স্মৃতিসৌধের স্থপতি মাইনুল হোসেন আর নেই
ঢাকা জার্নাল: জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন আর নেই (ইন্না লিল্লাহি…রাজিউন)। সোমবার রাজধানীর জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউটে তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর।
হাসপাতালের পরিচালক আবদুল্লাহ আল শাফি মজুমদার জানান, বেলা আড়াইটায় তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
সৈয়দ মাইনুল হোসেনের মরদেহ বিকেল ৫টার দিকে মোহাম্মদপুরে মারাকাত মসজিদে নেওয়া হয়েছে। সেখানে গোসল করানোর পর তার মরদেহ শান্তিনগরের বাসায় নেওয়া হবে। সেখানে আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বারডেমের হিমঘরে রাখা হবে। মাইনুল হোসেনের বোন ও মেয়ে বর্ত মানে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। তারা দেশে ফেরার পর দাফন সম্পন্ন হবে।
১৯৫২ সালের ৫ মে জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গিবাড়ীর দামপাড়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবা মুজিবুল হক ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজের ইতিহাসের শিক্ষক ছিলেন। ছেলেবেলায় মাইনুল হোসেন প্রকৌশলী হতে চেয়ে ছিলেন। তাই ১৯৭০ সালে তিনি ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্যবিদ্যা বিভাগে। তিনি থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলে।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ হয়ে যায়। মাইনুল হোসেন তখন পৈতৃক বাড়ি মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীর দামপাড়া গ্রামে চলে যান। দেশ স্বাধীন হলে তিনি ফিরে যান ছাত্রাবাসে।
১৯৭৬ সালে তিনি প্রথম শ্রেণিতে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক হন। ১৯৭৬ সালের এপ্রিল মাসে EAH Consultant Ltd-এ জুনিয়র স্থপতি হিসাবে যোগ দেন। কয়েক মাস পর ওই চাকরি ছেড়ে তিনি যোগ দেন বাংলাদেশ কনসালট্যান্ট লিমিটেডে।
১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ সরকারের গণপূর্ত বিভাগ মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়। এরপর নকশা আহ্বান করা হয়। তখন ২৬ বছরের তরুণ স্থপতি মাইনুল হোসেন স্মৃতিসৌধের নকশা জমা দেন। প্রায় ১৭-১৮ জন প্রতিযোগীর মধ্যে তিনি প্রথম হন এবং ২০ হাজার টাকা পুরস্কার পান। তার করা নকশায় সাভারে নির্মিত হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধ।
এরপর তিনি স্থপতি সংসদ লিমিটেড, শহীদুল্যাহ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েট লিমিটেড এবং কুয়েতের আল ট্রুট লিমিটেডে কাজ করেন।
১৯৭৬ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত সৈয়দ মাইনুল হোসেন ৩৮টি বড় বড় স্থাপনার নকশা করেন। এর মধ্যে জাতীয় স্মৃতিসৌধ, আইআরডিপি ভবন কাওরানবাজার, ভোকেশনাল টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ও ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ভবন, চট্টগ্রাম ইপিজেড, বাংলাদেশ চামড়াজাত প্রযুক্তির কর্মশালা ভবন, উত্তরা মডেল টাউন, বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার খাদ্য গুদামের নকশা, কফিল উদ্দিন প্লাজা, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস ভবন, ঢাকা শহরের বিভিন্ন বেসরকারি আবাসন প্রকল্পের নকশা করেছেন তিনি।
কিছু দিন ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি গতকাল রোববার হাসপাতালে ভর্তি হন। তার উচ্চ রক্তচাপও ছিল। ডাক্তাররা তাকে বাঁচানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেন। কিন্তু, সোমবার সকাল থেকেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। অবশেষে সব চেষ্টার অবসান ঘটিয়ে বেলা আড়াইটায় তার মৃত্যু হয়।
ঢাকা জার্নাল, নভেম্বর ১০, ২০১৪