১৬৪ জন পুরুষকে হত্যা করা হয় এবং ওই গ্রামের প্রায় ১৭০ জন মহিলাকে ধর্ষণ ও নির্যাতন করা হয়। সে ঘটনার পর থেকে সোহাগপুর গ্রাম এখন ‘বিধবাপল্লী’ নামে পরিচিত। এ কারণে সোহাগপুরের বিধবাপল্লীর জন্যও দায়ী কামারুজ্জামান।
সব মিলিয়ে গণহত্যা সংঘটনে ষড়যন্ত্র, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও হত্যা, ব্যাপক নির্যাতনযজ্ঞ, নির্যাতন, ধর্ষণ, ধর্মগত ও রাজনৈতিক কারণে ক্রমাগত নির্যাতনের সুপিরিয়র হিসেবে সব অপরাধের একক ও যৌথ দায় কামারুজ্জামানের ওপর বর্তায় বলেও উল্লেখ করেন প্রসিকিউশন।
ঢাকা জার্নাল, মে ০৯, ২০১৩